লন্ডনের একজন বিখ্যাত লেখিকা ড্যানিয়েলা আইজাক্স তাঁর জীবন সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেছেন। ব্রিটিশ সংবাদপত্র 'দ্য অবজারভার' কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে, ড্যানিয়েলা জানান, চুপি চুপি যে কাজ কীভাবে জীবনকে নষ্ট করেছিল। ড্যানিয়েলা বলেন, 'ছোটবেলা থেকেই দেখতাম আমার মা ডায়েরিতে কিছু না কিছু লিখতেন।
আমি সবসময় জানতে চেয়েছিলাম সে কী লিখছে, ১৪ বছর বয়সে আমি প্রথমবার আমার মায়ের ডায়েরি পড়ার সুযোগ পেলাম। সেই সময় মা এবং বাবা কিছু কাজে বাইরে গিয়েছিলেন।
তিনি জানান,"আমি আমার মায়ের ডায়েরি গোপনে পড়তে শুরু করি। তারপর এটা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়। আমি ডায়েরি থেকে জানতে পেরেছি আমার বাবা-মায়ের জীবনের তিক্ত সত্য। দু'জন যেভাবে আমার সামনে ভালো দম্পতির ভান করতেন, সত্য ছিল অন্য কিছু।"
গোপনে মা এবং বাবা উভয়েরই ফোন কলও শুনেছিলেন তিনি। যদিও তা তাঁদের কখনও জানাননি।
অবশেষে কিছুদিনের মধ্যেই দুজনেই ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেন। এরপরও মা, বাবার ওপর নজর রাখতেন ড্যানিয়েলা।
তাঁর কাতর বক্তব্য, "আমি প্রতিটি সম্পর্কের মধ্যে কিছু না কিছু খুঁজতে থাকতাম। আমার এই অভ্যাস আমাকে ভিতর থেকে ফাঁকা করে দিচ্ছিল। কাউকে সঠিকভাবে বিশ্বাস করতে পারতাম না। ১৭ বছর বয়সে, আমি প্রথমবারের মতো একটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি এবং আবার আমার মধ্যে সন্দেহ জেগে ওঠে। আমার সঙ্গী আমার প্রতি যত্নবান ছিল এবং আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারকেও গুরুত্ব দিত।
এরপর আমি ওকে নিয়ে সন্দেহ করা শুরু করি। ওর কলেজে একটি মেয়ে ছিল যাকে আমি সবসময় সন্দেহ করতাম। একদিন যখন আমার বয়ফ্রেন্ড স্নান করছিল, তখন আমি গোপনে ওর মেসেজগুলো পড়তাম।
সেই মেয়েটি আমার প্রেমিককে অনেক মেসেজ পাঠিয়েছিল। ওরসঙ্গে ঝগড়া হয়েছে। রোজ ওর মেসেজ দেখতাম। আমার মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি তৈরি করেছিল। অবশেষে আমরা বিচ্ছেদ হয়ে গেলাম।
এছাড়াও, আমার আরও অনেক অভ্যাস ছিল যে কারণে আমি আমার জীবন নষ্ট করেছি। পুরো ঘর পরিষ্কার না করে ঘুমাতে পারতাম না। ঘুমানোর আগে, আমি প্রতিটি কোণ এবং বিছানার নীচ দেখতাম।
এটি এক ধরনের ওসিডি। আমি অস্থির বোধ করতাম কিন্তু আমার ঘুম না আসা পর্যন্ত আমার মা আমার সঙ্গেই থাকতেন। আশ্চর্যজনকভাবে, পরের দিন আমি খুব হালকা অনুভব করি। মনে হল রাতারাতি আমার মন থেকে ভারী কিছু মুছে গেছে।
এরপর আমি একাই থাকতাম। কয়েক বছর পর একটি মানুষকে পেলাম। ওকে নিয়ে সন্দেহ করা থেকে বিরত রাখলাম। আমি নিজেকে বোঝাতে শুরু করলাম। নিজের অনুমতিতেই সম্পর্কে জড়িয়েছি, সবটা জেনেই। তাই আর সন্দেহ করব না।
আমার সঙ্গী এখন আমার সঙ্গেই আছে এবং আমিও এখন পুরোপুরি বদলে গেছি।। একদিন মা আমাকে বুঝিয়েছিলেন, যে কোন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একে অপরকে আঘাত না করার প্রতিশ্রুতি দিতে পারবে না। কিন্তু একে অপরের সঙ্গে থেকে সম্মান করতে হবে। মায়ের এই কথাগুলো মনে বেঁধে গেল।
তিনি বলেন,"আমার বাবা -মায়ের সম্পর্ক ঠিক করার জন্য কখন আমি গোয়েন্দা হয়ে গেলাম তাও জানতাম না। আমি অনুভব করেছি যে আমার সবকিছু ঠিক করার ক্ষমতা আছে জীবনের এই মুহুর্তে নিজেকে এত কষ্ট দেওয়ার পরে, আমি বুঝতে পেরেছি যে কিছুই নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই।এখন আমি দুশ্চিন্তা ভুলে অনিশ্চয়তার জীবনযাপন শুরু করেছি।"