ভুটান পাহাড় থেকে নেমে আসা খরস্রোতা, ত্রাসের নদীগুলোই আজ বেঁচে থাকার "লাইফ লাইন"। ত্রাসের এই ভয়ংকর নদী গুলোই এই, দুর্দিনে বাঁচিয়ে রেখেছে কয়েক হাজার আদিবাসী মানুষের ক্ষুধার্ত পেট।
একবেলা, আধপেটা, রেশনের মোটা চালের গরম ভাত, আর নদীর গেঁড়ি, গুগলি, শামুক সেদ্ধই পুষ্টির যোগান দিচ্ছে আদিবাসী শ্রমিক মহল্লায়।
কর্মসংস্থান হারিয়ে নদী নির্ভর মানুষের জীবিকা।নদীর গুগলি, শামুক, গেঁড়ি,কাঁকড়া, মাছ ধরেই চলছে জীবন যাত্রা।
আদিবাসী সম্প্রাদায়ের শ্রমজীবী মানুষদের খাদ্য সংগ্রহের ঠিকানা ভুটান পাহাড় থেকে নেমে আসা নদী। পাহাড়ি নদীর মাছ এবং বিভিন্ন জলজ প্রানী বাঁচিয়ে রেখেছে দেশের শেষ প্রান্তের এই জেলার কয়েক হাজার ক্ষুধার্ত মানুষকে।
ভারত-ভুটান সীমান্ত ঘেঁষা উত্তরের এই প্রান্তীয় জেলা আলিপুরদুয়ার, নদী, পাহাড়, জঙ্গল,চা বাগান দিয়ে ঘেরা।এই জেলার ৭০ শতাংশ মানুষ আদিবাসী সম্প্রদায়ের। এই জেলায় রয়েছে টোটো, ডুকপা,লেপচা জনজাতির বসবাস।
প্রান্তীয় এই জেলার অধিকাংশ মানুষের জীবিকা নির্ভরশীল চা বাগান কেন্দ্রীক। কিছু মানুষের বর্তমান কর্মসংস্থান ছিলো পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভর করে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারতবর্ষ। কোভিড-১৯ সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিরাট প্রভাব পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে। এক সপ্তাহ হলো রাজ্যে জুড়ে লকডাউন লাগু হয়েছে। এই লকডাউনের জেরে কর্মহীন চা বলয়ের আদিবাসী মহল্লা।
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে চা বাগানে মাত্র ৫০ শতাংশ চা শ্রমিক দিয়ে বাগানের কাজ চলছে। সংক্রমণের জেরে বন্ধ পর্যটন কেন্দ্র গুলো।রাস্তা ঘাটে দেখা নেই টোটো, অটো রিক্সা চালকদের। চা বাগান, বনবস্তি, শহরের রাস্তা ঘাট সর্বত্র একই চিত্র। পেটের তাগিদে বিকল্প কর্মসংস্থানের পথ বেছে নিয়েছে খেটে খাওয়া দিনমজুর, শ্রমিক শ্রেণির মানুষ।
প্রতিবেশী দেশ ভুটান থেকে আলিপুরদুয়ার জেলায় নেমে এসেছে সত্তরটির মতো ছোট বড় নদী।বর্ষাকালে এই নদী গুলো রুদ্র মূর্তি ধারণ করে।ভুটান পাহাড়ে অবিরাম বর্ষণের জেরে এই সমস্ত নদী প্লাবিত করে জেলার বিস্তীর্ন অঞ্চল।
এই নদী গুলোর মধ্যে রয়েছে কালজানি, সংকোশ, ডিমা,রায়ডাক, গদাধর, তোর্ষার মতো বড় নদী গুলো। এই নদী গুলো জেলার মানু্ষের কাছে সন্ত্রাসের নদী নামে কুখ্যাত।
অথচ লকডাউনে এই নদী গুলোই মানুষের পেটের জ্বলা মেটাতে উজার করে দিচ্ছে নিজের সম্পদ। চিলাপাতা জঙ্গল সংলগ্ন আন্দু বনবস্তির বিমল রাভা, বিকাশ বড়াইক, বুধু তির্কি জানান গত লকডাউনের সময় আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছিলো এই নদী।
দিনভর নদীতে কাঁকড়া, গুগলি, শামুক, গেঁড়ি, মাছ ধরি। তা দিয়েই সংসার চলে। বিকাশ জানায় এই সব নদী গুলো থেকে, পিটকাটা,বোরলি,পাবদা,ট্যাংরা,বোয়াল, আঁড় মাছ পাওয়া যায়।
বাজারে নদীর এই মাছ গুলোর খুব চাহিদা।এই মাছ বিক্রি করে কোনও দিন ১৫০-২০০ টাকা আয় হয়। তাতেই চাল,ডাল, সবজি কিনতে পারি।
আর শামুক, গেঁড়ি, গুগলি বাড়িতে নিয়ে যাই।সেগুলো তে অনেক পুষ্টি থাকে। এই গুলো কোনও দিন তরকারি করে খাওয়া হয়, আবার কোনও দিন সেদ্ধ করে খাই।
এই নদী না থাকলে পরিবার সহ আমাদের না খেয়ে মরতে হতো। নদীতে মাছ ধরার জাল ফেলতে ফেলতেই বিমল বলেন সত্যি নদী আমাদের "মা"।
বাংলা নদীমাতৃক দেশ। এটা প্রমাণ করতেই বুঝি তাঁরা মরিয়া হয়ে গিয়েছেন। নিজেদের জীবন দিয়েই তাঁরা প্রমাণ করে চলেছেন।