রাজ্যে ভোট আসতে এখনও মাস পাঁচেক বাকি। কিন্তু যুদ্ধ প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে দুই শিবিরেই। গত ৫ নভেম্বর ২ দিনের সফরে বাংলায় এসে বাঁকুড়ায় গিয়েছিলেন অমিত শাহ। তার দু'সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই এবার বাঁকুড়া সফরে হাজির স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা আবহে খাতড়ায় এসে এই প্রথম জনসভাও করলেন। স্বভাবতই এখান থেকেই বিজেপির দিকে একের পর এক তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে সেই তোপের জবাবে পিছিয়ে থাকেনি বিজেপি শিবিরও। মমতার তোলা সবকটি অভিযোগের জবাবে স্কোয়ার কাট হাঁকিয়েছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
বাঁকুড়া সফরে এসে এক আদিবাসী পরিবারে দুপুরের খাবার খেয়েছিলেন অমিত শাহ। সেই বাঁকুড়ার মাটিতে দাঁড়িয়েই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সেই 'মধ্যাহ্নভোজ রাজনীতি'কে কটাক্ষ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এনিয়ে বাঁকুড়া সফরে এসে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার দাবি ফাইভস্টার হোটেল থেকে খাবার আনিয়ে অমিত শাহ আদিবাসী বাড়িতে খেয়েছেন।
অমিত শাহকে আক্রমণ করার পাল্টা জবাব দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি দাবি করেছেন সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় বিরিয়ানি খেয়ে নেত্রীর অনশন করার কথা রাজ্যবাসী জানেন।
বীরসা মুন্ডার বলে একটি অন্য মূর্তিতে মালা দিয়ে বিতর্ক বাধিয়েছিলেন অমিত শাহ। তাকে ‘অপমান’ বলে মন্তব্য করে বীরসা মুন্ডার জন্মদিনে রাজ্য সরকারের ছুটি ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এনিয়েও কটাক্ষ করেছেন দিলীপ ঘোষ। ভোটের সময়ই আদিবাসীদের কথা মনে পড়ে মুখ্যমন্ত্রীর, মন্তব্য করেন দিলীপ। আদিবাসীদের উন্নয়ন নিয়ে ভাবেনি তৃণমূল সরকার, তাই আদিবাসীরাও আর মমতা বন্দ্যিপাধ্যায়কে বিশ্বাস করে না বলে দাবি বিজেপি রাজ্য সভাপতির। দিলীপের কথায়, ১০ বছর হতে চলল এতদিন মানুষের ঘরে যাওয়ার কথা মনে পড়েনি তৃণমূলের। লালগড়ে শবরদের ঘরে ২ টাকা কিলো চাল এখনও পৌঁছয়নি। জঙ্গলমহলের মানুষ বিজেপির সঙ্গে আছেন।
বাঁকুড়া সফরে গিয়ে ভোটের আগে নতুন প্রকল্প 'দুয়ারে দুয়ারে সরকার' ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ১ ডিসেম্বর থেকে বাড়ির দরজায় সরকারি পরিষেবা দিতে বিডিওরা বাড়িতে বাড়িতে যাবেন, সঙ্গে যাবেন তৃণমূল প্রতিনিধিরাও। প্রতি ব্লকে হবে ক্যাম্প। এই বিষয়েও দিলপী ঘোষ মমতাকে আক্রমণ করেছেন। সরকারি আধিকারিকদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে কাজে লাগান হচ্ছে বলে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি।
বিরোধীরা হামলা ও মামলা করছে বলে এদিন অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এরপরেই রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে পাল্টা তোপ দেগেছেন দিলীপ। বিজেপি রাজ্যসভাপতির অভিযোগ দলের ২৮ হাজার কর্মীকে ফলস কেস দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক হিংসার শিকার হয়েছেন ১২০ জন কর্মী। এরাজ্যের পুলিশের একটাই কাজ বিজেপি কর্মীদের নিপীড়ন।
মুখ্যমন্ত্রীর বাঁকুড়া সফর নিয়ে বিঁধতেও দেখা গেছে বিজেপি রাজ্য সভাপতিকে। জঙ্গলমহলে তৃণমূল দলটা রয়েছে কিনা তা দেখতেই মমতা বাঁকুড়ায় এসেছেন বলে কটাক্ষ করেছেনে গেরুয়া শিবিরের এই নেতা। পাশাপাশি বিরিয়ানি খেয়ে অনশন করে আদাবাসীদের বাড়ির ডাল-ভাতের মর্যাদা তৃণমূলনেত্রী বুঝতে পারবেন না বলেও তীব্র শ্লেষ ঝড়িয়েছেন নিজের বাক্যবানে।