scorecardresearch
 

Jiah Khan: ৮ বছর পরেও জিয়ার মৃত্যু রহস্যের কিনারা হল না!

২০১৮ সালে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে সুরজের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে সি বি আই। প্রশ্ন ওঠে, এত কিছু পরেও সুরজ পাঞ্চোলি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কী ভাবে? এই মামলার সঙ্গে নিঃশব্দে আরও একটি নাম উঠে আসে। তিনি সলমন খান। বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে, মামলা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। প্রভাবশালী বলেই কী এঁদের এত ছাড়, এত স্বাধীনতা?

Advertisement
সুরজ পাঞ্চোলি - জিয়া খান সুরজ পাঞ্চোলি - জিয়া খান
হাইলাইটস
  • জিয়ার সুইসাইড নোটে লেখা ছিল, 'আমি জানি না কেন ঈশ্বর আমাদের দেখা করালেন। যে যন্ত্রণা, ধর্ষণ, দুর্ব্যবহার ও নির্যাতনের শিকার আমি হয়েছি, তা তো হওয়ার কথা ছিল না।
  • দিন দিন কেবল ভয় পেয়েছি, এই বোধ হয় তুমি মারবে বা বকাবকি করবে। নারী আর পার্টি নিয়ে তোমার জীবন। আমার জীবনে ছিলে শুধু তুমি আর ছিল আমার কাজ।
  • আমার সঙ্গে প্রতারণা করার পরও আমি তোমার জন্য ছিলাম। ভীষণ কষ্ট পেলেও আমাদের সন্তানকে আমি গর্ভপাত করিয়েছিলাম।… তুমি বলেছিলেন এক বছরের মধ্যে আমাদের বাগদান হবে। কিন্তু তুমি কথা রাখনি।

মানসিক অবসাদ আর তার জেরেই আত্মহত্যা। হ্যাঁ, জিয়া খানের (Jiah Khan) মৃত্যুর তদন্তে নেমে এমনটাই চার্জশিটে লিখেছে CBI. কিন্তু মানসিক অবসাদ কেন, সে ঘটনায় পিছনে তার আগের কয়েক বছরের ইতিহাস রয়েছে। যার সবিস্তার বয়ান পাওয়া যায় জিয়ার সুইসাইট নোটে। মৃত্যুর আগে বয়ফ্রেন্ড অভিনেতা সুরজ পাঞ্চোলি (Sooraj Pancholi) সম্পর্কে দীর্ঘ বয়ান লিখে যান জিয়া।

ঠিক কী লিখেছিলেন জিয়া, একবার চোখ রাখা যাক সে দিকে। জিয়ার সুইসাইড নোটে লেখা ছিল, 'আমি জানি না কেন ঈশ্বর আমাদের দেখা করালেন। যে যন্ত্রণা, ধর্ষণ, দুর্ব্যবহার ও নির্যাতনের শিকার আমি হয়েছি, তা তো হওয়ার কথা ছিল না। কোনও ভালোবাসা বা অঙ্গীকার তোমার মধ্যে দেখিনি। দিন দিন কেবল ভয় পেয়েছি, এই বোধ হয় তুমি মারবে বা বকাবকি করবে। নারী আর পার্টি নিয়ে তোমার জীবন। আমার জীবনে ছিলে শুধু তুমি আর ছিল আমার কাজ। বেঁচে থাকলে তোমাকে আমি ব্যাকুলভাবে চাইতাম। তাই নিজের ১০ বছরের পেশা ও স্বপ্নকে চিরবিদায় জানালাম। তোমাকে বলিনি, কিন্তু তোমার আরও একটি বিষয় আমার কানে এসেছে। তুমি আমার সাথে প্রতারণা করেছ।'

জিয়া আরও লেখেন, 'আমার সঙ্গে প্রতারণা করার পরও আমি তোমার জন্য ছিলাম। ভীষণ কষ্ট পেলেও আমাদের সন্তানকে আমি গর্ভপাত করিয়েছিলাম।… তুমি বলেছিলেন এক বছরের মধ্যে আমাদের বাগদান হবে। কিন্তু তুমি কথা রাখনি।'

এটা যদি যথেষ্ট না হয়, এর সঙ্গে জিয়া এবং সুরজ-এর হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট দেখলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। এই চ্যাটের বয়ান তদন্তকারী সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছিলেন জিয়ার মা রাবিয়া খান। চ্যাটের ১০টি মেসেজ যা সুরজ জিয়াকে পাঠিয়েছিলেন, তার বয়ান এ রকম:

