বিগত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা করোনা মহামারীর প্রভাবে বদলেছে পৃথিবীর আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি। আমুল পরিবর্তন এসেছে কর্মসংস্কৃতির ক্ষেত্রেও। চাকুরিজীবীরা অভ্যস্ত হয়েছে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এ আর সংস্থাগুলি জেনেছে কম লোকবলে অধিক ব্যবসা আনার কৌশল!
করোনা মহামারীর ফলে বিগত এক বছরে বিশ্বজুড়ে কর্মহীন হয়েছেন কয়েক লক্ষ মানুষ। রুজির টানে, টিকে থাকতে পেশা বদলাতে বাধ্য হয়েছেন অনেকেই। বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই ব্যাপক অর্থনৈতিক সঙ্কট দেখি দিয়েছে।
বিশ্বজুড়েই শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ! এর মধ্যেই আরও আশঙ্কার কথা শোনাল সদ্য প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (WEF) রিপোর্ট! এই রিপোর্ট অনুযায়ী, আগামী চার বছরে প্রতি ১০ জনের মধ্যে অন্তত ৬ চাকুরিজীবীকে কাজ হারাতে হতে পারে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (WEF) এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, করোনা-কাল থেকেই কম সংখ্যক কর্মী দিয়ে বেশি কাজ আদায় করার প্রবনতা বেড়েছে। পাশাপাশি কর্মী-নির্ভরশীলতা কমাতে বাড়ছে প্রযুক্তি, যন্ত্র নির্ভরতা। আর এর ফলেই বিশ্বজুড়ে বাড়তে চলেছে বেকারত্ব!
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (WEF) এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগামী দিনে প্রযুক্তি, যন্ত্র নির্ভরতা আরও বাড়বে। ফলে সংস্থাগুলির কর্মী-নির্ভরশীলতা আরও কমবে। যার ফল স্বরূপ ২০২৫-এর মধ্যে কর্মহীন হবেন প্রায় ৬০ শতাংশ চাকুরিজীবী!
মোট ১৯টি দেশের কুপার সংস্থায় কর্মরত প্রায় ৩২,০০০ কর্মচারীর উপর সমীক্ষা চালানোর পরে এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (WEF)। চাকরির নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সম্পর্কে চাকুরিজীবীরা কী ভাবছেন, কাজের বৈচিত্র্য, কর্মস্থানের দূরত্ব, দক্ষতা, সংস্থার পক্ষে কাজ করতে কতটা সক্ষম তার ভিত্তিতে এই সমীক্ষা করা হয়েছে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (WEF) এই রিপোর্ট অনুযায়ী, সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৪০ শতাংশ কর্মচারী মনে করেন যে তাঁরা আসন্ন পাঁচ বছরের মধ্যে চাকরি হারাবেন। পাশাপাশি ৫০ শতাংশ কর্মচারীর মনে হয় যে, তাঁরা ভবিষ্যতেও কর্মসংস্থানের দীর্ঘমেয়াদী বিকল্প খুঁজে নিতে পারবেন।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (WEF) এই রিপোর্ট অনুযায়ী, সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৬০ শতাংশেরও বেশি কর্মচারী তাঁদের চাকরি সুরক্ষা চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছেন। অন্তত ৪০ শতাংশ কর্মচারী বিগত লকডাউন পর্বে তাঁদের ডিজিটাল দক্ষতা বাড়াতে পেরেছেন, ৭৭ চাকুরিজীবী নতুন কিছু শিখতে পেরেছেন এবং নিজেদের দক্ষতা বাড়িয়েছেন।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (WEF) এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৮০ শতাংশ নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারায় তাঁদের কাজের দক্ষতা বেড়েছে। তাঁরা নতুন প্রযুক্তি শেখার বিষয়ে অমেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। এই রিপোর্ট অনুযায়ী, যন্ত্র এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর নির্ভরতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বিশ্বের প্রায় সাড়ে ৮ কোটি (৮৫ মিলিয়ন) মানুষের কাজ হারানোর আশঙ্কা যেমন রয়েছে, তেমনই ৯.৭ কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে।