শসা সবচেয়ে সস্তা ও সহজলভ্য ফলগুলির মধ্য়ে একটি হল শসা। কিন্তু এর গুণ অসীম। শসা সঙ্গে রাখা মানে আপনার অনেক সমস্যার চটজলদি সমস্যা সমাধান। আবার নিয়মিত শসা খেলে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই শসা খেতেই হবে।
এখন পুজোর মরশুম চলছে। দুর্গাপুজো, কালীপুজো, জগগ্ধাত্রী পুজো, ঠাকুর দেখার শেষ নেই। দিনভর ঠাকুর দেখার নেশায় আমরা নাওয়া-খাওয়া ভুলি। আর হবে নাই বা কেন? উৎসবের মরশুম তো আর রোজ আসে না। তাই ঠাকুর দেখতে যে কোনও ক্লান্তি ভুলে যাই। তবে শরীর অনেক সময় বদলা নেয়। তবে আপনিও জব্দ করতে পারেন শরীরকে। সঙ্গের ব্যাগে রাখুন শসা। যখন সুবিধা খেয়ে নিন। একাধিক লাভ হবে।
শরীর জলের অভাব পূরণ করে
ধরুণ আপনি এমন কোথাও আছেন, যেখানে হাতের কাছে জল নেই। ব্যাগ থেকে একটা শসা বের করে চিবিয়ে খেয়ে নিন। পিপাসা মিটে যাবে। পেটও ভরবে। হয়ে উঠবেন চনমনে। কারণ, শসার ৯০ শতাংশই জল।
দেহের ভেতর-বাইরের তাপ শোষক
রোদে বহুক্ষণ দাঁড়িয়ে অনেক সময় শরীরের ভিতর-বাইরে প্রচণ্ড তাপ অনুভূত হয়। দেহে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। এ অবস্থায় একটি শসা খেয়ে নিন।এ ছাড়া সূর্যের তাপে ত্বকে জ্বালা অনুভব করলে শসা কেটে ত্বকে ঘষে নিন। নিশ্চিত ফল পাবেন।
টক্সিন বের করে
শসার মধ্যে যে জল থাকে, তা আমাদের দেহের বর্জ্য ও বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে অনেকটা অদৃশ্য ঝাঁটার মতো কাজ করে। নিয়মিত শসা খেলে কিডনির পাথরও গলে যায় অনেক সময়।
প্রাত্যহিক ভিটামিনের শূন্যতা পূরণ করে
উৎসবের দিনগুলিতে আমরা সুষমের পরিবর্তে সুস্বাদু খাবারের দিকে মনোযোগ নেই। প্রতিদিন আমাদের দেহে যেসব ভিটামিনের দরকার হয়, তার বেশির ভাগই শসার মধ্যে বিদ্যমান। ভিটামিন এ, বি ও সি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও শক্তি বাড়ায়। তাই শসা খেতেই হবে।
ত্বকে খনিজের সরবরাহকারী
শসায় উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও সিলিকন আছে, যা ত্বকের পরিচর্যায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। এ জন্য ঘুরতে বের হওয়ার আগে স্নানের সময় শসা ফেলে স্নান করুন।
হজম ও ওজনহ্রাসে সহায়ক
শসায় উচ্চমাত্রায় জল ও নিম্নমাত্রার ক্যালরি উপাদান রয়েছে। ফলে পুজোয় অনিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়ার পর যাঁরা দেহের ওজন কমাতে চান ও হজম ঠিক রাখতে চান, তাঁদের জন্য শসা আদর্শ টনিক হিসেবে কাজ করবে।
যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁরা স্যুপ ও সালাদে বেশি বেশি শসা ব্যবহার করবেন। কাঁচা শসা চিবিয়ে খেলে তা হজমে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। নিয়মিত শসা খেলে দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠ-কাঠিন্য দূর হয়।
চেহারার জেল্লা বাড়ায়
সৌন্দর্যচর্চার অংশ হিসেবে অনেকে শসা গোল করে কেটে চোখের পাতায় বসিয়ে রাখেন।এতে চোখের পাতায় জমে থাকা ময়লা যেমন অপসারিত হয়, তেমনি চোখের জ্যোতি বাড়াতেও কাজ করে।চোখের প্রদাহপ্রতিরোধক উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকায় ছানি পড়া ঠেকাতেও শসা কাজ করে।
মুখ পরিষ্কার রাখে
দুর্গন্ধযুক্ত সংক্রমণে আক্রান্ত মাড়ির চিকিৎসায় শসা দারুণ কাজ করে। গোল করে কাটা এক স্লাইস শসা জিভের ওপরে রেখে সেটি তালুর সঙ্গে চাপ দিয়ে আধা মিনিট রাখুন। শসার সাইটোকেমিক্যাল এর মধ্যে বিশেষ বিক্রিয়া ঘটিয়ে আপনার মুখের জীবাণু ধ্বংস করবে। সজীব হয়ে উঠবে আপনার নিঃশ্বাস।
চুল ও নখ সতেজ করে
শসার মধ্যে যে খনিজ সিলিকা থাকে তা আমাদের চুল ও নখকে সতেজ ও শক্তিশালী করে তোলে। এ ছাড়া শসার সালফার ও সিলিকা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
ক্যানসার ও ডায়বেটিস প্রতিরোধে কাজ করে
শসায় সিকোইসোলারিসিরেসিনোল, ল্যারিসিরেসিনোল ও পিনোরেসিনের মতো আয়ুর্বেদিক উপাদান আছে। জরায়ু, স্তন ও মূত্রগ্রন্থিসহ বিভিন্ন স্থানে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কমানোর সঙ্গে এই তিন উপাদানের জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে
ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি দেয়, কোলস্টেরল কমায় ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
গেঁটেবাত থেকে মুক্তি
শসায় প্রচুর পরিমাণে সিলিকা আছে। গাজরের রসের সঙ্গে শসার রস মিশিয়ে খেলে দেহের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নেমে আসে। এতে গেঁটেবাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কিডনি সুস্থ রাখে শরীরের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা ঠিক রাখে শসা। এতে কিডনি থাকে সুস্থ ও সতেজ।
মাথাধরা থেকে নিষ্কৃতি
ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পর অনেকের মাথা ধরে। শরীর ম্যাজম্যাজ করে। শসায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি ও সুগার আছে। তাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে কয়েক স্লাইস শসা খেয়ে নিলে ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পর এ সমস্যা থাকবে না।