শুধু আসা যাওয়া! ভোটের আগের চিত্রটা ছিল, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যাওয়ার হিড়িক। ভোটের পরে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফেরার তোড়জোড়। বিজেপি-তে যাওয়া তৃণমূলের একগুচ্ছ পরিচিত মুখ ফের তৃণমূল কংগ্রেসেই ফিরতে পারে বলে জল্পনা তুঙ্গে। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয় বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরে ঘর ওয়াপসির চর্চা শুরু রাজ্য রাজনীতিতে। ইতিমধ্যেই বিজেপির নিচুতলার অনেক নেতা কর্মী ঝাঁকে ঝাঁকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
বিধানসভা ভোটের আগে ৩০ জনের বেশি নেতা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি যোগ দিয়েছিলেন। তখন বিজেপি-র দিকেই পাল্লা ভারী ছিল। কিন্তু ভোট মেটার পরের খেলায় দেখা যাচ্ছে, ঘর ওয়াপসির হিড়িক। কেমন খেলা? এই যেমন, বাংলায় বিজেপির অন্যতম স্ট্র্যাটেজিস্ট ছিলেন মুকুল রায়। একসময় তৃণমূল কংগ্রেসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরেই তাঁর নেতৃত্ব ছিল। সূত্রের খবর, এ হেন মুকুল রায় ফিরতে পারেন তৃণমূল কংগ্রেসে। মুকুলের ফেরার চর্চায় আরও ইন্ধন জুগিয়েছে, তাঁর করোনা আক্রান্ত স্ত্রীকে হাসপাতালে দেখতে যান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু মুকুলই নন, আরও বেশ কিছু নেতাই বিজেপি-তে বেসুরো গাইছেন। যাঁরা ফিরতে পারেন তৃণমূলে।
বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে যে নেতারা বিজেপি-তে গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম শোভন চট্টোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ শোভন একসময় মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ছিলেন। পরে বিজেপি-র সঙ্গ ত্যাগ করেছেন। আপাতত কোনও দলেই নেই। যদিও জোর চর্চা, তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে ফেরার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন।
অমল আচার্য: তৃণমূল কংগ্রেস দুবারের বিধায়ক অমল আচার্য ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন, তিনি বিজেপি ছাড়ছেন। তাঁর বক্তব্য, সিবিআই যে ভাবে তৃণমূলের নেতাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিচ্ছে, সেটা ঠিক নয়। তিনি প্রকাশ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে বদলার রাজনীতির অভিযোগ এনেছেন।
দীপেন্দু বিশ্বাস: প্রাক্তন বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে তৃণমূলে ফিরতে চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন। তৃণমূলে টিকিট না পেয়ে দীপেন্দুও বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন। একসময় দীপেন্দু তৃণমূলের টিকিটে বসিরহাট দক্ষিণে বিধায়ক ছিলেন। মমতাকে চিঠিতে দীপেন্দু লিখেছিলেন, 'ভোটের আগে অবসাদে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলাম। ভুল করেছি। আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি। আপনি ক্ষমা না করলে বাঁচবো না।'
সরলা মুর্মু: টিকিট না পেয়ে ঠিক ভোটের আগে সরলা মুর্মু যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। তিনিও ক্ষমা চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। মালদায় বাড়িতে সাংবাদিকদের ডেকে সরলা বলেন, উনি যদি আমাকে গ্রহণ করেন, আমি ওঁর সঙ্গে থাকবো, দলের কাজ করব। আমি ভুল স্বীকার করছি দিদি। আমাকে ক্ষমা করুন।
সোনালি গুহ: তৃণমূলের আরেক প্রাক্তন বিধায়ক ও একসময় মমতার ঘনিষ্ঠ সঙ্গী সোনালি গুহ ঠিক ভোটের মুখে যোগ দেন বিজেপি-তে। টিকিট না পেয়ে। তিনিও কয়েক দিন আগে মমতার কাছে আবেদন জানিয়ে লিখেছেন, 'মাছ যেমন জল ছাড়া বাঁচে না, আমিও তেমনই তৃণমূল কংগ্রেস, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছাড়া বাঁচবো না। আমি ক্ষমা চাইছি। আপি ক্ষমা না করলে বাঁচবো না।'
শুভ্রাংশু রায় মাত্র কয়েকদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন- মানুষের সমর্থনে জিতে আসা সরকারের সমালোচনা করার আগে আত্মসমালোচনা করা জরুরি। তারপরই হুলুস্থূল পড়ে গিয়েছিল। শুভ্রাংশু তৃণমূলে ঘরওয়াপসির সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। এমনকী বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি মুকুল রায়কে নিয়েও শুরু হয়েছিল জল্পনার জাল বোনা। এবার সেই পথে পা রাখলেন রাজীব।