উত্তরবঙ্গের প্রাচীন জনজাতিগুলির মধ্যে অন্যতম হল রাজবংশী সম্প্রদায়। বহু পুরনো এই জনজাতির মানুষদের সংস্কৃতি আজ ধীরে ধীরে হারাতে বসেছে। রাজবংশী সম্প্রদায়ের একটা সময় মূল সংস্কৃতি ছিল মুখোশ নৃত্য বা 'লঙ্কা গান'। এই গানের মূল আকর্ষণ ছিল বিভিন্ন ধরনের মুখোশ।
তবে বর্তমানে মুখোশ না মেলায় ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এই সংস্কৃতি। তাই হারাতে বসা এই সাংস্কৃতিকে বাঁচাতে উদ্যোগ নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নৃত্য নাটক সঙ্গীত ও দৃশ্যকলা অ্যাকাডেমি। লঙ্কা গানকে ফিরিয়ে আনতে খড়িবাড়ির মহিষমারি এলাকায় মুখোশ তৈরি নিয়ে আয়োজন করা হল বিশেষ কর্মশালা। মুখোশ তৈরিতে অভিজ্ঞদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিলেন এলাকার বেশ কয়েকজন রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষ।
উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষদের কাছে শতাধিক প্রাচীন সংস্কৃতি হল 'লঙ্কা গান'। ১৯২৫ সালে দার্জিলিং জেলার খড়িবাড়ি ব্লকের ওয়ারিশজোত বস্তিতে এই গান শুরু করেন চৌরঙ্গি ঠাকুর রাজধারী। মাটিগাড়া, শিলিগুড়ি, বিহারের ঠাকুরগঞ্জ, নেপালে রাজবংশিদের মধ্যে এই পালা গান খুব জনপ্রিয় ছিল।
বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের তরাই অঞ্চলের খড়িবাড়ি ওয়ারিশজোত বস্তির রাজবংশিরা আজও শতাধিক পুরনো এই পালায় মেতে ওঠেন। তবে এই পালা গানের অন্যতম বড় আকর্ষণ ছিল 'রাজধারী মুখোশ নৃত্য' বা 'লঙ্কা গান'৷
জানা যায়, এই 'লঙ্কা গান'-এ আগে চলত সারা রাত ধরে। তাও আবার টানা সাতদিন ।তা এখন তা কমে গিয়ে চার দিনে এসে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে এই সুপ্রাচীন এই নৃত্যকলা ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে। যার মূল কারণই হল মুখোশ এবং অর্থের অভাবে। তাছাড়াও সঠিক প্রশিক্ষণের অভাবে আজ রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষেরা সঠিকভাবে মুখস্ত তৈরি করতে পারছেন না।
সেই সমস্ত বিষয়কে মাথায় রেখে এবং এই প্রাচীন রাজবংশী জনজাতির সংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে এগিয়ে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নৃত্য, সংগীত ও দৃশ্যকলা আকাদেমি। জানা গিয়েছে পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্র , ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নৃত্য, সংগীত ও দৃশ্যকলা আকাদেমির উদ্যোগে দার্জিলিং জেলার মহিষমারীতে ১০ দিনের এক প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়।
যেখানে এই রাজধারী মুখোশ নৃত্যের সাথে যুক্ত বিভিন্ন চরিত্রগুলি যেমন রাবন , মহিরাবান , বিভীষণ , সূর্পনখা , ত্রিশুলা , রাক্ষসী, বালি, সুগ্রীব , অঙ্গদ , হনুমান, বাঘ, বুড়ি , বাঁকা সিপাই , বারিয়ান ধীর , জাম্বুবান এই সকল চরিত্রের মুখোশ তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
এই প্রশিক্ষণে ওই এলাকার বিভিন্ন বয়সের রাজবংশী সম্প্রদায়ের ১৫ জন মুখোশ তৈরীর প্রশিক্ষণ নেয়। এই প্রশিক্ষণ শিবিরে রাজ্য নৃত্য, নাটক ,সংগীত ও দৃশ্যকলার একাডেমীর বিশেষজ্ঞরা এসে এই প্রশিক্ষণ দেন।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নৃত্য নাটক সঙ্গীত এবং দৃশ্যকলা অ্যাকাডেমির সচিব ডক্টর হৈমন্তী চট্টোপাধ্যায় বলেন, "রাজ্য আকাদেমি ১৯৫৫ সাল থেকেই এই কাজগুলো করে আসছে।
পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে নানান মানুষের নানান সাংস্কৃতিক উপকরণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সেগুলিকে পুনরুজ্জীবিত এবং একত্রিত করে প্রিন্ট এবং ডিজিটাল মাধ্যমে ডকুমেন্টেশন করে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরাই আমাদের উদ্দেশ্য ।