গঙ্গার পর এবার বিপদসীমা পেরোল ফুলহর। আপার ক্যাচমেন্টে ভারি বৃষ্টির ফলে বেশ কয়েকদিন ধরেই প্রবল গতিতে বাড়ছে নদীর জলস্তর।
শুক্রবার ফুলহর তার বিপদসীমা ২৭.৪৩ মিটার উচ্চতা পেরিয়েছে। শনিবার বেলা ১২টায় নদীর জলস্তর ছিল ২৭.৬৫ মিটার। বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার উঁচুতে।
ইতিমধ্যে নদীর জল রতুয়া-১ ব্লকের বিলাইমারি ও মহানন্দটোলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ঢুকতে শুরু করেছে। কয়েকশো হেক্টর জমি এখন জলের তলায়।
জল ঢুকে গিয়েছে অসংরক্ষিত এলাকায় থাকা বাড়িঘরেও। অন্তত ২০-২২টি গ্রামে এখন নদীর জল বইছে। প্রাণ বাঁচাতে মানুষ নদীবাঁধে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন।
এলাকায় জল ঢোকার খবর পেয়েই এদিন বিলাইমারি ও মহানন্দটোলার বেশ কিছু এলাকা পরিদর্শন করেন স্থানীয় সাংসদ খগেন মুর্মু। এলাকায় ঢোকার আগে ও পরে বিডিওর সঙ্গে দেখা করে মানুষের সমস্যা সমাধানে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানান।
এদিকে এখনও পর্যন্ত পঞ্চায়েত প্রধান কিংবা বিধায়কের দেখা না পেয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন গ্রামবাসীরা। এনিয়ে কটাক্ষ করেছেন খগেনবাবুও।
ফুলহরের চরম বিপদসীমা ২৮.৩৫ মিটার। এখনও সেই জায়গায় যেতে অনেক দেরি রয়েছে নদীর। কিন্তু যেভাবে ফুঁসছে, তাতে দু’চারদিনের মধ্যেই ফুলহর সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে যাবে বলে মনে করছেন গ্রামবাসীরা।
রামায়ণপুর গ্রামের আশু মণ্ডলের বাড়িতে এখন নদীর জল। পরিবার ও গোরু-বাছুর নিয়ে তিনি এখন ফুলহরের বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নদীর জল বেড়েই চলেছে। বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের পুরোটাই এখন জলের নীচে।
গোরু-বাছুর নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। খোলা আকাশের নীচেই থাকতে হচ্ছে। সরকারি কোনও সাহায্য এখনও পাইনি। এমনকি একটা ত্রিপলও জোটেনি।’
গঙ্গারামটোলার অনিল মণ্ডলও সরকারি সাহায্য না পেয়ে ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই নদীর জল বাড়ছিল। কিন্তু চার-পাঁচ দিন ধরে প্রবল গতিতে জল বাড়ছে।
গঙ্গারামটোলার সঙ্গে রামায়ণপুর, ধর্মুটোলা, সবজিটোলা, শ্রীকান্তটোলা, জঞ্জালিটোলা, রুহিমারি সহ অন্তত ২০-২২টি গ্রামে এখন নদীর জল। কিন্তু এখনও প্রশাসনের কেউ এলাকায় আসেনি। কোনও সাহায্যও পাইনি।’
দুর্গত সুভাষ কর্মকার বলেন, ‘গ্রামের দু’পাশে দুই নদী। নদীর জলে গ্রামবাসীদের সব কিছু ভেসে গিয়েছে। হাতে গোনা কয়েকটি বাড়ি এখনও বেঁচে রয়েছে। কিন্তু যে গতিতে নদীর জল বাড়ছে, তাতে এই বাড়িগুলিতেও যে কোনও সময় জল ঢুকে যাবে। গ্রামের ভিতর এখন জল। অথচ পঞ্চায়েত প্রধান কিংবা বিধায়কের দেখা নেই।
এদিন বিপন্ন মহানন্দটোলা ও বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কিছু এলাকা পরিদর্শন করে সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, ‘গ্রামবাসীরা অভিযোগ জানালেন, গঙ্গা ও ফুলহরের জল এলাকায় ঢুকে পড়লেও স্থানীয় বিধায়ক কিংবা পঞ্চায়েতের কেউ এলাকায় আসেননি। মানুষের সমস্যার কথা জানার চেষ্টাও করেননি। বিডিও জানিয়েছেন, মহানন্দটোলা ও বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের জন্য তিনি ৪০০টি করে মোট ৮০০ ত্রিপল দিয়েছেন। পাঁচ টন করে মোট ১০ টন চাল দিয়েছেন। তবে এখনও পর্যন্ত কোথাও শিবিরের ব্যবস্থা করতে হয়নি বলে জানিয়েছেন বিডিও।
বন্যা পরিস্থিতিতে মানুষ যাতে কোনও সমস্যায় না পড়ে তার জন্য তাঁকে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়ে এখানে এসেছি। ফেরার সময় ফের তাঁর সঙ্গে দেখা করব।রতুয়া মহানন্দটোলা বিলাইমারি সহ হরিশ্চন্দ্রপুর,কালিয়াচক, মানিকচকের ভাঙ্গন পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় জল সম্পদ মন্ত্রী রাজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াতকে চিঠি করেছি ২৬ শে জুলাই।