শিলিগুড়ি যদিও পাহাড় নয়, তবে পাহাড়ের জেলাতো বটে। বাইরের পর্যটকদের কাছে পাহাড়ের পাদদেশ। যেখান থেকে বেস করেই আপনাকে দার্জিলিং, গ্যাংটক, কালিম্পং, মিরিক, কার্শিয়াং, সান্দাকফু এমনকী নেপাল কিংবা ভুটানও যেতে হবে। এমনকী সড়ক-বা রেলপথে উত্তর-পূর্ব ভারতের যে কোনও রাজ্যে যেতে হলে শিলিগুড়ি ছুঁয়েই যেতে হবে। তাই শিলিগুড়ি গোটা দার্জিলিং কিংবা পাহাড়ের প্রতিভূ বাইরের লোকেদের কাছে। কলকাতা মানেই যেমন মিষ্টি দই-রসগোল্লা, তেমনই শিলিগুড়ি মানেই মোমো। শিলিগুড়িতে যতগুলি মোমোর রকমারি দোকান বা স্টল আছে, গোটা পৃথিবীর কোথাও আছে বলে মনে হয় না। পাহাড়েও নেই। শিলিগুড়ির এমন কোনও পাড়া নেই যেখানে অন্তত ৪-৫টি মোমোর দোকান নেই। গোটা শহর ঘুরলে অন্তত কয়েক হাজার মোমোর দোকান মিলবে যার সঠিক সংখ্যার হিসেব কোথাও নেই। কিন্তু সমস্যা হল কোন মোমো খাবেন? কোথায় গেলে ভাল মোমো পাবেন? বাইরে থেকে হঠাৎ এলে একটু ঘাবড়ে যেতে পারেন। তাই আপনাদের জন্য চেষ্টা করা হল অন্তত ১০টি অথেনটিক মোমোর ঠিকানা খুঁজে দেওয়ার।
১. মোমো হাট
ঠিকানা-হিলকার্ট রোডে বিধান জুয়েলার্সের উল্টোদিকে। সেবক মোড় এলাকায় শ্রীমা ভবন।
সাধারণ দোকানের চেয়ে একটু দাম বেশি। তবে মাটন এবং সুপি মোমো এখানকার বিখ্যাত। এছাড়া চিকেন, ভেজ মোমো পাওয়া যায়। পাশাপাশি ফ্রায়েড এবং এখানকার খুবই সুস্বাদু, চকোলেট আইসক্রিম মোমো এখানকার বিশেষ আকর্ষণ।
২. ডিমিক
ঠিকানা-৩ নম্বর ওয়ার্ডের জনতানগর এলাকায় প্যাটেল রোডে দোকানটি অবস্থিত।
শহরে যত মোমো বিক্রি হয় তার মধ্যে অন্যতম সেরা দোকান এটি। জাঁকজমক নেই, সাধারণ ছিমছাম দোকান। মোমোর দামও হাতের নাগালে। ৪০ টাকা প্রতি প্লেট। এখানকার চাউমিনও অত্যন্ত সুস্বাদু। চিকেন, মাটন, ভেজ, সব রকম মোমো এখানে পাওয়া যায়। অথেনটিক মোমোর অন্যতম সেরা ঠিকানা। পাহাড়ি থুকপাও এখানে অন্যতম আকর্ষণ।
৩. মোমো হেড
ঠিকানা- সেবক রোডের আড়াই মাইল এলাকায় বঙ্কিমনগরেএই দোকানটি।
চিকেন, মাটন, ভেজ সহ ট্র্যাডিশনাল সমস্ত মোমোতো বটেই, এখানকার বাড়তি আকর্ষণ ফুচকা মোমো। বাড়তি স্বাদ তৈরি করতে তারা বাটার এবং অরিগানো ফ্লেক্স দিয়ে পরিবেশন করেন। এছাড়া এখানে আরও একটি আকর্ষণ স্পেশাল চিকেন মোমো এবং চিকেন তন্দুরি মোমো, আফগানি মোমো।
৪. শুভ হ্যাং
ঠিকানা-শহরের দু'নম্বর ওয়ার্ডের প্রধাননগরের নিবেদিতা রোডে দোকানটি অবস্থিত।
চিকেন মোমো এবং চিকেন থুকপার অন্যতম সেরা ঠিকানা। দামও হাতের নাগালেই। নানা রকম মোমো তো মেলেই পাশাপাশি পাওয়া যায় চাউমিনের নানা প্রকারও। তবে মোমো এবং থুকপাই এখানকার মূল ইউএসপি। মাঞ্চুরিয়ান, চপসি এগুলিও মেলে।
৫. ফাস্টফুড কর্নার
ঠিকানা-পাঞ্জাবিপাড়ার প্রণামি মন্দির রোডের ওয়ার্ড নম্বর ৪০-এ এই দোকানটি রয়েছে।
নানা রকমের মোমো এবং থুকপা প্রস্তুতির জন্য বিখ্যাত। ক্রিমি এবং ক্রিসপি দু'রকম মোমো এখানে অত্যন্ত সুস্বাদু। বিশেষ করে তাদের নুডল, সঙ্গে মমো অথবা থুকপা খেতে দূর থেকে লোকজন ছুটে আসেন। এখানকার স্পেশাল হল পর্ক মোমো। পাশাপাশি স্প্রিং রোল, চাউমিন, বিভিন্ন রকম চাইনিজ এবং টিভেটান ডিশ এখানে বিখ্যাত।
৬. বিধান মার্কেট মোমো হাব
ঠিকানা-শিলিগুড়ি বিধান রোডে মার্কেট হংকং মার্কেটের পাশেই। অটোস্ট্যান্ড এলাকায় এই হাবটি।
