প্রতিবছর ভারতে ১২ জানুয়ারি জাতীয় যুব দিবস পালিত হয়। জাতীয় যুব দিবস হল ভারতের যুব সমাজের জন্য উৎসর্গ করা একটি বিশেষ দিন, যারা দেশের ভবিষ্যকতে উন্নতির এক নতুন দিকে নিয়ে যাবে। ১২ জানুয়ারি ভারতীয় যুব দিবস উদযাপনের একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। এই দিন স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম হয়েছিল।
১২ জানুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দের জন্মবার্ষিকী। দেশে প্রতি বছর তার জন্মবার্ষিকী জাতীয় যুব দিবস হিসেবে পালিত হয়। প্রশ্ন হল যুব সমাজের সঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দের কী সম্পর্ক, যার কারণে তাঁর জন্মদিন যুব দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বিবেকানন্দ জয়ন্তী কবে থেকে জাতীয় যুব দিবস হিসেবে পালিত হয়? সর্বোপরি, স্বামী বিবেকানন্দের দেশের অগ্রগতিতে তাঁর অবদান কী?
নরেন থেকে বিবেকানন্দ হওয়ার কাহিনি
স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। স্বামী বিবেকানন্দের আসল নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি বেদান্তের একজন প্রখ্যাত এবং প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক গুরু ছিলেন। অল্প বয়স থেকেই তিনি আধ্যাত্মিকতার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পড়াশোনায় ভাল হওয়া সত্ত্বেও মাত্র ২৫ বছর বয়সে নরেন্দ্রনাথ তার গুরুর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, জাগতিক আসক্তি ত্যাগ করেন এবং সন্ন্যাসীর জীবন শুরু করেন। সন্ন্যাস গ্রহণের পর তাঁর নাম হয় বিবেকানন্দ। ১৮৮১ সালে, বিবেকানন্দের রামকৃষ্ণ পরমহংসের সাথে দেখা হয়।
স্বামী বিবেকানন্দ সম্পর্কে আকর্ষণীয় তথ্য
স্বামী বিবেকানন্দ প্রায়ই মানুষকে প্রশ্ন করতেন, আপনি কি ঈশ্বরকে দেখেছেন? এর সঠিক উত্তর কেউ পায়নি। একবার তিনি রামকৃষ্ণ পরমহংসকে একই প্রশ্ন করেছিলেন, যার উত্তরে রামকৃষ্ণ পরমহংস বলেছিলেন, হ্যাঁ, আমি ঈশ্বরকে ঠিক তোমার যেমন তেখছি তেমনি স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু আমি তাকে তোমার চেয়েও গভীরভাবে অনুভব করতে পারছি।
স্বামী বিবেকানন্দ ১৯৯৭ সালে কলকাতায় রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। একই সময়ে, ১৮৯৭ সালে, গঙ্গা নদীর তীরে বেলুড়ে রামকৃষ্ণ মঠও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
১১ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৩-এ আমেরিকায় ধর্ম সংসদের আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে স্বামী বিবেকানন্দও অংশগ্রহণ করেছিলেন। এখানে তিনি 'আমার আমেরিকার ভাই ও বোনেরা' বলে বক্তৃতা শুরু করেন। শিকাগোর আর্ট ইনস্টিটিউটে পুরো দুই মিনিটের জন্য তার বক্তৃতায় হাততালি জানানো হয়। যা ভারতের ইতিহাসে গৌরব ও সম্মানের ঘটনা হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়েছে।
কেন স্বামী বিবেকানন্দের জন্মবার্ষিকীতে যুব দিবস পালন করা হয়?
স্বামী বিবেকানন্দকে অলরাউন্ডার বলা হয়। তিনি ধর্ম, দর্শন, ইতিহাস, শিল্প, সমাজ বিজ্ঞান, সাহিত্যে সব বিষয়ে জ্ঞানী ছিলেন। লেখাপড়ায় ভালো হওয়ার পাশাপাশি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতেও তার জ্ঞান ছিল। এ ছাড়া বিবেকানন্দ একজন ভালো খেলোয়াড় ছিলেন।
তরুণদের কাছে তিনি কোনো অনুপ্রেরণার চেয়ে কম নন। অনেক অনুষ্ঠানে তিনি তার মূল্যবান চিন্তা ও অনুপ্রেরণামূলক কথা দিয়ে তরুণদের এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছেন। তাই স্বামী বিবেকানন্দের জয়ন্তী জাতীয় যুব দিবস হিসাবে পালিত হয়।
জাতীয় যুব দিবস কবে এবং কিভাবে শুরু হয়েছিল
যুবকদের স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন উৎসর্গ করার শুরু ১৯৮৪ সালে। সেই দিনগুলিতে ভারত সরকার বলেছিল যে স্বামী বিবেকানন্দের দর্শন, আদর্শ এবং কাজের পদ্ধতি ভারতীয় যুবকদের জন্য অনুপ্রেরণার একটি বড় উত্স হতে পারে। এরপর থেকে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনকে জাতীয় যুব দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।