সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারীয় উপমহাদেশে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ড্রাগন ফল (Dragon Fruit)। এতদিন ধরে সমস্যা না হলেও এবার ফলটির নাম পরিবর্তনে তৎপর হল গুজরাত সরকার। ফলটির নাম পাল্টে ‘কামালাম’ রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানি।
মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানি বলেন, ‘ড্রাগন ফলের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে গুজরাত সরকার। যেহেতু, ফলটির বাইরের আকৃতি কিছুটা পদ্মের মতো তাই এটিকে কামালাম নামকরণ করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ড্রাগন ফল নামটি চিনের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই আমরা এটি পরিবর্তন করে দিয়েছি।’ উল্লেখ্য, পদ্মফুলের সংস্কৃত নাম ‘কামালাম’। আর কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির গুজরাত কার্যালয়ের নামও ‘কামালাম’।
দক্ষিণ আমেরিকার আদিবাসীদের প্রিয় ফল ড্রাগন ফল। তবে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড এবং চিনেও পাওয়া যায়। সেখানকার বাসিন্দাদের কাছেও প্রিয় ফল এটি। ভারতের বাজারে খুব পরিচিত ফল না হলেও, ক্রমেই এর জিনপ্রিয়তা বাড়ছে।
ড্রাগন গাছ এক ধরনের ক্যাকটাস জাতীয়। গাছের কোনো পাতা নেই। গাছ সাধারণত ১.৫ থেকে ২.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। ড্রাগন ফল পাকলে খোসার রং লাল হয়। শাঁস গাঢ় গোলাপি বা সাদা রঙের এবং রসালো প্রকৃতির হয়। বীজগুলো ছোট ছোট। কালো ও নরম। একটি ফলের ওজন দেড়শ’ গ্রাম থেকে ছয়শ’ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ড্রাগন ফলের রূপও অতি সহজেই নজর কাড়ে। ফলের ভেতরটা যেমন রাঙা, খেতেও সুস্বাদু। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ফল পুষ্টিগুণে ভরপুর। বেলে ও দোআঁশ মাটি ড্রাগন চাষের পক্ষে আদর্শ। চারা রোপণের জন্য উপযোগী সময় হলো এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত। রোপণের পর এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। এটি একটি সম্ভাবনাময় ও লাভজনক চাষ। এক বিঘা জমিতে ধান বা অন্য ফসল চাষ করে যেখানে বছরে চার থেকে পাঁচ হাজার রুপি লাভ হয়, সেখানে ড্রাগন ফল চাষে লাভ বেশি।
মূলত আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো ছাড়াও ইন্দোনেশিয়ায় ড্রাগন ফলের চাষ সবচেয়ে বেশি হয়। বর্তমানে ভারতেও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে ড্রাগন ফলের চাষ। গতানুগতিক কৃষির ওপর নির্ভরশীল না হয়ে সময়ের প্রয়োজনে লাভজনক ফসল উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন চাষিরা। যার ফলাফল বাংলার বিভিন্ন জেলার আনাচে-কানাচে বাড়ছে ড্রাগন ফলের চাষ।
জানেন ড্রাগন ফল আপনার স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা দূর করতে পারে। ত্বকের উজ্জ্বল্য রক্ষা থেকে শুরু করে ওজন কমানোতে সিদ্ধহস্ত ইনি। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যা আপনাকে ব্রণর সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে। ব্রণযুক্ত অঞ্চলগুলিতে ফলের রস লাগিয়ে স্ক্রাব করলেও উপকার মেলে। রোদে ঘুরে ত্বকে ট্যান পরে গেলে, ভিটামিন ই এর ক্যাপসুলের সঙ্গে ১/৪ ড্রাগন ফলের মিশ্রণ ত্বকে লাগালে চটজলদি রেজাল্ট পাবেন। এছাড়াও, আপনি যদি কোনও প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার খুঁজে থাকেন তবে ড্রাগনের ফলের উপর নির্ভর করুন কারণ এর ৮০ শতাংশ কেবল জল।
ড্রাগন ফল ভিটামিন সি দ্বারা সমৃদ্ধ। করোনা পরিস্থিতিতে কিন্তু শরীরে ভিটামিন সি এর দাপট থাকা প্রয়োজন। এই ফলটি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করতে পারে। রোগজীবাণুকে হত্যা করতে সহায়তা করবে। আপনার দেহে শ্বেত রক্ত কোণিকার সংখ্যা বাড়াবে।
এটি ওজন বজায় রাখতে বা হ্রাস করতেও সহায়তা করতে পারে। কারণ ৮০ শতাংশই জল। ড্রাগন এমন একটি ফল যা প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ, যা নিশ্চিত ভাবে আপনার অন্ত্রের গতিবিধিকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
এদেশে এখনও পর্যন্ত বেশিরভাগ ড্রাগন ফল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। সচরাচর বাড়ির নিকটবর্তী বাজারে এর দেখা না পেলেও আপনি মলের মার্কেটে পেতেই পারেন। কলকাতার বাসিন্দাদের কাছে এই ফল এখন আর দুর্লভ নয়। এদেশে কেজি প্রতি চারশো টাকার বেশি দরে বাজারে এই ফল বিক্রি করা হয়।