হঠাৎই রাজ্য ছাড়িয়ে দেশে বহু আলোচিত নাম আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বারলা। ২০১৯ থেকে সাংসদ থাকলেও হঠাৎই বিতর্কিত দাবি তুলে তিনি এখন আলোচনার কেন্দ্রে।
উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য হিসেবে ঘোষণার দাবি তুলেছেন তিনি। বিজেপি উত্তরবঙ্গে ভাল ফল করাতে তিনি উত্তরবঙ্গকে বঞ্চিত বলে দাবি করে পৃথক রাজ্যের দাবি জানিয়েছেন। তাঁর এই দাবিতে ভর করে বিভিন্ন সুপ্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলি ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কিছু বিজেপি নেতা জনবাবুকে সমর্থন করায় আগুনে ঘি পড়েছে।
কিন্তু হঠাৎ করে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আলোচিত নাম হলেও উত্তরবঙ্গের চা বলয়ে জন বারলা কিন্তু নতুন নন। এক সময় চা শ্রমিকদের দাবি দাওয়া নিয়ে যাঁরা লড়াই করেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিল জন বারলার নাম।
জন নিজেও এক সময় ছিলেন চা বাগানের সাধারণ কর্মী। তিনি সেই সময় থেকেই সাধারণ চা শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়ে দাবি-দাওয়া আদায়ে সরব হয়েছেন। ধীরে ধীরে নেতা হয়ে ওঠেন তিনি।
তাঁর চা বাগানেই বড়ো হয়ে ওঠা ৷ এক সময় তাঁকে দারিদ্র্যের কারণে ছাড়তে হয়েছিল পড়াশোনা ৷ তারপর থেকেই তিনি নেমে পড়েন চা বাগানের কাজে ৷ জলপাইগুড়ির লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানে শ্রমিকের কাজ করতেন তিনি ৷
২০০৭ সালে তিনি রাজনীতির আঙিনায় পা রাখেন। তার আগে কখনও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা কখনও ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করেন। যদিও সরাসরি কোনও দলেই যোগ দেননি তিনি।
এরপর পাকাপাকিভাবে দলীয় রাজনীতিতে যোগ দেন তিনি। ২০০৭ সালেই যোগ দেন অখিল ভারতীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদে। ক্রমশ প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন। তাঁর কিছু পদক্ষেপ দলের অন্যদের পছন্দ হয়নি। ফলে দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে। তবু মত বদল করতে তিনি ৭ বছর সময় নেন।
২০১৪ সাল থেকে বিজেপির ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেন জন বারলা ৷ ২০১৫ সালে তিনি দলে যোগ দেন। ২০১৬ সালের ভোটে নাগরাকাটা বিধানসভা আসনে দলের প্রার্থীও হন ৷ হেরে গিয়েছিলেন ৷ তবে নাগরাকাটায় দলীয় সংগঠনকে শূন্য থেকে বড় একটা জায়গায় নিয়ে যান তিনি ৷ এর জন্যই জনকে বিজেপির রাজ্য কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয় ৷
২০১৯ সালে তাঁকে ফের লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী করা হয়। এবার তিনি আগের ক্ষতি পুষিয়ে নেন। পরিষ্কার ব্যবধানে জিতে আসেন। হন সাংসদ। সাধারণ শ্রমিক থেকে হয়ে ওঠেন সাংসদ।
তবে সাংসদ হলেও ব্যক্তিগত জীবনে তিনি খুব একটা বদল আনেননি। চা বাগান কর্তৃপক্ষের দেওয়া কাঠের ভাঙা দোতলা বাড়িতেই তাঁর বড় হয়ে ওঠা ৷ লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে সাংসদ হয়েছেন ৷ তারপর শুধুমাত্র বাড়ি সারিয়েছেন। বাড়ি বদল করেননি। তাঁর পরিবারের অন্যরা অনেকেই এখনও চা বাগানে পাতা তোলার কাজ করেন।