History Of Kuresong How Became Town: শৈলশহর দার্জিলিং তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইংরেজ সাহেবদের মনে ধরেছে। তাঁরা এটিকে তাঁদের অবসর যাপনের জন্য সুন্দর করে সাজিয়ে শহরের রূপ দিতে শুরু করেছেন। সেই মতো তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে। বন-বাদাড় সাফ করে বসতি নির্মাণের জন্য পাহাড়ের নীচে সমতল থেকে কুলি-মজুর-শ্রমিকদের নিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছে দার্জিলিংয়ে।
তখন সমতলের শিলিগুড়ি থেকে পাঙ্খাবাড়ি হয়ে দার্জিলিং যাওয়ার একটাই পথ। মালপত্র-লটবহর নিয়ে সে পথে যাওয়া কষ্টকর বটে। এখনকার সঙ্গে তখনকার চেহারা মেলালে চলবে না। সেই পথের মাঝেই পড়ে ছোট্ট খর্সং। কয়েক ঘর পাহাড়ি মানুষ থাকেন। এর বেশি কিছু নয়। এদিকে এতটা পথে মাথা গোঁজার ছাউনিও নেই।
দার্জিলং যাওয়ার পথে মাঝে একটা আস্তানা গড়তে পারলে ভাল হয়। ব্রিটিশ সাহেবরা বুঝলেন মাঝে আরেকটা ছোটো আস্তানা গড়া দরকার । ৪,৭৮৩ ফুট উঁচুতে খর্সংকে দেখে মনে ধরল তাঁদের।
খর্সং থেকে সামান্য আগে পিছনে তাকালে পাইক, ওক, দেবদারু, বার্চ, শাল, গামারি গাছের জঙ্গল। নীচে গোটা সমতল দেখা যায় পাখির চোখের মতো। আবার পিছনে গগনচুম্বি হিমালয়। সঙ্গে সাদা অর্কিড ফুটে রয়েছে জঙ্গলের আনাচে কানাচে। ফলে এর প্রেমে পড়লেন সাহেবরা। ফলে এখানেও সাহেবরা নির্মাণ শুরু করলেন ছোট শহর। খার্সং ব্রিটিশদের বিকৃত উচ্চারণে হয়ে দাঁড়াল কার্শিয়ং।
দার্জিলিং যাওয়ার নতুন রাস্তা তৈরি হল। হিল কার্ট রোডের কাজ শেষ হল ১৮৬১-তে। দার্জিলিং জমজমাট হতে শুরু করল ক্রমশ। তার আগেই ১৮৫৭ তে যেবার মহাবিদ্রোহ হল ব্যারাকপুর থেকে শুরু করে, ঠিক সে বছরই খর্সং-এর খানিকটা নীচে মকাইবাড়িতে চা-গাছের চারা পোঁতা হল। দার্জিলিং চায়ের নাম ছড়িয়ে পড়ার সূচনা হবে আর কিছুদিন পরে।
এরপর ব্রিটিশদের হাতে দ্রুত বদলে গেল কার্শিয়ং। গাছ, জাপান থেকে আনা ধুপি পাইনের চারা রোপণ শুরু করে দিয়েছে ব্রিটিশরা। এরপরপ তিরিশ-চল্লিশের মধ্যে শুধুই পাইন গাছ দেখা যেতে শুরু করল এই অঞ্চলে। প্রায় হারিয়েই গেল এই অঞ্চলের বার্চ, ওক, ম্যাগনোলিয়ার পুরোনো বন। আদি অধিবাসী লেপচাদের থেকেও সংখ্যায় বেড়ে গেল গোর্খারা।
এরপর টয়ট্রেন চালু হতে কার্শিয়াংয়ে হল স্টেশন। গোটা পাহাড়ের চালচিত্র বদলে যাওয়ার মূল শুরু হল সেখান থেকেই। চার্চ, স্কুল, কলেজ, জেলখানা, আফিস, আদালত হয়ে একের পর এক হোটেল তৈরি হল। সাবেক হিলকার্ট ছাড়াও পাঙ্খাবাড়ি আর রোহিণী হয়ে আরও দুটো বাইপাস তৈরি হল আরও পরে। তবে দার্জিলিং যেতে হলে এই শহরকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার উপায় নেই।
১৫০ বছর আগের কার্শিয়াং আর নেই। বদলাতে বদলাতে তা বদলে গিয়েছে অনেকটাই। তবু পুরনো জংলা স্মৃতি আঁকড়ে এখনও ফোটে সাদা অর্কিড। কমলালেবুর বাগান নিয়ে পর্যটদের আকর্ষণ করে সিটং। আর দার্জিলিংয়ের দোসর হিসেবে তার গুরুত্ব আরও বেড়েই চলে।
সমস্ত ছবি-সংগৃহীত