বাগুইআটি জোড়া খুনে (Baguiati Twin Murder) অবশেষে গ্রেফতার মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র চৌধুরী। শুক্রবার সকাল ন'টা নাগাদ হাওড়া স্টেশন থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ট্রেন ধরে ভিন রাজ্য়ে পালানোর চেষ্টা করছিল বলে খবর। পুলিশের ধারণা সম্ভবত নিজের দেশের বাড়িতে গা ঢাকা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল সত্যেন্দ্রর। এ নিয়ে এই খুনের ঘটনায় পুলিশ মোট ৫ জনকে গ্রেফতার করল। সেখানে আগে থেকেই সাধারণ পোশাক পরে লুকিয়ে ছিল বিধাননগর পুলিশ। তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়ে বিধাননগরে জেরা করা হচ্ছে।
বাগুইআটির দুই স্কুল পড়ুয়া অতনু দে (Atanu Dey) ও অভিষেক নস্করের (Abhishek Naskar)-রকে গত ২২ অগাস্ট থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপর বাগুইআটি থানায় অভিযোগ জানানো হয়। অতনুর বাবা, পুলিশকে জানান, তিনি একাধিকবার মেসেজ মেয়েছেন। মুক্তিপণের জন্য টাকাও চাওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছিল, এই জোড়া অপহরণ এবং খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মৃত এক ছাত্রেরই প্রতিবেশী, সত্যেন্দ্র চৌধুরী, যার সঙ্গে নিহত ছাত্রের পারিবারিক সম্পর্ক খুব ভাল ছিল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এই ঘটনায় অভিজিত্ বসু নামে এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছিল প্রথমে। তাকে জেরা করেই সামনে আসে গোটা ঘটনা। অভিজিৎ-সহ বাকি অভিযুক্তদের জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, কয়েকদিন আগে বিধাননগর এলাকায় অভিজিতের সঙ্গে একটি হোটেলে দেখা করে মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র। সেই হোটেল কাজ করত অভিজিৎ। বাকি তিনজন তাদের সঙ্গ দেয়। পরে ওই হোটেলেই হত্যার ব্লু প্রিন্ট তৈরি করা হয় বলে জানা গিয়েছে। যদিও প্রধান টার্গেট ছিল অতনুই। কিন্তু সেদিন অতনুর সঙ্গে পিসতুতো ভাই অভিষেক ছিল। তাকেও খুন হতে হয়।
আরও পড়ুনঃ Skin Glow At Home: এই ফেসপ্যাক রাতে মুখে লাগান, সকালে গ্ল্যামার ফেটে পড়বে
পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাথমিক তদন্ত থেকে এখনও জানা গেছে, অতনু বাইক কেনার জন্য মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র চৌধুরীকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিল। তবে পরে আরও টাকার দাবি করে সত্যেন্দ্র। তারপর ২২ অগাস্ট বাইক কেনার জন্য অতনু দে ও অভিষেক নস্করকে ডেকে নিজের সঙ্গে নিয়ে যায় সত্যেন্দ্র চৌধুরী। তারপর থেকেই অতনু ও অভিষেক নিখোঁজ হয়ে যায়। পুলিশের দাবি এরপরেই খুন করা হয় ওই দুই ছাত্রকে৷ তবে ঠিক কী কারণে খুন তা কেউ জানে না। জেরা করা তাই জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
এলাকা সূত্রে খবর, সত্যেন্দ্র উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। বাগুইআটির ওই এলাকারই এক যুবতীকে বিয়ে করেছিল সে। এলাকায় জামাই নামে পরিচিত ছিল সত্যেন্দ্র। মৃত অতনুর বাড়ির ঢিলছোড়া দূরত্বেই সত্যেন্দ্রর শ্বশুরবাড়ি। জানা গিয়েছে, এলাকায় মিষ্টভাষী হিসাবে পরিচিত থাকলেও বিপুল দেনা ছিল সত্যেন্দ্রর। বাইক কেনাবেচার দালালি করত সত্যেন্দ্র। পুরনো বাইক বিক্রি কিংবা সেকেন্ড হ্যান্ড (ব্যবহৃত) বাইক কেনার দালালি করত সত্যেন্দ্র। অতনুর সঙ্গে সেই সূত্রেই যোগাযোগ হয় সত্যেন্দ্রর।
আরও পড়ুনঃ Shanidev 7 Lucky Signs: শনিদেবের কৃপায় আসছে সুসময়, বুঝবেন এই ৭ লক্ষণে
জানা গিয়েছে, বাইক কেনার জন্য ৫০ হাজার টাকা সত্যেন্দ্রকে দিয়ে দেয় অতনু। কিন্তু সেই টাকা আর ফেরত পায়নি সে। পরে তা চাওয়া হলে অতনু এবং অভিষেককে নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে যায় সত্যেন্দ্র। অতনুর বাবা জানায়, "বাড়িতে একটি বাইক ছিল। কিন্তু ছেলের আরেকটি বাইক কেনার ইচ্ছা ছিল। আমাদের থেকে একটা টাকাও নেয়নি। গেম খেলেই ওই টাকা কামিয়েছিল সে। সেই জমানো টাকা পুরোটাই তুলে দিয়েছিল প্রতিবেশী সত্যেন্দ্রকে।" কিন্তু তার পরিণতি যে এমন হবে তা কেউই বুঝতে পারেননি। জোড়া খুনের এই ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে সিআইডি। তিনজনকে গ্রেফতার করা হলেও মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র এখনও অধরা। বারবার ঠিকানাও বদল করছিল। অবশেষে এদিন তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।