কুষ্ঠ রোগীদের জন্য টিকার বন্দোবস্ত করে প্রশংসা কুড়োল শিলিগুড়ির ইউনিক ফাউন্ডেশন টিম। এমনিতেই নিজেদের মধ্যে নানা রকম কুণ্ঠা ও বিব্রতবোধ নিয়ে তাঁরা থাকেন।
ফলে সবার সঙ্গে এক লাইনে দাঁড়িয়ে তাঁরা টিকা কেন যে কোনও ধরণের কাজেই তাঁরা দ্বিধাবোধ করেন। ফলে তাঁদের ক্ষেত্রে টিকাকরণে সমস্যা দেখা দিচ্ছিল।
সমস্যার কথা কানে গিয়েছিল ইউনিক টিমের। এর আগেও তাঁরা নানা রকম উদ্যোগে শিলিগুড়ি ও আসপাশের এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
শিলিগুড়ি ছাড়িয়ে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার ইয়াস বিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে ছুটে গিয়েছেন। ফলে তাঁদের কাছে এ ধরণের উদ্যোগ নিতে উদ্যম ও জনবল কোনওটারই খামতি ছিল না।
খবর মিলতেই তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়লেন কুষ্ঠরোগীদের টিকাকরণের জন্য। এই উদ্যোগে শামিল হতে তাঁরা ডেকে নিলেন সামাজিক কাজ করে প্রায় কিংবদন্তীর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া করিমূল হককে।
ইতিমধ্যেই পদ্মশ্রী পেয়েছেন। পেয়েছেন অ্যাম্বুল্যান্স দাদার তকমা। তবু এক যে কোনও সামাজিক কাজে এক ডাকে হাজির হন তিনি। এদিনও এলেন। উৎসাহ যোগালেন।
প্রয়োজনে যে কোনও রকম সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি এবং ডাকলে আবার আসবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেন। তাঁর প্রতিশ্রুতিতে উৎসাহে টগবগ করে ফুটছিলেন উদ্যোক্তারাও।
অবশ্য শুধু করিমূলই নন, উত্তরবঙ্গ মেডিক্য়াল কলেজের চিকিৎসক ও সমাজকর্মী ডাঃ কল্যাণ খাঁ, প্রাক্তন বিধায়ক ও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন চিকিৎসক ডাঃ রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য উপস্থিত ছিলেন।
এদিন উদ্যোগে শামিল হন রাজ্যের প্রাক্তন পর্যটনমন্ত্রী তথা শিলিগুড়ি পুরনিগমের প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান গৌতম দেবও। এমন উদ্যোগ আরও নেওয়া হলে সমাজের খারাপ দিকগুলিকে ছাপিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রবিবার শিলিগুড়ি ইউনিক ফাউন্ডেশন টিমের উদ্যোগে ২৭ জুন বর্ধমান রোডের কালোয়ার ভবনে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কুষ্ঠরোগীদের টিকাকরণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পদ্মশ্রী করিমুল হক, পুর প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান গৌতম দেব, ডাক্তার কল্যাণ খাঁ, ডাক্তার রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য সহ অন্যান্যরা।
এই অতিমারীর সময় করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ইউনিক ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় এর আগে বিভিন্ন প্রান্তিক মানুষদের টিকাকরণ সম্পন্ন হয়েছে।
এদিন ৪০ জন কুষ্ঠরোগীরা কোভিশিল্ড নেন। পাশাপাশি অসহায় মানুষের জন্য দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা পরিষেবার লক্ষ্যে তাঁরা হাজির রয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনের তরফে শক্তি পাল।
তবে ভ্যাকসিন নিয়ে কলকাতায় বিতর্ক তৈরি হওয়ায় শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক , পুরনিগমের কমিশনার, পুর প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান, পুলিশ সকলকে সম্পূর্ণ তথ্য দেওয়া হয়।
ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচি সম্পর্কে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে কোথা থেকে ভ্যাকসিন আনা হয়েছে সমস্ত তথ্য আগাম জানিয়েই এই টিকাকরণ অনুষ্ঠানটি সম্পূর্ণ করা হয়েছে।
শক্তিবাবু জানান, ভাল কাজ করতে গিয়ে হিতে বিপরীত না হয়, তার জন্য আগাম সব রকম সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। কোথাও কোনও রকম ফাঁক রাখা হয়নি।
শুধু টিকা নয়, অক্সিজেন, খাবার, অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সমস্ত নিয়ে তাঁরা সারা বছর হাজির রয়েছেন। সেই সঙ্গে অবশ্য করোনা পরিস্থিতিতে তাঁরা বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন।
যে কোনও সময় যে কোনও মানুষ যদি তাঁদের সাহায্যের জন্য ফোন করে, তাহলে তাঁরা হাজির হয়ে যাবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তাঁরা।