কাঁচালঙ্কা সারা বিশ্বে খাদ্য উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি সারা বিশ্বে উত্পাদিত হয়। সারা বছরই বাজারে এর চাহিদা থাকে। কাঁচালঙ্কার তীক্ষ্ণতা ক্যাপসাইসিন নামক উপাদানের কারণে হয়। কাঁচা লঙ্কার চাষ করে কৃষকরা কম খরচে অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারে।
অনেক ধরনের ওষুধ তৈরিতে লঙ্কার ব্যবহার করা হয়। ক্যাপসাইসিনে অনেক ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদান পাওয়া যায়। বিশেষ করে অ্যান্টি-ক্যান্সার ও ব্যথা উপশমকারী উপাদান। এ ছাড়া এতে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ফসফরাস ও ক্যালসিয়ামসহ অনেক ধরনের লবণ পাওয়া যায়। এটি রক্ত পাতলা করতে এবং হৃদরোগ থেকে রক্ষা করতেও সাহায্য করে। চলুন এই প্রতিবেদনে জেনে নেওয়া যাক কীভাবে কাঁচালঙ্কা চাষ করবেন?
ভারতের কাঁচালঙ্কার প্রধান উৎপাদনকারী রাজ্যগুলি হল অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, উড়িষ্যা, তামিলনাড়ু এবং রাজস্থান। বাংলাতেও আধুনিক পদ্ধতিতে কাঁচালঙ্কার চাষ করা হয়। গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া কাঁচালঙ্কা চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। সব ধরনের জলবায়ুতে চাষ করা গেলেও প্রচণ্ড ঠান্ডা ও গরম উভয় আবহাওয়াই কাঁচালঙ্কার জন্য ক্ষতিকর।
প্রায় যে কোনও ধরনের মাটিতেই কাঁচালঙ্কা চাষ করা যায়। ভাল ফলনের জন্য, হালকা উর্বর এবং আর্দ্রতাযুক্ত ভাল নিষ্কাশনযুক্ত মাটি এর চাষের জন্য অনুকূল। কাঁচালঙ্কার ভালো ফলনের জন্য মাটির পিএইচ গড়ে ছয় থেকে সাতটি অনুকূল।
এছাড়া জৈব পদার্থযুক্ত দোআঁশ বা দোআঁশ মাটি লঙ্কার চাষের জন্য উপযোগী, যাতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকে। কাঁচালঙ্কার চাষ বছরে তিনবার করা যায়। যদিও দেশের কৃষকরা বেশিরভাগই খরিব ফসলকে গুরুত্ব দেন এবং এই মৌসুমে চাষাবাদের পরিসংখ্যানে একর জমিও যথেষ্ট।
কাঁচালঙ্কা চাষের জন্য বর্ষা মৌসুমের ফসল গ্রহণের উপযুক্ত সময় জুন-জুলাই। দ্বিতীয় ফসল পেতে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে বপন করতে হবে। অন্যদিকে গ্রীষ্মকালীন ফসলের জন্য ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে বপন করতে হবে।
বাংলায় মাঘ-ফাল্গুন এবং জ্যৈষ্ঠ-আষাড় মাসে লঙ্কাগাছ লাগানো হয়। তবে, উপযুক্ত পরিবেশে সারাবছর লঙ্কা চাষ করা যায়। লম্বা ও ঝাঝালো জাতীয় কাঁচালঙ্কা মশলাপাতি ও আচার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন— পুসা জ্বারা, এনপি ৪৬-এ, পন্থ সি-১, ভাগ্যলক্ষ্মী, অন্ধ্র জ্যোতি, সিন্দুর ইত্যাদি জাতের লঙ্কাগাছ উচ্চ ফলনশীল। আজকাল HPH-1900, 2680, Ujala এবং US-611, 720 হাইব্রিড, উচ্চ ফলনশীল জাতের লঙ্কাগাছও চাষিরা ব্যবহার করছেন অধিক লাভের জন্য।
এক একর জমিতে লঙ্কার চাষে গড়ে ৪৫-৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। এতে কাঁচালঙ্কার গড় ফলন ৬০ কুইন্টাল পর্যন্ত পৌঁছে। বাজারে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও কৃষক পাবেন প্রায় দেড় লাখ টাকা। এটি ফসলের খরচের দ্বিগুণেরও বেশি।