 

রাত ১০টা ৫৬: যদি কথা বলতে চাও, তা হলে ফোন করো।

Advertisement

রাত ১০টা ৫৬: তুমি চলে যাও।

রাত ১০টা ৫৭: আমার জীবনকে তুমি জেলখানা করে তুলেছ। আমি কেবল ক… (কোনও বান্ধবীর নাম)-এর সঙ্গে খেতে যেতে চেয়েছিলাম, ন…(জিয়া ও সুরজের কমন বান্ধবীর নাম)-এর সঙ্গে দেখা করে ওকে তোমার নতুন অর্ডারটা দিতে চেয়েছিলাম। ইউ ফা** ক্রিপ, তুমি আমার বিশ্বস্ততা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছ! আমরা এক সঙ্গে চলব কী করে ইফ ইউ ডু দিস শি*। আমি সব সময়ে তোমাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করি। দয়া করে আমাকে একা ছেড়ে দাও। 

রাত ১০টা ৫৭: ইউ ফা** ইট আপ ফর ইউ।

রাত ১০টা ৫৮: আমি ভীষণ অসুখী।

রাত ১১টা ০৩: তু‌মি ভাবছ, আমি তোমার সাফল্য দেখে ঈর্ষান্বিত! হা হা হা হা! তুমি অত্যন্ত অকৃতজ্ঞ। 

রাত ১১টা ০৩: ন…-এর সঙ্গে কথা বলো এবং নিজেই জেনে নাও ঠিক কী ঘটেছে। আমি বৃহস্পতিবার তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। থ্যাঙ্কস ফর ফা** ইট আপ। সব সত্যি জানার পরেই আমার সঙ্গে কথা বলবে। তার আগে আমার সঙ্গে কথা বলার বিষয়ে স্বপ্নেও ভেবো না। তুমি আমার উপর নজর রাখলে কী ভাবে! ন…-এর সঙ্গে! দিস ইজ ফা** আপ!

রাত ১১টা ০৮: যত দ্রুত সম্ভব আমাকে ফোন করো। ইটস আর্জেন্ট। 

রাত ১১টা ২১: আমাকে এক্ষুণি ফোন করো। 

রাত ১১টা ২১: যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই।

 

তদন্তেও এ কথা উঠে এসেছিল এবং CBI চার্জশিটে উল্লেখও করেছিল, জিয়া মৃত্যুর কিছু দিন আগে গর্ভবতী হয়ে পড়েন। শুধু তাই নয়, সুরজ নিজের হাতে সেই ভ্রূণ টেনে বার করে আনেন জিয়ার শরীর থেকে এবং কমোডে ফেলে ফ্লাশ করে দেন। চার্জশিটে একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে দাবি করা করা হয়েছে, জিয়া যখন চার সপ্তাহের গর্ভবতী তখন তিনি বিষয়টি জানান তাঁর বয়ফ্রেন্ড সুরজ পাঞ্চোলিকে। এরপর তাঁরা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেয়ে গর্ভপাতের চেষ্টা করেন। কিন্তু, তাতে গর্ভপাত না হওয়ায়, দুবার সাধারণ ডাক্তার পাল্টে অবশেষে এক গায়নোকোলজিস্টকে দেখান জিয়া।

তাঁর প্রেসক্রাইব করা কড়া ডোজের ওষুধ খেয়ে একদিন জিয়ার ব্লিডিং শুরু হয়। তিনি সঙ্গে সঙ্গে সুরজকে বলেন হাসপাতালে নিয়ে যেতে। প্রচণ্ড বেদনায় ছটফট করছিলেন জিয়া। তাঁকে অপেক্ষা করতে বলে সেই মহিলা চিকিত্‍‌সককে ফোন করেন সুরজ। চিকিত্‍‌সক অবিলম্বে জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করতে বলেন। তিনি সুরজকে বলেছিলেন, গর্ভপাত হয়ে গিয়েছে, কিন্তু ভ্রূণটি তখনও জিয়ার শরীর থেকে বের হয়নি, সেজন্যই প্রচণ্ড পরিমাণে রক্তপাত হচ্ছে। কিন্তু, ওই অবস্থায় জিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁদের সম্পর্কের কথা জানাজানি হয়ে যাবে, যা তাঁর কেরিয়ারে প্রভাব ফেলতে পারে, এই আশঙ্কায় ডাক্তারের পরামর্শে কান দেননি সুরজ। তিনি নিজে হাতে জিয়ার শরীর থেকে ভ্রূণটি টেনে বের করে এনে, শৌচাগারে ফেলে দেন বলে চার্জশিটে অভিযোগ করা হয়েছে।