শিলিগুড়িতে মোমোর ঠিকানা নিয়ে কথা বলতে গেলে এই জায়গার নাম না বললে অসম্পূর্ণ থাকবে। এটি একটি দোকান নয়, একসঙ্গে আট-দশটি দোকান নিয়ে একটি হাব তৈরি হয়েছে। বিধান মার্কেট অটো স্ট্যান্ড এলাকায় চিকেন, মাটন, ভেজ এবং বিশেষ করে পনির মোমো এখানকার বিখ্যাত। রোল, চাউমিনতো রয়েছেই। প্রতিটি দোকানের মোমো প্রায় অদ্ভুতভাবে একই রকম। স্বাদে সামান্য ১৯-২০ পাবেন। সাধারণ ট্র্যাডিশনাল মোমো নয়, বাঙালি স্বাদে বদলে দেওয়া ফিউশন মোমোই এখানকার বিশেষ আকর্ষণ। সন্ধ্যায় তিল ধারণের জায়গা মেলে না। শিলিগুড়িতে মোমো খেতে চাইলে একবার অন্তত এখানে আসতেই হবে।
৭. হেরিটেজ মোমো
ঠিকানা- হিলকার্ট রোডে শিলিগুড়ি জংশন এলাকায়, হেরিটেজ হোটেলের সামনে।
শিলিগুড়ি হেরিটেজ হোটেলের সামনে একটি মোমো স্টল। যেটি অনেক দিন ধরে শিলিগুড়িতে উৎকৃষ্ট মোমো সরবরাহ করে আসছে। দোকানেরও নাম নেই, তেমন কোনও প্রচারও নেই। একটি ঠেলার উপরে প্রতিদিন কয়েক হাজার মোমো বিক্রি করেন তাঁরা। লাইনে না দাঁড়ালে এবং লাইনের ফাঁক গলে ঢুকে পড়তে না পারলে মোমো মেলা মুশকিল। এদের কোনও নাম নেই। পিছনে থাকা হেরিটেজ হোটেলের নামই তাদের পরিচয়। অথচ যে কোনও মম বিক্রেতাদের গুনে গুনে ১০ গোল দেবেন বিক্রির নিরিখে।
৮. রংটং মোমো
ঠিকানা-সুকনা পার করে হিলকার্ট রোড ধরে টয়ট্রেনের লাইনের ধার ধরে রংটং।
এটি শিলিগুড়ি এলাকার অন্যতম সেরা মোমো। শিলিগুড়ি এলে কষ্ট করে যদি যেতে পারেন, তাহলে কখনও ভুলবেন না এখানে মোমো খেতে। একদম শিলিগুড়ি শহরের মধ্যে নয়, খানিকটা বাইরে সুকনা পার হয়ে রংটং মোমোর জন্যই বিখ্যাত। প্রতিদিন শিলিগুড়ি থেকে কাতারে কাতারে লোক শুধুমাত্র মোমোর টানে ছুটে যান পাহাড়ি পথের বাঁকে। শিলিগুড়ি থেকে মোটামুটি ২০ কিলোমিটার। টয়ট্রেনের কু-ঝিকঝিক শুনতে শুনতে গরম ধোঁয়া ওঠা মোমোর স্বাদ অপূর্ব। নানা রকম মোমো এবং পাহাড়ি হাতের ছোঁয়ায় এ মোমোর স্বাদ আলাদাই।
৯. স্টিমি মকটু
ঠিকানা-সেবক রোডের প্লানেট মলে অবস্থিত এই রেস্তোরাঁ
এই টিবেটান রেস্টুরেন্টে মোমোর নানা রকম ভ্যারাইটি রয়েছে। প্রতিটিই অসাধারণ স্বাদ। নিজে না খেলে বোঝা যাবে না। দাম সাধারণ রেস্তোরাঁ থেকে অনেকটাই বেশি। তবে মাঝেমধ্যে ভিজিট করলে হতাশ হবেন না এটুকু কথা দেওয়াই যায়। চিকেন মোমো, ল্যাম্ব মোমো, মাটন মোমো, বিভিন্ন রকমের দেশের বিভিন্ন প্রজাতির মেমো এখানে মূল আকর্ষণ। চাইনিজ এবং জাপানি কায়দায় নানা মোমো ও অন্যান্য খাবারের স্বাদ অনন্য।
১০. মোমো গলি
ঠিকানা-হংকং মার্কেটের গা ঘেঁষে শেঠ শ্রীলাল মার্কেটের মধ্যে মোমো গলি।
এখানেও একগুচ্ছ মোমোর দোকান রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন দাঁড়িয়ে কাতারে কাতারে মানুষ মোমোর স্বাদ উপভোগ করেন। শিলিগুড়ির প্রাচীন মোমোওয়ালাদের মধ্যে অন্যতম। অনেকে বলেন এখন আর আগের মতো স্বাদ নেই। তবু ভিড়ে তার বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়ে না। চিকেন, মাটন, ভেজ সব রকম মোমোই এখানকার চাহিদার তুঙ্গে থাকে। ভ্যারাইটি নয়, তবে ঐতিহ্যে এই মোমোর দোকানগুলি ভিজিট করতেই পারেন।
এছাড়াও শিলিগুড়িতে অলিতে-গলিতে এবং ছোট বড় সমস্ত রেস্তোরাঁতেই নানা ধরনের সুস্বাদু মোমো পাওয়া যায়। অন্তত হাজার দুয়েক দোকান রয়েছে, যেখানকার মোমো প্রতিটিই কমবেশি সুস্বাদু। আর শহরটাই যে মোমো দিয়ে ঘেরা।