সেন্ট্রাল জু অথরিটির নির্দেশে দেশের সর্ববৃহৎ চিতাবাঘ পুর্নবাসন কেন্দ্রে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে আঁটোসাটো নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হলো খয়েরবাড়ির লেপার্ড পুর্নবাসন কেন্দ্রটিকে।
ইতিমধ্যেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ঝাড়খণ্ড ও দক্ষিণ ভারতে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে রয়েল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, সিংহের মৃত্যু হয়েছে। এরপরই এই পুর্নবাসন কেন্দ্রে থাকা ২১ টি চিতাবাঘ এবং বর্তমান ভারতবর্ষে সবচেয়ে বৃদ্ধ সুন্দরবনের রয়াল বেঙ্গল টাইগার (রাজা) রয়েছে। সেই সঙ্গে এই কেন্দ্রেই রয়েছে দুটি শাবক চিতাবাঘ।
সেন্ট্রাল জু অথরিটির নির্দেশে মানুষদের সংস্পর্শ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক করে রাখা হয়েছে বিড়াল প্রজাতির এই প্রাণীকূলকে। সেন্ট্রাল জু অথরিটির গবেষণায় প্রাথমিকভাবে এই তথ্য উঠে এসেছে গত দেড় বছরে বিড়াল গোত্রের পরিবারে থাকা বাঘের করোনা আক্রান্ত হবার রেকর্ড রয়েছে।
এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই খোলনলচে বদলে ফেলা হয়েছে ফালাকাটার সাউথ খয়েরবাড়ির লেপার্ড পূর্নবাসন কেন্দ্রের যাবতীয় নিয়মকানুন। ২১ টি চিতাবাঘ এবং একটি রয়াল বেঙ্গলের আস্তানার ধারে কাছে যাওয়া সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। কঠিন নিয়ম লাগু শুধু বহিরাগতদের জন্য নয়।বিধিনিষেধ আরোপ হয়েছে বনকর্তা এবং বনকর্মীদের জন্য।
এই ২১ টি চিতা এবং দুটি চিতা শাবক একমাত্র রয়াল বেঙ্গল টাইগারকে সন্তান স্নেহে লালনপালন করেন ওয়াইল্ড লাইফ গাইড পার্থ সিনহা। আইনজারি হয়েছে পার্থবাবুর ক্ষেত্রেও।
২০০৫ সালে এই পুর্নবাসন কেন্দ্রটি চালু হবার পর থেকেই এই কেন্দ্রটির দেখাশোনার দায়িত্ব সামলে আসছেন পার্থ সিনহা। জলদাপাড়া বনবিভাগের ডিএফও দীপক এম বলেন, একজন বিশেষজ্ঞ পশু চিকিৎসক ২৪ ঘন্টা ওই পুর্নবাসন কেন্দ্রের দ্বায়িত্বে রয়েছেন। তিনি প্রতিদিন নজর রাখছেন।
কোভিড পরিস্থিতিতে গত দেড় বছরে এই কেন্দ্রে কোন অপ্রীতিকর ঘটনার নজির নেই। তবু্ও আমরা সদা সর্তক রয়েছি।
তবে এর মধ্যেই বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে রয়াল বেঙ্গল টাইগার 'রাজা'র প্রতি। কারণ ওর বয়স ২৫ হয়ে গিয়েছে। ফলে স্পর্শকাতর বয়সে রয়েচে বাঘটি।
বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঘেদের খাঁচায় খাবার দেওয়ার সময় পুর্নবাসন কেন্দ্রের কর্মীদের যদি দেহের কোনও অংশ স্পর্শ হয় তবে খাঁচার সেই অংশ ব্লু-বার্নার দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুড়িয়ে ফেলে গরম জল দিয়ে জীবাণু নাশক স্প্রে করা হয়।
এই পুর্নবাসন কেন্দ্রে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে কোরসিলিন লিকুইড ব্যবহার করা হচ্ছে। বাঘেদের ডেরায় ঢুকতে বনদপ্তরের আধিকারিকদের কঠিন নিয়ম পালন করার নির্দেশ দিয়েছে সেন্ট্রাল জু অথরিটি।
প্রথমে পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেট দিয়ে পা ও জুতো ধুয়ে প্রবেশ করতে হবে এনক্লোজারে। এরপর বাইরে থেকে পড়ে আসা পোষাক বর্জন করে সেখানকার নির্ধারিত পোষাক পড়তে হবে।
এরপর সাবান জল দিয়ে হাত পরিষ্কার করে, গোটা দেহ স্যানিটাইজ করে মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস লাগিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হবে।
করোনা সংক্রমণ থেকে বাঘেদের বাঁচাতে ভাইরাস নাশক ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রান)ভি.কে যাদব বলেন,কোন রকম ঝুকি নেবার প্রশ্নই নেই।
সেন্ট্রাল জু অথরিটি এবং রাজ্য বনদপ্তরের গাইডলাইন মেনে খয়েরবাড়ি পুর্নবাসন কেন্দ্রে নজর রাখা হচ্ছে। এরপরেও কোনও সমস্য়া হলে চিকিৎসকরা প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
এই মুহূর্তে অবশ্য কোনও রকম সমস্য়া হওয়ার আশঙ্কা নেই বলেই দাবি করেছেন খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসনকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।