প্রতি দিন লক্ষ লক্ষ মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। ঠিক খবরের সঙ্গে বহু ভুল খবরও সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে। সম্প্রতি সোশাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট যআইরাল হয়েছে যেখানে শ্বাসকষ্ট হলে ঘরোয়া টোটকায় অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানোর কৌশল বলা হয়েছে।
পোস্টে বলা হয়েছে, কর্পুর, লবঙ্গ, জোয়ান এবং কয়েক ফোঁটা নীলগিরি তেল একটি কাপড়ের পুঁটুলিতে বেঁধে শুঁকলে রক্তে বুকের ধড়ফড়ানি কমে যাবে এবং অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে যাবে।
প্রথমেই বলি, এই ঘরোয়া টোটকার কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। আসুন জেনে নিই এই টোটকার সত্যিটা কী। এতে ব্যবহৃত সামগ্রী শরীরে কী প্রভাব ফেলে।
কর্পুর - খুব সামান্য পরিমাণে ভিক্স ভেপোরাবে পাওয়া যায়। প্রায় প্রত্যেক ঠাকুর ঘরেই মেলে। তবে বন্ধ নাক খুলতে বা শ্বাসকষ্ট দূর করতে এর কোনও প্রভাব নেই।
স্টাডি বলছে, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই যেখানে বন্ধ নাক খুললে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে যাবে। সামান্য বেশি কর্পূর শুঁকে ফেললে তার প্রভাব ভয়ানক হতে পারে। বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে।
যে কোনও কিছুতে ১১ শতাংশের বেশি কর্পুর ব্যবহার করলে তা বিষে পরিণত হয়। আমেরিকায় ২০১৮ সালে এমন ৯৫০০-এর বেশি কেস সামনে এসেছে।
CDC গাইডলাইনে বলা আছে, কর্পুর শুঁকলে নাক, গলা এবং চোখ জ্বালা করবে। বেশি মাত্রায় শুঁকলে হ্যালুসিনেশন, পেটে ব্যথা হতে পারে। অতিরিক্ত প্রয়োগে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
লবঙ্গ - ইতালির একটি সমীক্ষা বলছে লবঙ্গ SARS-CoV-2 -তে কার্যকর হতে পারে। যদিও এই সমীক্ষা হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাসের উপর প্রয়োগ করে দেখা হয়েছে। করোনার সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই।
তা ছাড়া একাধিক সমীক্ষায় এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে লবঙ্গ শ্বাসকষ্ট দূর করতে বা রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
জোয়ান এবং নীলগিরির তেল - কোনও সমীক্ষা বা গবেষণায় এমন কোনও তথ্য মেলেনি যেখানে এই দুই বস্তুকে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে দেখা গিয়েছে। এমনকী শ্বাসকষ্টও দূর করতে কোনও সাহায্য করে না।
বেশ কিছু পোস্টে এমনও লেখা হয়েছে, যেখানে অ্যাম্বুলেন্সে করোনা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওযার সময়ও এই পুঁটুলি শোঁকানো হয়েছে। যদিও গাইডলাইনে এ ধরনের কোনও কথা বলা নেই।
সব মিলিয়ে এমন কোনও প্রমাণ মেলেনি যেখানে এই জিনিসগুলি করোনার ক্ষেত্রে কার্যকর। তাই সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল পোস্টের পিছনে না দৌড়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
অনেকে বলছেন ভাপ নিলে শরীরের করোনা ভাইরাস ধ্বংস হবে। চিকিৎসকরা বলছেন, লাগাতার ভাপ নিলে ক্ষতির সম্ভাবনাই বাড়বে। ফুসফুস এবং গলার মাঝের নালি ক্ষতিগ্রস্ত হয় যা করোনার প্রভাব আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
ইউনিসেফ ইন্ডিয়ার তরফে একটি টুইটে জানানো হয় ভাপ নেওয়ার ফলে শ্বাসনালিতে থাকা ট্রাকিয়া এবং ফ্যারিঙ্গস জ্বলে যেতে পারে বা চূড়ান্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এতে শ্বাস নেওয়ায় অসুবিধা আরও বেশি হতে পারে।
অনেকে নানা রকম মশলার চা বানিয়ে পান করছেন। তবে দারচিনি, গোলমরিচ, জায়ফল ইত্যাদি অত্যন্ত গরম মশলা। বেশি মাত্রায় খেলে পেটে জ্বালা হতে পারে বা মুখের ভিতর ফোস্কা পড়তে পারে।
গত বছরও এ ধরনের নানা পোস্ট শেয়ার করা হয়েছিল সোশাল মিডিয়ায়। যেখানে গোলমরিচের গুঁড়ো, মধু এবং আদা দিয়ে পাচন বানানোর কথা বলা হয়েছিল। এৎ কোনও সত্যতা নেই।
WHO বয়ানে জানিয়েছিল এ ধরনের পোস্টে যাতে মানুষ বিশ্বাস না করেন।
রসুন খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে পারে সেটা সত্যি। কিন্তু এমন কোনও প্রমাণ এখনও মেলেনি যেখানে রসুনকে করোনায় কার্যকর বলা হয়েছে।