বর্ষা বিদায় নিলেও নিম্নচাপ তৈরির বিরাম নেই। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস জগদ্ধাত্রী পুজোতেও দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রবল। ইতিমধ্যেই বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণাবর্ত গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। সেই নিম্নচাপ থেকেই জন্ম নেবে ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’, এমনটাই জানিয়েছে হাওয়া অফিস। ফলে আগামী সপ্তাহে বৃষ্টির সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
জগদ্ধাত্রী পুজোতে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে রাজ্যে। হাওয়া অফিস বলছে, আজ উত্তরবঙ্গে হালকা বৃষ্টি হতে পারে। অন্যদিকে দক্ষিণবঙ্গে আগামী সপ্তাহে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে।
বঙ্গোপসাগরের উপর ‘সাধারণ’ থেকে ‘গভীর’ হল নিম্নচাপ। ধীরে ধীরে তা উপকূলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নিম্নচাপের শক্তি যত বাড়ছে, তত সমুদ্রের উপর তার গতিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সোমবার এই নিম্নচাপ থেকে যে ঘূর্ণিঝড়টি তৈরি হবে, তার নাম হবে মন্থা। ‘প্রবল’ আকারে তা অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে আছড়ে পড়বে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। এর ফলে অন্ধ্রপ্রদেশ তো বটেই, তামিলনাড়ু, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশে ঝড়বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের উপর যে নিম্নচাপটি ছিল, তা গত ছ’ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে পশ্চিম-উত্তর পশ্চিম দিকে এগিয়েছে এবং গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আপাতত তা আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ৬৫০ কিলোমিটার পশ্চিমে, তামিলনাড়ুর চেন্নাই থেকে ৭৯০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ পূর্বে, অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম থেকে ৮৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে, অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাড়া থেকে ৮৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে এবং ওড়িশার গোপালপুর থেকে ৯৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে রয়েছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই গভীর নিম্নচাপ আরও পশ্চিম-উত্তর পশ্চিম দিকে সরবে এবং শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। তখন তার নাম হবে মন্থা। উত্তর-উত্তর পশ্চিমে সরতে সরতে ২৮ অক্টোবর, মঙ্গলবার সকালের মধ্যে ‘প্রবল’ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে মোন্থা। ২৮ তারিখ রাতে অন্ধ্রপ্রদেশের মছলিপত্তনম এবং কাকিনাড়ার কাছে কলিঙ্গপত্তনমের মধ্যবর্তী উপকূলে তা স্থলভাগে আছড়ে পড়বে। এই সময়ে উপকূলবর্তী এলাকায় ঝড়ের সর্বোচ্চ গতি থাকবে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। দমকা হাওয়ার বেগ পৌঁছে যেতে পারে ১১০ কিলোমিটারের গণ্ডিও।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তালিকায় রয়েছে হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম বর্ধমান, নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদ। এ ছাড়া, কলকাতার জন্যেও আবহাওয়া সংক্রান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কলকাতায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হতে পারে। সঙ্গে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে। বিক্ষিপ্ত ভাবে ভারী বৃষ্টি হতে পারে উত্তরবঙ্গের কিছু জেলায়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ল্যান্ডফল করবে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মন্থা। শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ল্যান্ডফল করবে কাকিনাড়াতে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্থলভাগে প্রবেশের প্রবল সম্ভাবনা। ল্যান্ড ফলের সময় গতিবেগ সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। ২৮ অক্টোবর মঙ্গলবার থেকে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। ২৭ তারিখের মধ্যে উপকূলে ফিরে আসতে পরামর্শ।
আজ মূলত শুষ্ক আবহাওয়া থাকবে দক্ষিণবঙ্গে। আংশিক মেঘলা আকাশ। উপকূলের কাছাকাছি আবহাওয়ার পরিবর্তন। সোমবার উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে জেলাতে বজ্রবিদ্যুৎসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস।
মঙ্গলবার ছট পুজোর দিনও হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে কলকাতায়। মঙ্গলবার বিকেল থেকে বৃষ্টি বাড়বে দক্ষিণবঙ্গে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে। সঙ্গে উপকূলের জেলাগুলিতে ৩০ থেকে ৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে বইতে পারে দমকা ঝোড়ো বাতাস।
বুধবার হাওড়া উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম এই ৬ জেলাতে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা। বৃহস্পতিবারেও ভারী বৃষ্টি হবে বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে।
রবিবার উত্তরবঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রবল। হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারে। কাল, সোমবার থেকে বুধবার বৃষ্টির সম্ভাবনা কম উত্তরবঙ্গে। তবে, বৃহস্পতি ও শুক্রবারে উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেই বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রবল। ভারী বৃষ্টি হতে পারে মালদা, উত্তর দিনাজপুর, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারে।
রবিবার সকাল থেকে কলকাতার আকাশ আংশিক মেঘলা থাকলেও আপাতত বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে ঘূর্ণিঝড় ল্যান্ডফলের সময়ে বৃষ্টি হতে পারে কলকাতায়। সোমবার রাতে আবহাওয়ার পরিবর্তন হবে। আংশিক মেঘলা আকাশ। বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা। মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা ও মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা শহরে। সঙ্গে দমকা ঝড়ো হাওয়া ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার হতে পারে।