স্ত্রী মারা গিয়েছেন মাস খানেক আগে। স্ত্রীর মৃত্যুশোক ভুলতে পারেননি স্বামী। বরং মৃত্যুশোককে বহন করে নিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।
শিলিগুড়ির লেকডাউনের বাসিন্দা দেবর্ষি কানুনগো। শহর জুড়ে তাঁকে ঋষি নামেই সকলে চেনে। খানিকটা খ্যাপাটে, খানিকটা গোল্ডেন হার্ট।
শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, রোগ-জরা-ব্যাধি কোনও কিছুকেই ভয় পান না যিনি। যখন যেখানে দরকার হাজির হয়ে যাচ্ছেন তিনি।
কখনও পিপিই কিট পরে, কখনও সে সুযোগ না থাকলে এমনিই চলে যাচ্ছেন। করোনাকে তোয়াক্কা না করেই।
জীবন মৃত্যু এখন আক্ষরিক অর্থেই তার পায়ের ভৃত্য। সঙ্গে থাকছে স্যানিটাইজেশনের সামগ্রী। রাত-বিরাতে কিংবা লক ডাউনের মধ্যে।
তাঁর একটাই কথা। স্ত্রীকে হারিয়েছি অকালে। শুশ্রুষারও কোনও সুযোগ পাইনি। আর কোনও প্রাণ যেন অকালে এই ভাবে ঝরে না যায়।
সেই চেষ্টাই করছি। শুধু তাঁকে ডাকতে হবে এমন নয়। রাতে বাড়ি ফিরে ফোনে ঘনিষ্ঠ-পরিচিত জনের খোঁজ নিচ্ছেন তিনি।
কি খেলে করোনা দূরে থাকবে, বাতলাচ্ছেন তাও। আপনি শুনুন বা না শুনুন। তিনি শুনিয়ে যাবেন, কোথায় কীভাবে থাকলে করোনাকে দূরে রাখা যাবে।
নিজে একটি বায়োকেমিক্যাল সংস্থায় চাকরি করেন। ফলে আর পাঁচজনের চেয়ে স্যানিটাইজেশনের রসায়ন সম্পর্কে তাঁর খানিকটা বেশি জানা।
সেই অভিজ্ঞতা থেকে লেগে পড়েছেন তিনি নিজের কাজে। কোথাও তাঁকে ডাকা হচ্ছে। কোথাও নিজেই লেগে পড়ছেন পরোপকার করতে।
কেন এভাবে ছুটে চলেছেন তিনি। তিনি নিজেই জানালেন, স্ত্রী সঙ্গীতা মানুষকে ভালবাসতো। মানুষের কথা লিখতো। কেউ কখনও বিপদে বা কষ্টে আছে শুনলে মন কাঁদতো তাঁর।
কয়েক মাস আগে সে চলে যাওয়ার পর তাঁর শোক থেকে বের হতে আর তাঁকে বাঁচিয়ে রাখতে তিনি মানুষের জন্য সেবায় বাড়তি উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।
দেবর্ষিবাবু শিলিগুড়ির পরিচিত নাট্যকর্মীও বটে। তাই গ্রুপ থিয়েটারের সংষ্কৃতি তাঁকে আরও খানিকটা এগিয়ে দিয়েছে মানুষের সেবাকল্পে।
শুধু স্যানিটাইজ করাই নয়, রাত-বিরেতে কোথাও যেতে হবে, অ্য়াম্বুল্যান্স জোগাড় করতে হবে, সবেতেই ফোরফ্রন্টে ঋষিবাবু।
আগামী কয়েক মাস এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ। মানুষের কাছে। সঙ্গে তাঁর কাছেও। তাই এখন নাওয়া খাওয়ার সময় নেই তাঁর।
যখন ফোনে ধরা গেল। তখন তিনি এক নিকটজনের আত্মীয়ের শবদেহ সদ্গতি করার কাজে তদারকি করে বেড়াচ্ছেন। তার মধ্য়েই এগোল কথা।
জানালেন, নিজে যদি অসুস্থ হয়ে অক্ষম হয়ে না পড়ি। তাহলে এই কাজ চালিয়ে যাব। শুধু একটা ফোন করলেই হবে আমি হাজির।
শহরে অনেকেই ভালো কাজ করছেন। তার মধ্যে উজ্জ্বল দেবর্ষিবাবুও। এভাবেই স্ত্রীর ইচ্ছেপূরণ করে চলেছেন তিনি।