তৈরি হওয়ার দুই মাসের মধ্যেই সরকারের প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা জলে গেল। ৬৭ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকায় আলিপুরদুয়ারের চেকো নদীর পার বাধাইয়ের কাজ দুই মাস যেতে না যেতেই ধসে নদীতে পড়ে যাচ্ছে। যা দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন তাঁরা।
এত টাকার কাজ দুই মাসেই ভেঙ্গে চুরমার। অগত্যা ফের সেই পার বাঁধাইয়ের কাজ সংস্কারের কাজ করার দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা। আলিপুরদুয়ার দুই নম্বর ব্লকের মাঝেরডাবরি গ্রাম পঞ্চায়েতের চেকো নদীর পারের এই কাজ বোধহয় সরকারি অর্থ নয় ছয়ের সেরা উদাহরণ হয়ে থাকছে।
জানা গিয়েছে পাড়ায় সমাধান প্রকল্পের মাধ্যমে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আলিপুরদুয়ার ২ ব্লকের মাঝেরডাবরি গ্রাম পঞ্চায়েতের চেকো নদীর পাড় বাধাইয়ের কাজ শুরু করে সেচ দফতর।
চার মাসে ৬৭ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা ব্যায়ে চেকো নদীর পারে বোল্ডার দিয়ে ৫০০ মিটার এলাকা পার বাধাইয়ের কাজ হয়। এই কাজ শেষ করতেই সময় লাগে চার মাস। মাটি ধসে বোল্ডার নদীতে পড়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ চেকো নদী বাধতে যে কাজ হয়েছে সেই কাজ এখন সবটাই জলে যাওয়ার উপক্রম। নির্মাণ কাজে গাফিলতি হয়েছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের। এদিকে পাড় ভেঙে পড়ায় দুশ্চিন্তায় এলাকাবাসীরা।
ভরা বর্ষায় না তাদের ভিটেমাটিহারা হতে হয় এই আতঙ্কে এখন মাঝেরডাবরি এলাকার চেকো নদীর পারের শতাধিক পরিবার। স্থানীয় বাসিন্দা অনিল বর্মন বলেন, " চেকো নদী বোল্ডার দিয়ে বাধাই হওয়ায় আমরা খুশি হয়েছিলাম।
বর্ষায় রুদ্র মূর্তি ধারন করলেও ভেবেছিলাম চেকো নদী আমাদের কিছুই করতে পারবে না। কিন্তু সামান্য বৃষ্টিতেই কাজের যা দফারফা হয়েছে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। এই নির্মান কাজের সংস্কারের দাবি তুলেছি আমরা।"
অপর এক স্থানীয় বাসিন্দা সুভাষ চন্দ্র মাহাত বলেন, " কাজে গফিলতি অবশ্যই ছিল। না হলে এত টাকার কাজের দুই মাসে এই অবস্থা হয় কি করে? " জানা গিয়েছে পাড়ায় সমাধান প্রকল্পে এই কাজ হাতে নিয়েছিল সেচ দফতর।
সমস্যার সমাধানতো হয়ই নি উলটে এই কাজের ফলে এলাকার মানুষের আতঙ্ক আরও বেড়ে গিয়েছে। পাড়ায় সমাধান প্রকল্পে এত বড় কাজ করা যায় কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
পাড়ায় সমাধান কর্মসূচিতে সাধারণত এলাকার ছোট ছোট সমস্যা সমাধানের কথা বলা হয়েছিল। মুলত ৫০ লক্ষের কম মুল্যের কাজ হওয়ার কথা ছিল এই প্রকল্পে। কিন্তু এখানে কি করে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার কাজ অনুমোদন পেল তাই নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা। তাহলে কি এই কাজের পেছনেও কাটমানি থাকায় কাজের মান এত খারাপ হয়েছে প্রশ্ন তুলছে বিভিন্ন মহল। ঘটনার কথা স্বিকার করে নিয়েছেন এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান বুবুন রায়। তিনি বলেন, " আমরা বিষয়টি সেঁচ দফতরকে জানিয়েছি। শীঘ্রই ওই কাজ সংস্কারের দাবি জানিয়েছি। দেখি সেচ দফতর কি করে।"
অন্যদিকে আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক এবং জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সুমন কাঞ্জিলাল অভিযোগ করেন, এই সরকারের সব কাজে কাটমানি চলে। তাই ঠিকাদারদের কাছ থেকে কাটমানি নিলে কাজের মান আর কত ভালো হবে। সুমন বলেন, সরকারের লোকেরাই যেখানে তোলাবাজি, কাটিমানির সাথে জড়িত সেখানে কি তদন্ত হবে। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, বিষয়টি জানি না। আমি প্রশাসনের সাথে কথা বলব। যদি ঠিকাদার নিম্নমানের কাজ করে থাকে তবে তার শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।