কেউ ভবিষ্যতে খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। কারও ইতিমধ্যেই বেশ খেলোয়াড় হিসেবে নামডাক হয়েছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে থমকে গিয়েছে খেলোয়াড়ি জীবন।
অনেকেই দুঃস্থ পরিবার থেকে অনেক লড়াই করার স্বপ্ন নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু করোনার দাপটে বুঝি বা স্বপ্ন হারিয়ে যায়।
কঠিন পরিস্থিতিতে দুবেলা দুমুঠো অন্ন সংস্থানের জোগাড় করাই কঠিন ব্য়পার হয়ে গিয়েছে তাঁদের। তাই আপাতত স্বপ্ন মুলতুবি রেখেছেন তাঁরা।
কেউ অন্য কাজ করছেন, কেউ কি করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। পড়াশোনা অনেকেরই স্কুলের গণ্ডি পার হয়নি এখনও। তাই সুবিধামতো কাজ জুটিয়ে নেওয়াটাও চট করে অসম্ভব।
এরই মাঝে এই সমস্ত খেলোয়াড়দের কথা চিন্তা করে এগিয়ে এল শিলিগুড়ির একটি সংগঠন। খেলোয়াড়দের কিছুদিনের রসদ জুগিয়ে হাসি ফোটালেন সদস্য়রা।
শিলিগুড়ির ইউনিক ফাউন্ডেশনের তরফে করোনাকালে বিপন্ন খেলোয়াড় ও মাঠকর্মীদের পাশে থাকার প্রয়াসে খোলা হল 'জনতার বাজার'।
উপস্থিত ছিলেন মহিলা ফুটবলারের দল, দুঃস্থ ক্রিকেট প্লেয়ার, টেবল টেনিস প্লেয়ার, অ্যাথলেটিক্স প্লেয়ার ও মাঠ পরিচর্যার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা।
কোভিড প্রটোকল মেনে স্যানিটাইজার দিয়ে এলাকা পরিষ্কার করে তাদের খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। ফলে সমস্যা কিছু ছিল না।
চাল, ডাল, সোয়াবিন , ডিম , আলু, পিঁয়াজ, আটা, পাঁচ রকমের কাঁচা সব্জি, সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডার, কোলগেট, দুধের প্যাকেট সহ আরও নানা সামগ্রী।
এই পর্যায়ে আশি জনকে তুলে দেওয়া হয় এই সামগ্রী। পরে ব্যাক্তিগতভাবে কেউ বিপদে পড়লে তাঁরা সাহায্য করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন সংগঠনের শক্তি পাল।
জনতার বাজার বসানো হয়েছিল, কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম সংলগ্ন সুইমিং পুলের সামনে। উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত টেবল টেনিস কোচ ভারতীয় ঘোষ, অনুপ বসু, অ্যথেলেটিক দীপ্তি পাল ও সমাজকর্মী বিশ্বজিত রায়, ইউনিক ফাউন্ডেশন টিমের সেক্রেটারি বিজয় ছেত্রী প্রমুখ।
এদিন থেকে শুরু করে প্রত্যেক রবিবার এই জনতার বাজার বসানো হবে বিনামূল্যে। খেলোয়াড় ও মাঠকর্মীরা নিজেদের সঠিক পরিচয় দিয়ে এই বাজারের সুবিধা নিতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে।
এই সংগঠন বিগত কয়েক বছরে শিলিগুড়ি ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় লাগাতার কাজ করে চলেছেন। কখনও খেলোয়াড়, কখনও মাঠকর্মী, কখনও সাধারণ মানুষ, কখনও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা।
ভরসার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা। ফলে শহর ও এলাকার মানুষ বিপদে পড়লে প্রথম কয়েকটি নামের মধ্যে তাঁদের নম্বর খোঁজেন সর্বাগ্রে।
করোনা পরিস্থিতিতেও তাঁরা দুর্দান্ত কাজ করে চলেছেন। পিপিই কিট পরে, সমস্ত সতর্কতা বজায় রেখে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন সর্বাগ্রে।
কখনও ফ্রি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা নিয়ে, কখনও মৃতদেহ শ্মশানে পৌঁছে দেওয়ার লোক না থাকায় তাঁরাই ভরসা হয়ে উঠেছেন।
তাঁদের পরিষেবার গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছে জেলা-শহরের সীমানাও। শিলিগুড়ি ছাড়িয়ে কখনও তাঁরা ছুটে গিয়েছেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার ইয়াস বিধ্বস্ত এলাকায়, কখনও আমফান দূর্গত এলাকায়।
ফলে রাজ্যব্য়াপী তাঁরা নিজেদের কাজ ছড়িয়ে নিয়েছেন। কলকাতাতেও নিজেদের পরিষেবার শাখা খুলেছেন। ফলে সেখানেও যোগাযোগ করলে তাঁরা সাহায্য করবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
প্রথমে নিজেদের পকেট থেকে খরচ করে মানুষের পাশে দাঁড়ানো শুরু করলেও, তাঁদের কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হয়ে অনেকেই সাধ্যমতো সাহায্য করছেন নেপথ্যে থেকে।
তাঁদেরও ধন্যবাদ জানিয়েছেন শক্তিবাবু। তিনি জানিয়েছেন, মানুষের সঙ্গে, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে আমরা কোনও বাছ-বিচার করি না।
তাই মানুষ আমাদের কাজে ভরসা রাখছেন। মানুষের ভরসা ও ভালবাসাই আমাদের পাথেয়। তাকে সঙ্গী করেই যত বেশি পারব মানুষের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করব।
শুধু মানুষ নয় অবশ্য, পথ কুকুরদের পাশেও তাঁরা থাকেন। আবার উৎসব অনুষ্ঠানে বেঁচে যাওয়া খাবার তাঁদের ফোন করলে তাঁরা নিয়ে যান। বিলিয়ে দেন ফুটপাতের বাসিন্দাদের মধ্যে।
আপাতত করোনা পরিস্থিতির শিকার সব ধরণের মানুষের পাশে তাঁরা দাঁড়ানোকেই প্রাথমিক কাজ বলে মনে করছেন তাঁরা। তবে বাকি যে কোনও কাজেই তাঁরা তৈরি রয়েছেন বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।