চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএমএ কন্টেইনার ডিপোতে আগুন নেভাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনী। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলের কাছে যেতে না পারায় ওপর থেকে জল ছিটানোর কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী।
প্রতিবেী বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে গতকাল অর্থাৎ শনিবার রাতে । বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলের আশপাশের অন্তত চার বর্গকিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। আশপাশের বাড়িঘরের জানালার কাচ ভেঙে পড়ে। বিস্ফোরণের পর এখনো আগুন জ্বলছে। ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে লাগা আগুনে উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়ে এখন পর্যন্ত ৫ জন ফায়ার সার্ভিসকর্মীসহ প্রাণ হারিয়েছেন ৪৩ জন। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইনউদ্দিন নিহত ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য মাধ্যম থেকে বাকিদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহত পুলিশ সদস্য, ফায়ার সার্ভিসকর্মী এবং সাধারণ মানুষকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম সিএমএইচ এবং স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ফায়ারের মহাপরিচালক জানান, কন্টেইনারগুলো কেমিক্যালে পূর্ণ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে সময় লাগছে। আর এ কারণেই আগুন ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে কন্টেইনার ডিপোটিতে আগুন লাগে। ডিপোটিতে প্রায় পঞ্চাশ হাজার কন্টেইনার ছিল। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতা বাড়ে। তবে এখন আগুনের মাত্রা কমে আসলেও তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
ফায়ারের মহাপরিচালক সাংবাদিকদের জানান, এতবড় অগ্নিকাণ্ড হলেও মালিকপক্ষের কারো উপস্থিতি ঘটনাস্থলে তারা লক্ষ করেননি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকা একপ্রকার জটিলতা তৈরি করছে। এদিকে, এ ঘটনার কারণে চট্টগ্রামের সকল চিকিৎসকের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আর সকল চিকিৎসককে হাসপাতালে যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছে চট্টগ্রামের জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়। পাশাপাশি স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালেও দগ্ধদের চিকিৎসা সেবা দিতে বলেছে সিভিল সার্জনের কার্যালয়।
কন্টেইনার ডিপোটিতে এখনও কিছুক্ষণ পরপর বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এরমধ্যে পাঁচ কিলোমিটার দূরেও বিস্ফোরণের কম্পন অনুভূত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতে আগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চার শতাধিক ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নগরী থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে কদমরসুল এলাকায় বিএম ডিপো নামের ওই কনটেইনার টার্মিনালে শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আগুন লাগে। চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সবগুলো ইউনিট চেষ্টা করেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় রাতে সাড়ে ৩টার দিকে ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা থেকে অগ্নি নির্বাপক গাড়ি পাঠাতে অনুরোধ করা হয়।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আনিছুর রহমান রবিবার সকালে জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা হলেও বারবার বিস্ফোরণে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। ডিপোতে রাসায়নিক থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হচ্ছে। বিস্ফোরণের পর ধোঁয়ার পাশাপাশি বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে।
ফায়ার সার্ভিসের দগ্ধ ও আহত ১৫ জন কর্মীকে চট্টগ্রাম সিএমএইচসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করা হচ্ছে। আরো দুজন কর্মীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন উপ-সহকারী পরিচালক শাহজাহান। র্যাব-৭ এর প্রধান মো. ইউসুফ বলেন, “আমরা চেষ্টা করেছি ডিপোর ভিতর যারা আটকে পড়েছেন তাদের বের করতে। অনেক মানুষকে আমরা সবাই মিলে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।”
আহত ও দগ্ধদের মধ্যে অন্তত ১১ জন পুলিশও রয়েছেন। তাদের মধ্যে দুই পুলিশ সদস্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সীতাকুণ্ডে উদ্ধার তৎপরতা শুরুর পর রাত ১২টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে আহতদের হাসপাতালে আনা শুরু হয়।
এদিকে বিস্ফোরণের পর রাসায়নিকগুলো যাতে সমুদ্রে গিয়ে না পড়ে সে জন্য আশপাশের খাল ও নালায় সেনাবাহিনী কাজ শুরু করেছে।