হাঁটা—একটা সাধারণ অভ্যাস। ছোটবেলা থেকেই সবাই শুনে এসেছি, রোজ একটু হাঁটতে হয় শরীর ভাল রাখার জন্য। কিন্তু জানেন কি, নিয়মিত হাঁটলে শুধু ডায়াবেটিস বা প্রেসারের সমস্যা নয়, কমতে পারে ক্যান্সারের ঝুঁকিও?
সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় জানা গিয়েছে, যারা প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটেন, তাদের মধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কম। এই গবেষণায় প্রায় ৮৫ হাজার মানুষের ওপর ছয় বছর ধরে সমীক্ষা চালানো হয়।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দিনে গড়ে ৭,০০০ পা হাঁটলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি প্রায় ১১ শতাংশ কমে যায়। আর ৯,০০০ পা হাঁটলে সেই ঝুঁকি কমে ১৬ শতাংশ। তবে ৯,০০০ পা-র বেশি হাঁটলেও অতিরিক্ত কোনও উপকার পাওয়া যায় না বলে জানান গবেষকরা।
সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের হাতে দেওয়া হয়েছিল ফিটনেস ট্র্যাকার। সেই ডিভাইসের মাধ্যমে জানা গিয়েছে, কারা কতটা হাঁটছেন এবং কোন গতিতে হাঁটছেন। দেখা গিয়েছে, হাঁটার গতি যত বেশি, তত উপকার।
তবে শুধু গতি নয়, হাঁটলেই শরীর উপকৃত হয়। অর্থাৎ দ্রুত হাঁটা উপকার দেয় ঠিকই, কিন্তু ধীরে হাঁটলেও ক্যান্সার প্রতিরোধে তা কাজ করে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, শরীরচর্চার মতো হাঁটা হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। আর শরীরের মধ্যে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক থাকলে ক্যান্সারের কোষ জন্মানোর ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
এই গবেষণা এমন এক সময়ে সামনে এল, যখন আমেরিকাসহ বহু দেশ মোটাপা এবং ক্যান্সার বৃদ্ধির সমস্যায় ভুগছে। সেখানে দাঁড়িয়ে এমন একটা সহজ অভ্যাস—যেমন হাঁটা—যদি ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর হয়, তবে তা নিঃসন্দেহে আশার আলো।
এই গবেষণায় ১৩ ধরনের ক্যান্সার নিয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—
গলা, যকৃৎ, ফুসফুস, কিডনি, পাকস্থলি, ইউটেরাস, মাইলোয়েড লিউকেমিয়া, মাইলোমা, কোলন, মুখ-গলা, মলাশয়, মূত্রাশয়, স্তন ক্যান্সার।
পুরুষদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা গিয়েছে কোলন, মলাশয় এবং ফুসফুসের ক্যান্সার। আর মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা গিয়েছে স্তন, কোলন, ইউটেরাস এবং ফুসফুসের ক্যান্সার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনে ৩০ মিনিট হাঁটা যথেষ্ট। আপনি চাইলে একটানা না হেঁটে, সারা দিনে ভাগ করে হাঁটতে পারেন। যেমন— সকালে ১০ মিনিট, বিকেলে ১০ মিনিট, রাতে খাওয়ার পর ১০ মিনিট। এইভাবে হাঁটলেও উপকার হবে। দরকার শুধু নিয়মিত হওয়া।
অনেকেই ভাবেন, শরীরচর্চা মানেই জিমে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কসরত করতে হবে। কিন্তু এই গবেষণা দেখিয়ে দিল, শুধু হাঁটাই যথেষ্ট—তাও আবার বিনামূল্যে, ঝুঁকিবিহীন।
রোজকার জীবনযাত্রায় একটু পরিবর্তন আনলেই শরীর অনেকটা সুস্থ রাখা সম্ভব। মোবাইল হাতে নিয়ে বিছানায় বসে না থেকে, একটু হেঁটে নিন। লিফট বাদ দিয়ে সিঁড়ি ব্যবহার করুন।
অফিসে কাজের মাঝে বসে না থেকে একটু পায়চারি করুন। এই ছোট ছোট অভ্যাসই ভবিষ্যতে বড় বিপদ থেকে বাঁচাতে পারে। স্মার্ট জীবনযাপন মানেই দামি ডায়েট বা ব্যায়াম নয়—স্মার্ট সিদ্ধান্ত মানে নিয়মিত হাঁটা!