আলোর উৎসব দীপাবলিতে অনেকের বাড়িতেই লক্ষ্মী-গণেশ পুজো হয়। অগত্যা সেদিনটা নিরামিষ পদ রান্না হয় হেঁশেলে। আর নিরামিষ রান্নার ক্ষেত্রে তালিকায় প্রথমেই যে নামটি আসে, তা হল পনির। আবার প্রতিদিনের ভারতীয় খাদ্যের তালিকায় অথবা শাহী কোনও পদ তৈরিতে এই জনপ্রিয় দুগ্ধজাত খাবার সকলেরই প্রিয়। তবে সাম্প্রতিক কালে ভেজাল পনিরে ছেয়ে গিয়েছে বাজার। সেক্ষেত্রে আসল পনির চেনার উপায় কী?
পঞ্জাবে গুণগত মান পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এক-তৃতীয়াংশের বেশি পনিরের নমুনায় রয়েছে ভেজাল। সে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৫৩১টি পনিরের নমুনার মধ্যে ১৯৬টি পনির স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।
৫৯টি পনিরের নমুনা পরীক্ষার পর বলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণরূপে খাওয়ার অনুপযুক্ত। এই ভেজালের পিছনে মূলত দায়ী স্টার্চ ও ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার। ফলে বিশেষজ্ঞদের অধিকাংশই সাধারণ মানুষকে বাড়িতে পনির তৈরির উপদেশ দিয়ে থাকেন।
বাজার থেকে কেনা পনিরে মূলত থাকে অ্যান্টি-ফোম এজেন্ট, ব্লিচিং কেমিক্যাল বা সংরক্ষণ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন অ্যাডিটিভ।
বাজারে বিক্রি হওয়া পনিরে অনেক সময় স্বাদ ও সংরক্ষণের জন্য অতিরিক্ত নুন মেশানো হয়। কিন্তু ঘরে তৈরি পনিরে নিজে না মেশালে এটিতে স্বাভাবিকভাবেই সোডিয়ামের মাত্রা কম থাকে। যত দিন যাচ্ছে, ভেজালের ঘটনা বাড়ছে পনিরের ক্ষেত্রে।
দেখতে অবিকল আসল পনিরের মতো, কিন্তু এতে বিপজ্জনক রাসায়নিক থাকে। তাই পনির আসল না নকল তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। নকল পনির শনাক্ত করার সবচেয়ে উত্তম উপায় হল আয়োডিন পরীক্ষা।
নকল পনিরে স্টার্চ যোগ করা হয় এবং এটি শনাক্ত করার জন্য, একটি মেডিকেল স্টোর থেকে আয়োডিন টিংচার কিনুন। এই টিংচারটি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে নকল পনির কালো করে দেয়। নকল পনির শনাক্ত করতে, পনিরের একটি ছোট টুকরোতে কয়েক ফোঁটা আয়োডিন টিংচার দিন। যদি আয়োডিন টিংচার যোগ করার পর এটি কালো বা নীল হয়ে যায়, তাহলে এতে স্টার্চ আছে এবং এটি নকল।
গরম জল ব্যবহার করে সহজেই নকল পনির শনাক্ত করা যায়। গরম জলের একটি বাটিতে অল্প পরিমাণে পনির ডুবিয়ে কয়েক মিনিটের জন্য রেখে দিতে হবে। যদি পনিরটি ভেঙে যেতে শুরু করে বা তেলের একটি স্তর ভেসে ওঠে, তাহলে এটি ভেজাল হতে পারে।
গরম জলে রাখলে আসল পনির তার গঠন বজায় রাখে এবং ভেঙে যায় না। নকল পনিরের স্বাদ কিছুটা তিক্ত। সামান্য রাসায়নিক গন্ধও থাকতে পারে।
আসল পনিরের স্বাদ ঝাঁঝালো হয় না। এটি ওজনেও হাল্কা হয়। ক্রিমযুক্ত পনির সর্বদাই তাজা হিসেবে বিক্রি হয় বাজারে। ভেজাল থাকলে তা তাজা হবে না। আঙুল দিয়ে চাপ দিলে এটি নরম এবং স্পঞ্জি মনে হবে, অন্যদিকে নকল পনির একটু শক্ত বা রাবারের মতো হয়।
বিশেষজ্ঞরা সতর্কবার্তায় বলছেন, নকল পনির মসৃণ, অতিরিক্ত সাদা বা অস্বাভাবিকভাবে চকচকে দেখাতে পারে। সেক্ষেত্রে চাকচিক্য দেখে ঠকে গেলে চলবে না। পনির সাধারণত ভেঙে যায়। ভেঙে না গিয়ে আঠালো থাকলে বুঝতে হবে সেটি নকল পনির।