scorecardresearch
 

দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা চিকিৎসক কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মদিনে শ্রদ্ধা গুগলের

প্রথম বাঙালি, প্রথম ভারতীয় তো বটেই প্রথম দক্ষিণ এশিয় হিসেবে মহিলা চিকিৎসক কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় একটা আধো পরিচিত একটা নাম। সম্প্রতি কিছু টিভি সিরিয়ালের বিষয় হিসেবে তাঁকে তুলে ধরায় কিছু লোক তাঁকে চিনেছে। ভারতে স্বাধীন মহিলা হিসেবে তাঁর অবদান স্মরণ করে তাঁর ১৬০ তম জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানিয়েছে গুগল ডুডল।

Advertisement
কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়
হাইলাইটস
  • প্রথম মহিলা হিসেবে ভাঙেন অনেক অচলায়তন
  • কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের খোঁজ রাখতেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলও
  • মৃত্যুর দিনও সফল অস্ত্রোপচার করেন

কাদম্বিনীকে শ্রদ্ধা গুগল সহ দেশের অনেকের

প্রথম বাঙালি ও ভারতীয় মহিলা চিকিৎসক কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়কে তার জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানালো গুগল ডুডল। রবিবার ১৮ জুলাই কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় এর ১৬০ তম জন্মদিন। চিকিৎসাশাস্ত্রে এবং মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে আসার পিছনে অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি। গুগল এর পাশাপাশি দেশজুড়ে তার অবদানকে স্মরণ করেছেন বিশিষ্টজনেরা।

কাদম্বিনীর শুরু

ব্রিটিশ ভারতে ১৮৬১ সালে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির ভাগলপুরে জন্মগ্রহণ করেন কাদম্বিনী বসু। পশ্চিমী চিকিৎসাশাস্ত্রে ক্রমশ পারদর্শী হয়ে ওঠা এই মহীয়সী নারী, প্রথম মহিলা যিনি ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজে ১৮৮৪ সালে ২৩ বছর বয়সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। সেখানে পড়াশোনা শেষ করে তিনি স্কটল্যান্ড চলে যান এবং ফিরে এসে ভারতে এবং কলকাতায় নিজের স্বাধীন চিকিৎসা ব্যবসা শুরু করেন।

বাবাই প্রেরণা

ব্রাহ্ম সমাজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ব্রজকিশোর বসুর নিজের বোন ছিলেন কাদম্বিনীদেবী। তিনি ভাগলপুরে জন্মগ্রহণ করলেও তার পরিবারের মূলসূত্র ছিল অধুনা বাংলাদেশের বরিশাল জেলার চাঁদসিতে। তার পিতা ভাগলপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি এবং অভয়চরণ মল্লিক মিলে ভাগলপুরে নারী শিক্ষার প্রসারে আন্দোলন শুরু করেন।

শুরু হয় মহিলা হিসেবে অচলায়তন ভাঙার

সে সময়ে উচ্চবর্গীয় বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে মহিলাদের পড়াশোনার চল ছিল না। কাদম্বিনী সে সময়ে বাবার উৎসাহে এবং উদ্যোগে বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। পরে তিনি বেথুন স্কুলে যোগদান করে পরে তিনি বেথুন কলেজ থেকে প্রথম মহিলা স্নাতক হিসেবে ব্রিটিশ ভারতে উত্তীর্ণ হন। নিজের স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করার পাশাপাশি তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রে নিজের উৎসাহ দেখিয়েছিলেন এবং ঠিক করেন যে পরবর্তীতে চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করবেন। তারই মাঝে ১৮৭৫ সালে মাদ্রাজ মেডিকেল কলেজ মহিলাদের ভর্তি নেওয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ শুরু করে। সে সময় ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজে মহিলাদের পড়ার অনুমতি ছিল না। তার স্বামী দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় এবং তিনি উদ্যোগ নিয়ে সেই পরিস্থিতি পরিবর্তনের উদ্যোগ নেন এবং প্রথম ছাত্রী হিসেবে ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজে যোগ দেন।

Advertisement
কাদম্বিনীর বাড়ি

ছবি সৌজন্য : উইকিপিডিয়া

ফ্লোরেন্স টাইটিঙ্গেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন

পড়াশুনা শেষ করে তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম স্বাধীন প্র্যাকটিস করা মহিলা চিকিৎসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপরই দ্রুত তিনি ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল এর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ১৮৮৮ সালে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল লিখেছিলেন তাঁর সম্বন্ধে। কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য চিঠি লিখেন নিজের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে।

