বাঁধাকপি, শীতের সময়ের প্রিয় একটি সবজি। আমাদের দেশে এই সবজিটি সবুজ রঙের হয়ে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেগুনি রঙের বাঁধাকপিও পাওয়া যায়। দুই রঙের বাঁধাকপিই পুষ্টিগুণে ভরপুর।
বাঁধাকপি সহজলভ্য একটি সবজি। পুষ্টিগুণে ভরপুর বাঁধাকপি সাধারণত সবজি হিসেবে খাওয়া হলেও এর রয়েছে নানান ঔষধি বৈশিষ্ট্য। যা জানলে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় আপনি রাখবেন-এটা হলফ করে বলা যেতে পারে। আসুন দেখে নেওয়া যাক এর উপকারিতা-
ওজন কমাতে সাহায্য করে
বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যআঁশ বা ফাইবার রয়েছে যা কোন ক্যালরি ছাড়াই পেট ভরাতে সাহায্য করে। যাঁরা ওজন কমাতে চান তাঁরা তাঁদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বাঁধাকপি রাখুন। বাঁধাকপিতে খুবই সামান্য পরিমাণে কোলেস্টেরল ও চর্বি রয়েছে।
বাঁধাকপি হাড় ভালো রাখতে সহায়তা করে
বাঁধাকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও সোডিয়াম যা হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। এছাড়াও বাঁধাকপিতে উপস্থিত ভিটামিন হাড়কে মজবুত রাখতে সাহায্য করে। যাঁরা নিয়মিত বাঁধাকপি খান তাঁদের বার্ধক্যজনিত হাড়ের সমস্যার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
আলসার নিরাময়ে উপকারি
বাঁধাকপি আলসার প্রতিরোধে বিশেষভাবে সহায়ক। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, বাঁধাকপির রস আলসারের জন্য সবচেয়ে উপকারি প্রাকৃতিক ওষুধ।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি এবং শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা দেহে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, যাঁরা নিয়মিত বাঁধাকপি খান তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি।
কিডনির সমস্যা প্রতিরোধ করে
কিডনি সমস্যা প্রতিরোধে বাঁধাকপি একটি অপরিহার্য সবজি। যারা কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে ডায়ালাইসিস করিয়ে থাকেন, তাদের জন্য কাঁচা বাঁধাকপি খাওয়া উত্তম।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
বাঁধাকপি ক্যান্সার সৃষ্টিকারী টিউমার বৃদ্ধি রোধ করে। বাঁধাকপিতে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীর থেকে ফ্রি রেডিকেল দূর করে শরীরকে ক্যান্সার মুক্ত রাখে।
হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার বা আঁশ থাকে যা হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। বাঁধাকপির রস নিয়মিত পান করলে পেপটিক আলসার দূর হয়। এছাড়া বাঁধাকপি বুক জ্বালা-পোড়া, পেট ফাঁপা ইত্যাদি সমস্যা দূর করে।
চোখ ও ত্বকের যত্নে
বাঁধাকপি বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ একটি সবজি যা চোখের সুরক্ষায় অত্যন্ত কার্যকরী। বাঁধাকপি ফাইটোকেমিক্যালসের অন্যতম উৎস, যা শরীর ও ত্বকের কোষকে প্রদাহের হাত থেকে রক্ষা করে।
চুলের জন্য বাধাকপি
উজ্জ্বল চক চকে চুলের জন্য বাঁধাকপি অপ্রতিদ্বন্দ্বী একটি সবজি। বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমান ভিটামিন আছে যা চুল পরা সমস্যা রোধ করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
টক্সিন দূর করে
বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে সালফার রয়েছে। যা ডিটক্সিফিকেশন এনজাইমের এর মাধ্যমে লিভারকে সুরক্ষা প্রদান করে। এতে ৬৭ প্রকারের গ্লুকোসিনলেট রয়েছে। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
আয়রনের ভাল উৎস
বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন রয়েছে। শরীরের প্রয়োজনীয় সম্পূর্ণ আয়রন এই বাঁধাকপি থেকেই পাওয়া যায়। খাদ্য তালিকায় পরিমাণমত আয়রন না থাকলে শরীরে রক্তস্বল্পতা, ক্লান্তি ও মস্তিষ্কের সমস্যা হয়।
তারুণ্য ধরে রাখে
বাঁধাকপিতে থাকা ভিটামিনগুলো শরীরের রক্তনালী সবল ও শক্তিশালী রাখে। এ জন্য মুখে বয়সের ছাপ পড়ে খুব ধীরে।
বুদ্ধি বাড়ে
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে থাকায় এই সবজিটি নিয়মিত খেলে ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে নার্ভের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে। ফলে বুড়ো বয়সে গিয়ে অ্যালঝাইমারস সহ একাধিক ব্রেনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
নিমেষে মাথা যন্ত্রণা কমায়
বাঁধাকপির পাতাগুলি ছিঁড়ে নিয়ে একটা কাপড়ে রেখে কপালে বেঁধে দিন। কিছু সময় পরই দেখবেন মাথা যন্ত্রণা একেবারে গায়েব হয়ে গেছে। আর যদি এমনটা করতে না চান, তাহলে আরেকটি ঘরোয়া পদ্ধতি আছে, যা এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। পরিমাণ মতো বাঁধাকপি নিয়ে ২৫-৫০ এম এল জুস বানিয়ে পান করুন। এই ঘরোয়া ওষুধটি ক্রনিক মাথা যন্ত্রণা কমাতে দারুন কার্যকরী।