করোনার জন্য হারিয়েছে কাজ। এক সময় হাওড়া জেলায় রংয়ের কাজ করতেন পশ্চিম বর্ধমান জেলার বুদবুদের নস্করবাঁধের বাসিন্দা কান্তি দে।
করোনার জন্য কাজ হারিয়ে দীর্ঘদিন বাড়িতে বসে থাকার পর অবশেষে এলাকার বেকার যুবকদের নিয়ে কর্ম সংস্থানের দিশা দেখালেন তিনি।
ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে বুদবুদের চাকতেঁতুল গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে পানাগড় সিলামপুর রোডের ধারে প্রায় ৭২ একর ফাঁকা অকেজো সরকারি জমি ও ছোট জলাশয়গুলিকে সংস্কার করে বড়সড় আকারের জলাশয় নির্মাণ করেন তিনি। জলাশয়ের নাম দেন অন্নদাতা।
সেই জলাশয়ে কয়েকমাস আগে মাছের চারা ছাড়েন। জলাশয়ে মাছ ধরার জন্য ২ হাজার টাকা করে টিকিট করে এলাকার মানুষের জন্য মাছ ধরার ব্যবস্থা করেছেন। সকাল হলেই সেই জলাশয়গুলিতে মাছ ধরার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা। কান্তিবাবু জানিয়েছেন, ২ হাজার টাকা করে টিকিট করা হলেও কেউ যদি মাছ না পান, তবে তাকে একহাজার টাকা ফেরত দেওয়ার নিয়ম রেখেছেন তিনি। ২৫০ গ্রাম থেকে শুরু করে প্রায় ৫ কেজি ওজনের রুই, কাতলা মাছ সহ বিভিন্ন রকমের মাছ রয়েছে জলাশয়ে। নিত্যদিন বিভিন্ন ওজনের মাছ ধরতে জলাশয়ে ভিড় জমাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
এলাকার মানুষ জানাচ্ছেন, কেউ আসছেন মাছ ধরার নেশায়। আবার কেউ আসছেন মাছ ধরা দেখতে। তবে যেখানে মাছ না পেলে হাজার টাকা ফেরৎ হচ্ছে, সেখানে মাছ ধরার সুযোগটা কাজে লাগাতে অসুবিধা কোথায়? তবে যাঁরা মাছ ধরা দেখতে বা মাছ ধরতে আসছেন, তাঁদের জন্য স্বল্প মূল্যে খাবারের ব্যবস্থাও করছেন কান্তিবাবু।
পুকুর পাড়েই পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে খাবার। অনেকের মতে একদিকে নেশা কাটানো হচ্ছে। তার সঙ্গে পিকনিকের আনন্দ উপভোগ করতেও আসছেন অনেকে। এছাড়া জলাশয়ের পাড়েই বিভিন্ন সবজি চাষ করেছেন তিনি।
আপাতত জলাশয়ের পাড় থেকে যে সবজি উৎপন্ন হচ্ছে, তা গ্রামের মানুষদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হোচ্ছে। বাকি সবজি যে সমস্ত কর্মীরা তার অধীনে কাজ করছেন তাদের দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে তিনি ৪৬ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। আগামী দিনে তার লক্ষ শতাধিক বেকার যুবকদের কর্ম সংস্থানের।
তাঁর পরিকল্পনা রয়েছে সমস্ত জলাশয় সংস্কার করে সেখানে মাছ চাষের পাশাপাশি বৃহদ আকারের জলাশয়ে নৌকায় ভ্রমণের ব্যবস্থা করা। এবং সেখানে সপরিবারে কেউ যাতে ঘুরতে আসতে পারে, তার জন্য পিকনিক স্পট গড়ে তোলার।
সেখানে মাছ চাষের পাশাপাশি নানান সবজি চাষ ও পিকনিক স্পট গড়ে উঠবে। তবে এর জন্য তিনি চাকতেঁতুল গ্রাম পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হয়েছেন সাহায্যের জন্য। চাকতেঁতুল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অশোক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, কান্তিবাবু যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তিনি সমাজসেবা করছেন আবার বেকার যুবকদের জন্য কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থাও করেছেন। তাই পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা হবে।
একদিকে যখন করোনার জন্য কর্মহীন হয়ে পড়ছেন অনেকে, সেখানে কাজের সুযোগ তৈরি করার জন্য কান্তিবাবুর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার সকলেই।