তাপপ্রবাহে কাহিল গোটা বাংলা। দক্ষিণ তো বটেই, পাহাড়েও খুব একটা স্বস্তি নেই। দার্জিলিং-গ্যাংটকের তাপমাত্রা বাড়ছে চরচর করে। যারা পাহাড়ে ঠান্ডা উপভোগ করতে গিয়েছেন, মন খারাপ তাঁদেরও। তবে যাঁরা পাহাড়ের ট্র্যাডিশনাল জায়গাগুলিতে ঘুরতে গিয়েছেন। তাঁদের বিপাকে পড়তে হলেও কিছু জায়গা এমন রয়েছে, যেখানে তাপপ্রবাহ কখনওই স্পর্শ করে না। আজ আমরা এমনই একটি জায়গার কথা আলোচনা করব।
এ রাজ্যেরই জায়গা। অনেকে নামও শুনেছেন। কিন্তু হয়তো যাওয়া হয়নি। একটু সাহস আর চড়াই-উতরাইয়ে সামান্য পরিশ্রম হতে পারে, এটা ভেবে গেলে এই জায়গা উপভোগ করতে পারবেন। এ রাজ্যেরই শীর্ষে অবস্থিত এই জায়গাটির নাম ফালুট। ফালুট পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জায়গা। তবে অবস্থানের কারণে এটিই সবচেয়ে শীতল জায়গা। সর্বোচ্চ সান্দাকফুর চেয়েও এর তাপমাত্রা কম।
হিমালয়য়ের অপরূপ সৌন্দর্যের কারণেই ফালুটের খ্যাতি সর্বত্র। মেঘ না থাকলে এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা তো বটেই এভারেস্টও একেবারে স্পষ্ট দেখা যায়। এখান থেকে সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত দেখার আনন্দটাই ও অনভূতি বলে বোঝানো যাবে না। সারা বছরই এখানে আবহাওয়া হিমশীতল। মোটা জ্যাকেট, কম্বল ছাড়া কখনও এখানে টিঁকতে পারবেন না।
৪ জুন ২০২৩ তারিখে দুপুর ২ টোর সময় এখানকার তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি। বেলা গড়াতেই তাপমাত্রা নামবে। ভোরে ৫-৬ ডিগ্রি থাকছে। বুঝতেই পারছেন গরমেই এই। শীতে কেমন থাকে তাপমাত্রা। মে মাসেও এখানে তুষারপাত হয়েছে। সান্দাকফু কাছে হলেও এদিন তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি। ফলে পার্থক্য বুঝতেই পারছেন।
সান্দাকফু থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ফালুট ট্রেক-এর জন্য খুবই জনপ্রিয়। অনেকে দার্জিলিং থেকে, কেউ সান্দাকফু থেকে ট্রেক করেন। কেউ কেউ অন্য পথেও আসেন। তবে গাড়িতেও যাওয়া যায়। ১৯৫০ সালে তৈরি ল্যান্ডরোভারে ফালুট পর্যন্ত পৌঁছে দেয়, তবে যাত্রা খুব একটা আরামদায়ক নয়। রাস্তা এবড়োখেবড়ো তায় পুরনো গাড়ি। তবে এর আলাদা মজা রয়েছে।
অ্যাডভেঞ্চার যারা পছন্দ করেন তাঁদের কাছে এই স্থানের গুরুত্ব অপরিসীম। মানেভঞ্জন থেকে যাত্রা শুরু করে ফালুট ট্রেকের সময় জলের সমস্যা দেখা দেয়। ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সাবরগ্রাম নামের একটি জায়গায় একটি এসএসবি ক্যাম্প আছে। সেখানে পর্যটকদের জন্য জল, খাবার এবং বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা রয়েছে। এখান থেকে একটি পথ নিচে ‘মালে’ নামের একটি জায়গায় গিয়ে মিশেছে।
ফালুট ট্রেকের জন্য উপযুক্ত সময় হলো সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর। ক্রিস্টাল ক্লিয়ার ভিউ পাওয়ার জন্য এইটিই একেবারে সঠিক সময়। তবে স্নোাফল পেতে চাইলে জানুয়ারি থেকে মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে আসতে পারেন। মে-জুন থেকে অগাস্ট পর্যন্ত সান্দাকফুতে রডোডেনড্রন আর অর্কিডের দেখা মেলে। গরম এড়িয়ে দু-চারদিন স্বর্গসুখ অনুভব করতে চাইলে আরামসে চলে আসুন।
তবে মাথায় রাখবে, মোবাইল বা ইন্টারনেট এখানে পাবেন না বললেই চলে। সান্দাকফু থেকে ফালুটে উঠতে উঠকেই মোবাইল নেটওয়ার্ক গোলমাল শুরু করবে। তাই সেটা মাথায় রেখে আসবেন। সভ্য জগত থেকে খুব কাছেই, অথচ বহুদূরে অপূর্ব একটি ডেস্টিনেশন। সান্দাকফু ও ফালুট।
সমস্ত ছবি সৌজন্য-সংগৃহীত