ভারতবাসীর কাছে রবিবারের রাতটা যেমন চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে, তেমনই মনে গেঁথে থাকবে আপামর বাঙালিরও। বাঙালির বিশ্বজয়ের নজির কম নেই। তবে খেলাধুলোয় একাধিকবার তিরে এসে তরী ডুবেছে।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় হোক বা ঝুলন গোস্বামী। দুজনেই দুর্দান্ত ক্রিকেটার, কিন্তু বিশ্বকাপ তোলার স্বপ্ন বাস্তব হয়নি। শিলিগুড়ির মেয়ে রিচা ঘোষ সেটাই করে দেখালেন। ২২ বছর বয়সী রিচার ব্যাটিং ও উইকেট কিপিং, দুই ক্ষেত্রেই দেশের গর্ব।
মহিলাদের ক্রিকেটকে অনেকেই সারাজীবন খাটো করে দেখে এসেছেন। এমনকী ভারতের মেয়েদের বিশ্বকাপ জয়ের পরেও হয়তো বহু মানুষের মানসিকতায় বদল ঘটবে না।
ঠিক এইখানেই রিচা ঘোষের লড়াই সৌরভ, সচিনদের থেকে অনেক বেশি কঠিন ছিল। সৌরভ, সচিনদের সমাজের সঙ্গে লড়তে হয়নি। তাই আজ এমন শুভ সময়ে রিচা ঘোষের ছোটবেলায় ফেরা যাক। তাঁর লড়াই অনুপ্রেরণা জোগাবে বহু মানুষকে।
২০২৩ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর শিলিগুড়িতে জন্ম রিচা ঘোষের। মানবেন্দ্র ঘোষ ও স্বপ্না ঘোষের কন্যা। শিলিগুড়ির মার্গারেট সিস্টার নিবেদিতা ইংলিশ স্কুলে পড়াশোনা।
রিচা যেন জন্মেইছিলেন ক্রিকেটার হিসেবে। নইলে কেউ মাত্র ৪ বছর বয়সে ব্যাট তুলে নেয় হাতে! আসলে রিচার বাবা ছিলেন ক্রিকেটার। ক্লাব ক্রিটেক খেলেছেন, কোচিংও করিয়েছেন।
মেয়ের মধ্যে প্রতিভা দেখতে পেয়েছিলেন মানবেন্দ্র। তাই পুতুল নয়, ব্যাট হাতেই রিচাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। প্র্যাক্টিস করাতেন।
অতঃপর, ছেলেদের সঙ্গেই প্র্যাক্টিস করতেন রিচা। শিলিগুড়িতে মেয়েদের ক্রিকেট অ্যাকাডেমি ছিল না। রিচাকে একবার টেবিল টেনিস অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করেছিলেন মানবেন্দ্র। কিন্তু রিচার ভাল লাগেনি। তিনি সটান জানিয়ে দেন, ক্রিকেটটাই খেলবেন। মানবেন্দ্রও সেই মতো তৈরি করতে থাকেন। কখনও চাপ দেননি।
কিন্তু শিলিগুড়িতে সুযোগ কম। তাই রিচা প্রায়ই শিলিগুড়ি থেকে কলকাতায় আসতেন। এই গোটা জার্নিতে সর্বদা পাশে থেকেছেন তাঁর পরিবার। প্রতিভা কখনও লুকিয়ে থাকে না। রিচারও তাই হল।
২০১৯ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি বাংলা U-19 দলে সুযোগ পান। সেখানে নজর কাড়ার পরপরই অল্প সময়ের মধ্যে রাজ্য দলে জায়গা করে নেন। ২০২০ সালে আইসিসি মেয়েদের T20 বিশ্বকাপের ভারতীয় স্কোয়াডেও রাখা হয় রিচাকে। সেই বছরেই ত্রিদেশীয় সিরিজে সুযোগ পান তিনি।
২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ত্রিদেশীয় সিরিজে টি-২০ ডেবিউ হয় রিচা ঘোষের। এরপর ২০২১ সালের মে মাসে প্রথমবার বোর্ডের কেন্দ্রীয় বার্ষিক চুক্তির আওতায় আসেন রিচা। এরপর ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একদিনের ক্রিকেটে ডেবিউ। ভারতের হয়ে টেস্ট টিমে তাঁর ডেবিউ হয় ২০২৩ সালের ২১ ডিসেম্বর।
২০২৩ সালে শুরু হওয়া উইমেনস প্রিমিয়ার লিগ (WPL)-এ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB) নেয় ১.৯ কোটি টাকায়। প্রথম মরশুমেই তাঁর ব্যাটিং RCB-কে একাধিক ম্যাচে জিততে সাহায্য করে।
বড় শটে ছক্কা মারার ক্ষমতা তাঁকে ভারতের মহিলা ক্রিকেটের ‘হার্ড হিটার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।