Mirik Road Open: সোমবার থেকে মিরিকে যাওয়ার খরচ অর্ধেক কমে যাবে, সরাসরি রাস্তা খুলছে

অবশেষে স্বস্তির খবর দুধিয়া ও মিরিকবাসীর জন্য। তিন সপ্তাহের দীর্ঘ অপেক্ষার পর খুলছে ১২ নম্বর রাজ্য সড়ক। রবিবার থেকেই পরীক্ষামূলকভাবে যান চলাচল শুরু হবে দুধিয়া হয়ে মিরিকের পথে। তবে সরকারিভাবে রাস্তা খুলে দেওয়া হবে সোমবার, এমনটাই জানাল পূর্ত দফতর। পাশাপাশি এতে সরাসরি মিরিক ভ্রমণও ফের চালু হবে। তাতে খরচও কমবে।
 

শনিবার রাতভর চলেছে শেষ মুহূর্তের কাজ। পূর্ত দফতরের আধিকারিকদের নির্দেশ, রবিবার সকালের মধ্যেই কাজ শেষ করে রাস্তায় মহড়া দিতে হবে। সেই মহড়া সফল হলে সোমবার থেকেই শুরু হবে নিয়মিত যানবাহন চলাচল।
 

তবে আপাতত স্বস্তি মিললেও, ভারী পণ্যবাহী ট্রাকের জন্য নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকছে। ওই সব যানবাহনকে আপাতত সুখিয়াপোখরি, ঘুম ও কার্সিয়াং ঘুরে যেতে হবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য যদিও এটি বিশাল স্বস্তির নিঃশ্বাস।
 

৪ অক্টোবর রাতের প্রবল বর্ষণেই ঘটেছিল সর্বনাশ। বালাসন নদীর তীব্র জলে ভেসে গিয়েছিল দুধিয়ার লোহার সেতু। মুহূর্তের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় মিরিকের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ। পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা সেই নদী তখন যেন রুদ্ররূপ ধারণ করেছিল

পরদিন সকাল থেকেই নড়েচড়ে বসে পূর্ত দপ্তর। ৬ অক্টোবর থেকে শুরু হয় বিকল্প সড়ক তৈরির চেষ্টা। নদীর প্রায় ১০০ মিটার দূরে বসানো হয় বিশাল হিউমপাইপ, যার মধ্য দিয়েই তৈরি হয় এক অস্থায়ী রাস্তা।
 

নিজে এসে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই ঘোষণা করেছিলেন। পনেরো দিনের মধ্যে তৈরি হবে বিকল্প রাস্তা। কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই সহজ নয়। বালাসনের অতিরিক্ত স্রোতে বারবার ব্যাহত হয় নির্মাণকাজ।
 

অবশেষে শুক্রবার সকালেই শেষ হয় দীর্ঘ পরিশ্রমের ফল। মাঝনদীতে বসানো হয় প্রায় ৬০টি হিউমপাইপ। তার ওপর গড়ে তোলা হয় অস্থায়ী সেতু। পূর্ত দপ্তরের বরাতপ্রাপ্ত সংস্থা সারাদিন কাজ চালিয়ে শেষ করে রাস্তার মূল কাঠামো।
 

শনিবার সকাল থেকে শুরু হয় দু’পাশের সংযোগকারী রাস্তার ফাইনাল টাচ। পাথর, বালি, খোয়া ফেলে মজবুত করা হয় গায়ে। ক্রমে দেখা যায় সড়কের রূপ। দুপুর নাগাদ সেই রাস্তা ধরে চলে ট্রায়াল গাড়ি।
 

রবিবার সকালেই নির্মাণের কাজ পুরোপুরি শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। তারপর মহড়া দেবে পূর্ত দফতর। কোনও সমস্যা না ধরা পড়লে সোমবার সকাল থেকেই রাজ্য সড়ক ১২ আবার সচল হবে সাধারণ মানুষের জন্য।
 

দুধিয়ার বাসিন্দাদের কাছেই খবরটা যেন আশীর্বাদের মতো। তিন সপ্তাহ ধরে মানুষজন কার্যত বিচ্ছিন্ন ছিল। স্কুল, বাজার, পর্যটন, সবই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

দুর্যোগের ধাক্কায় স্থানীয় অর্থনীতি যেন হিম হয়ে গিয়েছিল। পর্যটকের অভাবে দোকান-বাজারে পড়েছিল ধস। এমন পরিস্থিতিতে রাস্তা চালু হওয়া যে কতটা জরুরি ছিল, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রত্যেকেই।
 

এখন রাস্তা বন্ধ থাকায় ঘুরে যেতে হচ্ছে। তাতে যেমন সময় নষ্ট হচ্ছে, তেমনই দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে যেতে হচ্ছে। এটা খুলে গেলে এই রুটের পর্যটনকেন্দ্র তাবাকোশি, মিরিক, পশুপতি, সুখিয়াপোখরি সহ সবগুলিতে খরচ অর্ধেক হয়ে যাবে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাস্তা না থাকায় দুধিয়ায় আসা বন্ধ ছিল। এখন রাস্তা খুললে ফের পর্যটক আসবে। চায়ের দোকান, হোমস্টে, ট্যাক্সি, সব কিছু ফের গতি পাবে।
 

প্রকৃতির কোলে অবস্থিত দুধিয়া ও মিরিক উত্তরবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজারো মানুষের জীবিকা। সেই কারণেই রাস্তা খুলে দেওয়ার খবরে চারদিকেই আনন্দের আবহ।
 

পূর্ত দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, আপাতত অস্থায়ী রাস্তা চালু থাকলেও স্থায়ী সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই নতুন সেতু তৈরি শুরু হবে।
 

মিরিকের এক হোমস্টে মালিকের কথায়, তিন সপ্তাহ ধরে বুকিং ছিল না। এখন আবার ফোন আসছে। এই রাস্তা খোলাই আমাদের নতুন সূচনা।