
পোশাকি নাম বনফুল সরণি। জেলা শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড। নির্বাচন শেষ হয়েছে প্রায় দেড় মাস অতিক্রান্ত। তবুও রাজনৈতিক দলের পতাকাগুলো এখনও পতপত করে উড়ছে।তবে দেখা নেই কোন রাজনৈতিক দলের নেতাদের। এলাকায় দেখা নেই প্রশাসনের কর্তাদের। জেলার প্রত্যন্ত চা বলয় কিংবা বনবস্তি নয়। শহরের প্রাণ কেন্দ্রেই অনাহারে দিন গুজরান করছে বনফুল সরণির শতাধিক যৌন কর্মী। তবু করোনার সামাজিক দুরত্ব মানতে নিষিদ্ধপল্লিতে নিষেধ, সাধারণের প্রবেশ।
 করোনার কবলে আলিপুরদুয়ার শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের যৌনপল্লি যেন এক নির্জন দ্বীপ।
 এলাকার বাসিন্দাদের দাবি সরকারি সাহায্য নেই এই বনফুল সরণিতে। আলিপুরদুয়ার চৌপথি থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরে ভাটিখানার রাস্তায় একটি ছোট্ট অপরিসর নোংরা গলিটাই বনফুল সরণি নামে পরিচিত। 
  
এই ছোট্ট গলিটিতেই শতাধিক মহিলা যৌন কাজের মাধ্যেমেই তাদের দিন গুজরান করে। করোনা সংক্রমণের দাপটে দীর্ঘদিন ধরে খদ্দেরের দেখা নেই এলাকায়।  রবিবার থেকে রাজ্যে লকডাউন লাগু হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই এই বনফুল সরণির মহিলারা গলিতে ঢোকার দুই মুখে বাঁশের গেট লাগিয়ে এলাকায় অপরিচিত ব্যাক্তিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে।
 একমাত্র উপার্জনের পথ হারিয়ে কার্যত দিশেহারা অবস্থা অসহায় এই শতাধিক  মহিলা এবং তাদের শিশু সন্তানদের।চরম আর্থিক সংকটে ধুঁকছে তাঁরা।
এলাকার, মহিলা মধু, পায়েল, জুহির অভিযোগ সরকারি সাহায্য তারা এখনও  পাননি। রাজ্যের শাসক দলের নেতা, কিংবা নবনির্বাচিত বিজেপির বিধায়ক, প্রশাসনের কেউ তাদের খোঁজ নিতে একটি বারের জন্য এলাকায় আসেন নি। না, এলাকায় দেখা মেলে না স্বাস্থ্য দপ্তরের ছোট বড় কোন কর্মীর। অথচ কিছুদিন আগেই এই বনফুল সরণিতেই ঢাকঢোল পিটিয়ে ভোটের প্রচার করছেন সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা। মিলেছে অফুরন্ত সাহায্যের প্রতিশ্রুতি। তবে নির্বাচন মিটতেই একে একে উধাও হয়ে গেছে সকলেই।
  
গত লকডাউনের সময়তেও টানা চার মাস অনাহার অর্ধাহারে দিন কাটিয়েছেন এই মহিলারা। 
 তবে এই মহিলাদের কথায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে কিছু সাহায্য করা হয়েছিলো। তাতেই কিছুটা নিস্তার পেয়েছিলেন তারা।
 এক বৃদ্ধ মহিলা জানান, সরকারি সাহায্য যা মিলছে তা নাম মাত্র। এক মাসের রেশন বাবদ ছ জনের জন্য মাত্র ১১ কেজি চাল, আটা মিলছে।
 ইতিমধ্যেই বেশ কিছু কমবয়সী মহিলা পেটের তাগিদে অন্যত্র চলে গেছেন।
  
এই "বনফুল সরণীর"একমাত্র  সত্তর বছরের এক বৃদ্ধাই পেয়েছে করোনার টিকা। 
 যদিও টিকা নয়, সরকারের কাছে এই মহিলাদের একমাত্র দাবী পর্যাপ্ত পরিমান খাদ্যের যোগান।
 স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে ল্যারি বোস জানান সামর্থ্য অনুযায়ী ওদের সাহায্য করছি।তবে তা যথেষ্ট নয়।সরকার এবং রাজনৈতিক দল গুলোর উচিত এদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
  
আলিপুরদুয়ার বিজেপির বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল বলেন এলাকায় গিয়ে সকলের সাথে কথা বলে ওদের সমস্যা জানার চেষ্টা করবো। 
 ওদের দিকে সব রকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেব।
  
আলিপুরদুয়ার জেলা তৃনমুলের মুখপাত্র সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, এর আগেও সরকারি তরফে ওদের সাহায্য করা হয়েছে।প্রশাসনের সাথে কথা বলে ওদের প্রয়োজনীয় সাহায্য করা হবে।
  
আলিপুরদুয়ার জেলাশাসক সুরেন্দ্র কুমার মিনা জানান, আমাদের দপ্তরের কর্মীরা ওদের খোঁজ খবর রাখেন। জেলা প্রশাসন সমস্ত সাহায্য করবে।