তদন্তের গতি প্রকৃতি নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় ২০১৬ সালে জিয়ার মা রাবিয়া খান একটি ব্রিটিশ ফরেন্সিক সংস্থাকে জিয়ার মৃত্যুর রিপোর্ট তৈরি করতে বলেন। ব্রিটিশ সংস্থা ফরেন্সিক হেল্থকেয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের নামে এই সংস্থার বিশেষজ্ঞ পাইন জেমস জিয়ার মেডিক্যাল রিপোর্ট, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট, তাঁর ঘরের ছবি, দেহের ছবি ও সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে সিদ্ধান্তে পৌঁছান, জিয়ার মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না। পাইনের দেওয়া রিপোর্টের সঙ্গে রাজ্য ফরেন্সিক রিপোর্টের বিস্তর ফারাক। যেমন, জিয়ার নীচের ঠোঁটের ক্ষত। রাজ্য ফরেন্সিকের রিপোর্ট অনুযায়ী এর ব্যাখ্যা, আত্মহত্যার মুহূর্তে দাঁতে দাঁত লেগে যাওয়ার কারণে ওই ক্ষত হয়েছে। পাইনের রিপোর্টে বলা হচ্ছে, মুখে জোরে ঘুষি মারা হলে যে ক্ষত হয়, ওটা তেমন ক্ষত। আবার জিয়ার গলায় ফাঁসের দাগ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পাইন। তাঁর মতে, সাধারণ ওড়না গলায় জড়ালে ওই দাগ হয় না। যেমন জিয়ার গলায় ছিল। রাজ্য ফরেন্সিকের দেওয়া জিয়ার নীচের চোয়ালের ক্ষতের ব্যাখ্যাতেও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন পাইন।

Advertisement

২০১৮ সালে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে সুরজের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে সি বি আই। প্রশ্ন ওঠে, এত কিছু পরেও সুরজ পাঞ্চোলি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কী ভাবে? তিনি জামিনও পেয়েছিলেন সপ্তাহ তিনেকের মধ্যে। এই মামলার সঙ্গে নিঃশব্দে আরও একটি নাম উঠে আসে। তিনি সলমন খান (Salman Khan)। ২০১৫ সালে সি বি আইয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে মুম্বইয়ে তদন্তে সাহায্য করতে আসেন রাবিয়া খান। সে সময় তদন্তকারী অফিসার তাঁকে জানান, সলমন খান ক্রমাগত তদন্তে হস্তক্ষেপ করছেন। রাবিয়া বলেন, '২০১৫ সালে জিয়ার মৃত্যুর তদন্তে সহযোগিতা করতে এক CBI অফিসারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে লন্ডন থেকে ভারতে গিয়েছিলাম। ওই অফিসার আমায় বলেছিলেন, সলমন খান রোজ ওদের ফোন করে ওকে (সুরজ) হেনস্থা না করার আবেদন করতেন। সলমন ওদের (CBI)-কে বলেছিলেন ছেলেটার উপর অনেক বিনিয়োগ করেছি, ওকে জেরা করবেন না।'

২০১৫ সালে সুরজের কেরিয়ারের গাড়ি নিজের হাতে স্টার্টও দিয়েছিলেন 'বলিউডের ভাই' সলমন খান। যদিও সেই স্টার্টে গাড়ি বেশিদূর এগোয়নি। সলমন নিজেও একাধিক গুরুতর মামলায় অভিযুক্ত। যার মধ্যে পশু হত্যা এবং গাড়ির নীচে ফুটপাথে শুয়ে থাকে মানুষদের পিষে দেওয়ার মতো অভিযোগ রয়েছে। সহমর্মীতা কিনা জানা নেই, তবে সুরজের প্রতি সলমনের সমর্থন কিন্তু প্রকাশ্যই ছিল। বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে, মামলা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। প্রভাবশালী বলেই কী এঁদের এত ছাড়, এত স্বাধীনতা?

উত্তর কে দেবে জানা নেই।

 

Advertisement