ঢালিউডে অন্যতম অভিনেত্রী পরীমনি নানা কারণেই বরাবরই আলোচিত-বিতর্কিত হয়েছেন। বুধবার র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে তার অন্ধকার জগতে জড়ানো নিয়ে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে।
বুধবার রাতে ঢাকার বনানীর বাড়ি থেকে অভিনেত্রীকে গ্রেফতার করা হয়। তার বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হয়। পরীমনির আলিশান বাড়ির এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে মদ নেই। তার কাছে দেশি-বিদেশি নামিদামি ব্র্যান্ডের মদ ছিল, যা বাংলাদেশে খুব কমই আমদানি হয়।
নায়িকা পরীমনির উত্থান কিন্তু সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। হতদরিদ্র ঘরের মেয়ে সামসুন্নাহার ঢাকায় এসে পরীমনি নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। অভিনয়ের তেমন কিছু জানা না থাকলেও একের পর এক সিনেমায় প্রধান চরিত্রে ডাক পড়ে তার।
২০১৪ সালে সিনেমা জগতে আসেন। বছর খানেকের মধ্যে পরীমনি ২০টির বেশি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হন। নায়িকা হিসাবে রাতারাতি তারকা বনে যান তিনি। অঢেল টাকা আর অভিজাত জীবন যেন স্বেচ্ছায় ধরা দেয় তার হাতে। দামি গাড়ি, কোটি টাকার ফ্ল্যাট, মূল্যবান অলঙ্কার কি নেই তার।
সূত্র বলছে, সিনেমা শুটিংয়ের আড়ালে পরী মূলত প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠ হতেই বেশি পছন্দ করতেন। রাজধানী ঢাকার পাঁচতারা হোটেলে তাকে লাস্যময়ী ভঙ্গিতে প্রায়শই দেখা যেত। প্রায় প্রতিদিনই গভীর রাত পর্যন্ত পার্টি শেষে মদ্যপ অবস্থায় বের হতেন নায়িকা।
এছাড়া পরীমনি চেইন স্মোকার। নায়িকার নিয়মিত মদ্যপানের বিষয়টিও কারো অজানা নয়। তার ফ্ল্যাটে বিদেশি সিগারেট ও মদের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। বলা যায় ছোটখাটো বার। তার ফ্ল্যাট থেকে রাশিয়ান ভদকা, জিন, টাকিলা, হুইস্কি ও বহু মূল্যবান রেড ওয়াইন উদ্ধার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে পরীমণি জানান, ২০১৬ থেকে তিনি নিয়মিত অ্যালকোহল সেবন করেন। এমনকি ভয়ঙ্কর মাদক এলএসডি ও আইসও সেবন করতেন।
সূত্র বলছে, কয়েকটি ব্যাঙ্কে পরীর মোটা অঙ্কের টাকা রয়েছে। যার বেশিরভাগই তিনি পেয়েছেন শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে। চলচ্চিত্র জগতের আড়ালে পরী নাম লেখান নিষিদ্ধ পর্ন ব্যবসায়। অঢেল টাকার নেশা তাকে টেনে নামায় অন্ধকার জগতে।
এজন্য পরী তার ঘনিষ্ঠ মডেলদের মাধ্যমে একটি চক্র গড়ে তোলেন। উঠতি মডেল এবং নায়িকাদের পর্নছবি তুলে পাঠানো হতো হাই-প্রোফাইলদের কাছে। তার মাধ্যমে অনেকে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হন। পরীর ঘনিষ্ঠদের তালিকায় আছেন- পুলিশ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, আমলা, রাজনীতিবিদ-সহ অনেক প্রভাবশালীর নাম। এদের কেউ কেউ দেশের বাইরে পরীর সঙ্গে ঘুরতে যান। জানা যাচ্ছ, এক বেসরকারি ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান তাকে হ্যারিয়ার গাড়ি উপহার দেন।
পরীমনিকে গ্ল্যামার জগতে নিয়ে আসেন রাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার নজরুল ইসলাম রাজ। সিনেমায় নাম লেখানোর আগে দীর্ঘদিন তার কাছেই থাকতেন পরী।
র্যাব বলছে, পরীমনি ছাড়াও ঢাকার শোবিজ জগতের ডজনখানেক মডেল-অভিনেত্রী নিষিদ্ধ পর্ন ব্যবসায় জড়িত।
পরীর ব্যক্তিগত জীবনও রহস্যে ঘেরা। পরিচালক কামরুজ্জামান রনিকে বিয়ে করেছিলেন পরী। সেই বিয়ের স্থায়ীত্ব ছিল মাত্র ৫ মাস। এর আগে এক পত্রিকার বিনোদন সাংবাদিকের সঙ্গে তার বিয়ের খবরের গুঞ্জন ছড়িয়েছিল। কখনও অবশ্য ওই বিয়ের ব্যাপারে মুখ খোলেননি তিনি।
তবে গ্ল্যামার জগতে আসার আগেও পরী গ্রামে থাকাকালীন বিয়ে করেছিলেন বলে জানা যায়। তার সেই স্বামী ছিলেন একজন ফুটবলার। নাম ফেরদৌস কবীর সৌরভ। বাড়ি যশোরের কেশবপুরে। তিন বছর প্রেম করার পর ২০১২ সালের ২৮ এপ্রিল বিয়ে করেছিলেন তারা। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে পরী ও সৌরভের কয়েকটি ঘনিষ্ঠ ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল ফেসবুকে।
এর আগে ভোলার ইসমাইল নামে এক ব্যক্তিক সঙ্গেও বিয়ের কথাও শোনা গিয়েছিল। তবে সেই বিয়েও বেশি দিন টিকেনি। ওই সময় ইসমাইল ও পরীমনির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
গত জুন মাসে আশুলিয়ার বোট ক্লাবকাণ্ডে আলোচনায় আসেন পরীমনি। সেসময় তিনি ব্যবসায়ী নাসির ইউ আহমেদ-সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগ তিনি ফেসবুক লাইভে এসেও জানান। এরপর সাভার থানায় ধর্ষণেরচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। পরীমনির করা মামলায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও উত্তরা ক্লাবের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নাসির ইউ মাহমুদ-সহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গত ৮ জুন রাতে বোট ক্লাবে হত্যারচেষ্টা ও ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে পরীমনির করা মামলার তদন্তে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসে। পুলিশ জানতে পারে পরীমনির করা অভিযোগ মিথ্যে। প্রভাবশালী আরও এক ব্যক্তির সঙ্গে পরীমনির ঘনিষ্ঠতার তথ্যও জানতে পারে পুলিশ। এমনকি নগ্ন ছবিতে অভিনয়, সমাজের উঁচুতলার মানুষদের ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায়ের তথ্যও চলে আসে র্যাব গোয়েন্দাদের হাতে। শুধু পুলিশি তদন্ত নয়, সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণেও মানুষ দেখতে পায় ৮ জুন রাতে বোট ক্লাবের মদের টেবিলে বেশ কয়েক জনের সঙ্গে মদ্যপান করছেন পরীমনি। মোবাইল ফোনে তোলা ফুটেজ প্রকাশ হওয়ার পর আড়াল থেকে সত্য বেরিয়ে আসতে থাকে। এর কদিন পর নায়িকার বিরুদ্ধে গুলশান অল কমিউনিটি ক্লাব ও বনানী ক্লাবে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠে। সেসব ফুটেজ সামনে আসার পর পরীকে গ্রেফতারের দাবি করেন অনেকেই।