তাঁকে দেখে মহিলারা বুকে বল পান

কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় এর স্বাধীন চিকিৎসক হিসেবে প্রচেষ্টা গোটা দেশে এশিয়ার মধ্যে মহিলাদের পড়াশোনা, চাকরির ক্ষেত্রে এবং নিজের প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটা নতুন দিক খুলে দিল। তাঁকে দেখে এরপর বেশকিছু মহিলা এগিয়ে আসেন। যদিও পথ সহজ ছিল না। তবে ধীরে ধীরে বহু বছরের অচলায়তন ভাঙতে থাকে।

ইংল্যান্ড থেকে তিনটি ডিপ্লোমা হাসিল করেন

পাশাপাশি লেডি ডাফরিন মহিলা হাসপাতলে স্বাধীন চিকিৎসক হিসেবে তিনি যোগ দেন। সে সময় তাঁর এমবি ডিগ্রি ছিল না। তিনি বুঝতে পারেন তাঁকে আরও বেশি সক্ষম এবং শিক্ষিত হতে হবে বিষয়ে। না হলে তাঁর পুরুষ সহকর্মীদের শ্রদ্ধা তিনি অর্জন করতে পারবেন না। তিনি বিষয়টি বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গেই ইংল্যান্ড পাড়ি দেন। ১৮৯৩ সালে তিনি ট্রিপল সার্টিফিকেট জোগাড় করেন। এডিনবরার পাশাপাশি গ্লাসগো এবং ডাবলিন থেকেও মোাট তিনটি ডিপ্লোমা হাসিল করেন।

জাতীয় কংগ্রেসেও যোগ দেন

১৯৮৩ সালে তিনি এডিনবরায় বারবারা কলেজ অব মেডি সিন ফর ওমেন্স এ ভর্তি হন। আগে থেকেই তাঁর একাধিক চিকিৎসা শংসাপত্র থাকলেও তিনি সেখানে ট্রিপল ডিপ্লোমা নিয়ে লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়ে তিনি ১৮৯৫ সালে নেপাল চলে যান। সেখানে নেপালি মনার্কে সামসের জং বাহাদুর রানার মায়ের চিকিৎসা করেন। তিনি সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম মহিলা ডেলিগেটের মধ্যে অন্যতম হিসেবে যোগ দেন ১৮৮৯ সালে। ১৯০৬ সালে তিনি ওমেন্স কনফারেন্স আয়োজন করেন কলকাতায়। বাংলা ভাগ হয়ে যাওয়ার পর তিনি কলকাতা মেডিকেল মহিলাদের ছাত্রী হিসেবে যোগ দেওয়ার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যান।

পরিবার ও কাদম্বিনী

কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়কে বিয়ে করেন ১৮৮৩ সালে। ১১ দিন পরই তিনি ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজে যোগ দেন তাঁর আট ছেলে মেয়ে ছিল। তাঁর মধ্যে দুজন অবশ্য দত্তক নেওয়া। তিনি সুঁচ সুতোর কাজেও পারদর্শী ও দক্ষ ছিলেন। ১৯৩০ সালে তিনি অসুস্থ হয়ে মারা যান। মারা যাওয়ার আগেও তিনি একটি অস্ত্রোপচারে অংশ নেন এবং সফলভাবে অস্ত্রোপচার করেন।

মহিলা আন্দোলনের পুরোধা

সমসাময়িক কাজকর্মের জন্য তাকে প্রবল বাধা এবং বিপত্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে প্রথম মহিলা হিসেবে। স্বাধীন পেশাদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে তাকে প্রচুর বাধা পেতে হয়েছে। পথ সহজ ছিল না। তারপরও স্বামী এবং বাবার অনুপ্রেরণায় তিনি গোটা দক্ষিণ এশিয়ার মহিলাদের সামাজিক অবস্থান পরিবর্তন সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন।

এখনও প্রাসঙ্গিক, তাঁকে নিয়ে তৈরি টিভি সিরিয়াল

তাকে নিয়ে স্টার জলসায় প্রথমা কাদম্বিনী বলে একটি ডেইলি সোপ চালু হয় দুই হাজার কুড়ি সালে হটস্টার ইউ তা দেখার উপায় রয়েছে আরও একটি বাংলা টেলি সিরিয়াল কাদম্বিনী বলে জি বাংলা তে দেখানো হয় মহিলা চিকিৎসক হিসেবে আনন্দিবাই যশি এর চেয়ে অনেক বেশী এবং প্রথম হিসেবে তিনি অবদান রাখলেও তিনি গোটা বিশ্বে তো বটেই দেশের কাছেও অনেক কম পরিচিত।

Advertisement

 

Advertisement