তিনি একাধারে চলচ্চিত্র পরিচালক, লেখক, প্রযোজক। কথা হচ্ছে সৃজিত মুখোপাধ্যায়কে (Srijit Mukherjee) নিয়ে। বাংলা ছবি দিয়ে কেরিয়ার শুরু হলেও বর্তমানে সৃজিত বলিউডেও পা রেখেছেন। তাঁর পরিচালিত নেটফ্লিক্সের ওয়েব সিরিজ 'রে' (Ray) যথেষ্ট আলোচিত। অনেকেরই অজানা, ইরফান খানের (Irrfan Khan) সঙ্গে 'হেমলক সোসাইটি' (Hemlock Society)-র হিন্দি সংস্করণও পরিচালনা করার কথা ছিল সৃজিতের। তবে দুঃখজনকভাবে, ছবিটি নিয়ে কাজ এগানোর আগেই অভিনেতা মারা যান।
বলিউড এবং টলিউড, দুই ইন্ডাস্ট্রিতেই ব্যাক-টু-ব্যাক রিলিজ রয়েছে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি একই দিনে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল 'কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন' (Kakababur Protyabortan) ও 'সাবাশ মিঠু' (Shabaash Mithu)। তবে শোনা যাচ্ছে, 'কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন'-র মুক্তি স্থগিত রাখা হবে আপাতত। IndiaToday.in-কে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী পরিচালক সৃজিত, খোলামেলা আড্ডায় শেয়ার করলেন নানা অজানা কথা।
'কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন' কি শুধুমাত্র একটি বিশেষ শ্রেণীর দর্শকদের জন্য তৈরি? এই প্রসঙ্গে সৃজিত বললেন, “শিশুদের ফ্যান্টাসি বা শিশুদের অ্যাডভেঞ্চারের চাহিদা এবং দেখার মতো দর্শক সব সময় থাকবে। আমরা দেখেছি 'স্পাইডার-ম্যান' বক্স অফিসে কতটা দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে। সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। আমি কাকাবাবুর সঙ্গে তুলনা করছি না। স্পষ্টতই, বাজেট, স্কেল, সমস্তটাই একেবারে ভিন্ন। তবে কাকাবাবু এমন দর্শকের কল্পনাকে ধারণ করে যা সর্বজনীন। সুতরাং, আমি মনে করি সব রকমের দর্শকেরা এই ছবিটি উপভোগ করতে পারে। এটি একটি সঠিক 'ট্রু-ব্লু -অ্যাডভেঞ্চার।"
"হেমলক সোসাইটি'-র হিন্দি রিমেকে হ্যাপি সিং-এর চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল ইরফানের"
সৃজিত বলিউডে যে সকল অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করতে চান তাঁদের কথা জানান। সেই সঙ্গে সামনে আসে তাঁর একটি অপূর্ণ ইচ্ছা। তিনি বলেন, “আমি সত্যিই ইরফানের সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছিলাম। 'হেমলক সোসাইটি'-র হিন্দি রিমেক নিয়ে ওঁর সঙ্গে অনেক অনেক কথাও হয়। 'হ্যাপি সিং'-এর চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল ইরফানের। সেটা করা আর সম্ভব না।”
পরিচালক যোগ করেন,"অমিতাভ বচ্চন, মনোজ বাজপেয়ী, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী, পঙ্কজ কাপুর এবং বোমান ইরানির সঙ্গে তিনি কাজ করতে চান। তাঁর কথায়, "...এবং অভিনেত্রীদের মধ্যে, আমি টাব্বু, শাবানা আজমি, কঙ্কনা (সেনশর্মা)- এর সাথে কাজ করতে চাই ছোট থেকেই এবং অবশ্যই আলিয়া (ভট্ট)।"
"বাংলা, হিন্দি এবং দক্ষিণের ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে একটি ব্যবধান রয়েছে"
সৃজিত মুখোপাধ্যায় প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলচ্চিত্র জগতের অংশ। তিনি বলেন, “বাংলা ইন্ডাস্ট্রির পাশাপাশি দক্ষিণে এবং বলিউড ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে একটি ব্যবধান রয়েছে। এই ব্যবধান, স্পষ্টতই, হলিউডের লেভেলের প্রোডাকশন। তবে আমরা আশা করি, চেষ্টা করি এবং আমাদের লক্ষ্য থাকে একদিন সেখানে পৌঁছানোর। আমরা চেষ্টা চালিয়ে গেলেই সেখানে পৌঁছাতে পারব। আমরা যদি নিজেদেরকে চেম্বার ড্রামা, রিলেশনশিপ ফিল্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখি বা সম্ভবত সেলুলয়েডে নির্মিত টেলিভিশন সিরিয়ালকে গুরুত্ব দি, তাহলে কখনই সেখানে পৌঁছতে পারব না।"
তিনি আরও যোগ করেছেন, “হ্যাঁ, যাত্রা মসৃণ হবে না। হ্যাঁ, তুলনা হবে এবং এটি খুব ভালো দেখাবে না। তবে আমরা লড়াইয়ে নামব, যদি আমাদের একেবারেই নামতে হয়। হ্যাঁ, সেই জার্নিটা মসৃণ হবে না। তুলনা হবে এবং এটি খুব ভাল দেখাবে না। তবে আমরা লড়াইয়ে নামব, যদি আমাদের একেবারেই নামতে হয়।”
"আমাদের এখনও টলিউডের মৌলিক বিষয়গুলির জন্য সংগ্রাম করতে হবে"
বলিউড ও টলিউডের পার্থক্য প্রসঙ্গে পরিচালক বললেন, “আমি মনে করি আঞ্চলিক শিল্পে পরিচালকের বেশি স্বাধীনতা রয়েছে, যা প্রযোজকের বিনিয়োগের আকার অনেক কম হওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে আমি মনে করি। আমার মনে হয় কম স্টেক হোল্ডার আছে, অথবা হয়তো স্টুডিও সিস্টেম টলিউডে তেমন প্রচলিত নয়। দ্বিতীয়ত, টলিউডে অভিনেতাদের রিসোর্সের অ্যাক্সেস অনেক বেশি। আমার ধারণা এর আরেকটি কারণ হতে পারে যে, বাংলায় কোনও ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট এযজেন্সি নেই।"
তিনি যোগ করেন, "আমাদের এখনও টলিউডে মৌলিক বিষয়গুলির জন্য সংগ্রাম করতে হবে, যা বোম্বেতে দেওয়া হয়। কিছু নির্দিষ্ট যন্ত্রপাতি, লজিস্টিক বেস আছে যা মঞ্জুর করা হয়। আমি এটা বলছি একজন ব্যক্তি হিসাবে যিনি টালিগঞ্জে মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত এবং বোম্বেতে একজন সম্পূর্ণ নবাগত। তাই আমি মনে করি তুলনাটি ন্যায্য নয়। তবে যদি আমি বোম্বেতে সফল হতে পারি,তখন 'পয়েন্ট টু পয়েন্ট' এবং ফলপ্রসূ তুলনা করতে পারব।"