করোনার ফলে বিশ্বের অনেক দেশেরই অর্থনীতি বিপর্যস্ত! ভারতের অর্থনীতিতেও করোনা মহামারির ব্যাপক প্রভাব প্রড়েছে। গত বছরে করোনার ফলে কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ। সংসার চালাতে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের সঞ্চয় তলানিতে এসে ঠেকেছে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় দেশের বেকারত্বের হার ফের বাড়তে শুরু করেছে। নতুন বছরের প্রথম চার মাসের মধ্যে এপ্রিলে দেশের বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ ছিলই! শেষ এক সপ্তাহেই দেশের বেকারত্বের হার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এমনই তথ্য উঠে এসেছে অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি’র (CMIE) সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে।
এপ্রিল থেকেই দেশজুড়ে ব্যাপক হারে বাড়তে শুরু করেছে করোনা সংক্রমণ। প্রতিদিনই লক্ষাধিক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে এই ভাইরাসে। এই পরিস্থিতি ফের ভিন রাজ্যের কাজ ছেড়ে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছেন অনেকেই।
দেশের কোথাও চলছে লকডাউন, তো কোথাও আবার কার্ফিউ চলছে। পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজের নিয়ম আর পদ্ধতিতেও পরিবর্তন এনেছে দেশের একাধিক ছোট-বড় সংস্থা। নতুন করে কাজ হরিয়েছেন অনেকেই।
স্টাফিং ফার্ম সিয়েল এইচআর সার্ভিসেস-এর একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, কোনও সংস্থার মাঝারি থেকে উচ্চপদস্থ কর্মী, প্রথমে অফার লেটার নিয়েও শেষ মুহূর্তে তা প্রত্যাখান করেছেন। চাকরির লোভনীয় অফার ফেরানোর কারণ হিসেবে এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি কর্মী বা প্রার্থী জানিয়েছেন, নিজের শহর ছেড়ে অন্য শহরে এই মুহূর্তে যেতে চাইছেন না তাঁরা।
সব মিলিয়ে চলতি মাসে সদ্য সমাপ্ত সপ্তাহে বেকারত্বের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪.৪৫ শতাংশ। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি (CMIE) সংস্থার সমীক্ষায় উঠে এসেছে এই তথ্য। গত ১৬ মে পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের বেকারত্বের হার ১৪.৪৫ শতাংশ ছুঁয়েছে।
অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা CMIE-র গত ৯ মে পর্যন্ত দেশের বেকারত্বের হার ছিল ৮.৬৭ শতাংশ। এক সপ্তাহে বেকারত্বে হার বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ! বিগত ৪৯ সপ্তাহের মধ্যে দেশের বেকারত্বের এই হার সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে সংস্থা।
‘সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি’র (CMIE) সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, এপ্রিলে দেশের বেকারত্বের হার ছিল ৭.৯৭ শতাংশ। মার্চের তুলনায় এপ্রিলে কাজ হারিয়েছেন দেশের প্রায় ৭৫ লক্ষ কর্মী! দেশের শহরাঞ্চলে বেকারত্বের হার এপ্রিলে ৯.৭৮ শতাংশে পৌঁছেছে! গ্রামাঞ্চলে এই হার ৭.১৩ শতাংশ।
অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা CMIE-র পরিসংখ্যান বলছে, কর্ম সংস্থানের হার মার্চ মাসে ছিল ৩৭.৮ শতাংশ যা এপ্রিলে কমে হয়েছে ৩৬.৬ শতাংশ। লকডাউনের ফলে মানুষ নতুন করে কাজ খুঁজতেও পারছেন না। সেই কারণে কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের অংশগ্রহণ কমেছে। এই সংস্থার মতে, এপ্রিল মাসে প্রায় ১১ লক্ষ কর্মসংস্থান সঙ্কুচিত হয়েছে।
দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণের ঘটনা যে হারে বাড়ছে তাতে ‘সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি’র (CMIE) রিপোর্ট দেখে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই! শহরাঞ্চলে উপযুক্ত কর্মী পেতেও হিমশিম খেতে হবে একধিক সংস্থাকে। চিন্তা বাড়াচ্ছে উৎপাদন শিল্পের শ্লথ হওয়া গতিও।