আসন্ন দুর্গাপুজো উপলক্ষে এ বছর ভারতে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ মাছ রফতানি করবে বাংলাদেশ। গত সোমবার বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রক এ–সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে। ভারতে শর্তসাপেক্ষে ইলিশ রফতানির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
দুর্গাপুজো উপলক্ষে ভারতের অনুরোধে সরকার এবার ১২০০ টন ইলিশ রফতানির অনুমতি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
দুর্গাপুজো উপলক্ষে প্রতিবছরই ইলিশ রফতানি করে বাংলাদেশ। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের ইলিশের চাহিদা বেশি।
ইলিশ রফতানির আগে দেশের চাহিদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'প্রতিবেশী দেশের অনুরোধ থাকায় কিছু পরিমাণ ইলিশ পাঠাতে হচ্ছে, তবে এবার কম পরিমাণে এবং তুলনামূলক বেশি মূল্য ধরা হয়েছে।'
ফরিদা আখতার বলেন, 'এবারও দুর্গাপুজো উপলক্ষে ভারত বারবার ইলিশ পাঠানোর জন্য অনুরোধ করছে। সে কারণে ১২'শ মেট্রিক টন ইলিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। একদিকে দুর্গাপুজো, অন্যদিকে তারা আমাদের প্রতিবেশী। সবকিছু মিলিয়ে আমরা ইলিশ মাছ দিতে বাধ্য হয়েছি।'
ভারতে ইলিশ রফতানি করা হবে- এমন ঘোষণার পর চাঁদপুরে ইলিশের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এতে সাধারণ মানুষের ইলিশ কেনা এখন পুরোপুরি নাগালের বাইরে।
রাজ্যের ফিস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ জানিয়েছেন, সোমবার থেকেই বাংলাদেশের ইলিশ এরাজ্যে ঢুকতে শুরু করতে পারে। এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। কারণ, এর মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের সেতু আরও মজবুত হবে।
তিনি জানান, গতবার ২৪২০ মেট্রিক টন ইলিশ পাঠানোর কথা থাকলেও শেষপর্যন্ত ৫৭৭ মেট্রিক টন ইলিশ বাংলাদেশ থেকে এরাজ্যে এসেছিল। কারণ সময়টা খুব কম পাওয়া গিয়েছিল। সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদের কথায়, 'এবার সময়টা যেহেতু বেশি পাওয়া গিয়েছে সেজন্য আমাদের চেষ্টা থাকবে যতটা সম্ভব ইলিশ মাছ এদেশে নিয়ে আসার।'
স্থল বন্দর দিয়েই মাছ বাংলাদেশ থেকে এদেশে নিয়ে আসা হয়। উত্তর ২৪ পরগণা জেলার পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ট্রাকে করে আসা ইলিশ নিয়ে আসা হয় হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন পাইকারি মাছ বাজারে। সেই ইলিশ গোটা রাজ্যে নিয়ে যান খুচরো বিক্রেতারা। এবছর বাংলাদেশের ইলিশ কত দামে বিক্রি হতে পারে সেই প্রশ্নে ফিস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর সম্পাদক বলেন, 'এক কেজি ওজনের ইলিশ পাইকারি বাজারে ১৬০০ টাকার কাছাকাছি পড়বে।' সেই মাছ এবার খুচরো বিক্রেতারা তাঁদের মতো করে বিক্রি করবেন। ধারণা করা হচ্ছে কেজি প্রতি ২০০০ বা ২২০০ টাকা দামে বিক্রি হবে।
২০২৪ সালে বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনের পর পুজো উপলক্ষে বাংলাদেশের ইলিশ এদেশে আসা নিয়ে একটা দোলাচল তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের সরকার শেষপর্যন্ত ইলিশ মাছ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু ২৪২০ মেট্রিক টন ইলিশ এদেশে পাঠানোর কথা থাকলেও শেষপর্যন্ত তার অনেক কম পরিমাণ ইলিশ এদেশে আসে।
বাজারে যদিও এইমুহুর্তে ছেয়ে গিয়েছে গুজরাতের ইলিশে। এরাজ্যের মৎস্যজীবীরা এবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য সেভাবে গভীর সমুদ্রে যেতে পারেননি। বারবার দুর্যোগ তাঁদের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষার সময়ে যেহেতু বাজারে ইলিশের চাহিদা থাকে তুঙ্গে সেজন্য এবছর ব্যবসায়ীরা মুম্বই ও গুজরাতের ইলিশ দিয়ে সেই ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করেছেন।কিন্তু তাতে বাজার ইলিশ মাছে ভরলেও ক্রেতার মন ভরেনি। কারণ স্বাদের তারতম্য।
অনেকেই জানিয়েছেন, ইলিশ মাছ রান্না করার সময় যে পরিচিত গন্ধ পাওয়া যায় গুজরাতের ইলিশে সেই গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আশার কথা, আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ায় ফের ট্রলার নিয়ে সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছেন মৎস্যজীবীরা। আশা করা যায়, তাঁরা ট্রলার ভর্তি করেই ফিরবেন।