বাংলার পলাশের সৌন্দর্যে মজেনি এমন মানুষ পাওয়া ভার। বসন্তে পুরুলিয়া, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া তো বটেই অন্যান্য জায়গাতেও পলাশ ফোটে। যদিও পুরুলিয়া সবচেয়ে বিখ্যাত। কিন্তু হাতের কাছেই এমনই বসন্তের আরও এক ফুল রয়েছে যা আমরা কেউ কেউ জানলেও এর সৌন্দর্য সম্পর্কে অবহিত নই।
এই ফুল পেতে গেলে একটু উত্তর দিকে রওনা দিতে হবে। পাইন, ওক, বেতের জঙ্গলের মাঝে শুধুই নজর কাড়ে এই ফুল। সেখানে গেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখাও মেলে। আর দেখা মেলে রেড পান্ডার।
এ রাজ্যের কোল ঘেঁষা সিকিমে যেতে হবে। পলাশের মতোই মার্চ-এপ্রিলেই এই ফুল ফোটে এখানে। তবে গোটা সিকিম নয়, যেতে হবে ভার্সে রডোডেনড্রন অভয়ারণ্যে। এই অভয়ারণ্য হল রডোডেনড্রন ফুলের স্বর্গ রাজ্য। যদিও স্থানীয়রা রডোডেনড্রনকে বলে ‘গুরাস’।
প্রায় ১০ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ভার্সে রডোডেনড্রন অভয়ারণ্য। কাঞ্চনজঙ্ঘা বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ এবং সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে একটি সংরক্ষিত জায়গা জুড়ে অবস্থিত এই অভয়ারণ্য।
পশ্চিম সিকিমের কোলে ১০৪ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই অভয়ারণ্য গেলে দেখা মিলবে লাল রডোডেনড্রনের। যদিও তার জন্য আপনাকে যেতে হবে বসন্তকালে।
দার্জিলিং-সহ উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু জায়গায় এই ফুলের দেখা মিললেও সিকিমের রডোডেনড্রন বিশ্ববিখ্যাত। সমগ্র বিশ্বে ৩৮টি প্রজাতির রডোডেনড্রন পাওয়া যায়। তার মধ্যে ১৯টি প্রজাতির রডোডেনড্রনের দেখা মেলে ।
বিশ্বের যে সব স্থানে রডোডেনড্রন পাওয়া যায় তার মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিকিম আর এশিয়ার মধ্যে প্রথমে। বসন্তের আবহে লাল টুকটুকে রঙে ভরে ওঠে গোটা অভয়ারণ্য।
পাইন, ওক, বেতের জঙ্গলের মাঝে শুধুই নজর কাড়ে এই ফুল। যদিও এই অভয়ারণ্য থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখাও মেলে। আর দেখা মেলে রেড পান্ডার।
পূর্ব হিমালয়ের বেশ কিছু পাখির দেখাও পাওয়া যায় এখানে। তবে, লাল রডোডেনড্রনের মাঝে স্লিপিং বুদ্ধা দেখার অভিজ্ঞতা ভার্সে ছাড়া অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া কঠিন।
এখানে ভার্সে পৌঁছাতে হয় ট্রেক করে। শিলিগুড়ি থেকে বাসে চেপে জোরথাং। সময় লাগবে প্রায় ৩ ঘণ্টা। খরচ শেয়ার গাড়িতে গেলে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা জন প্রতি। রিজার্ভ গেলে কমপক্ষে ৫০০০ টাকা নেবে।
সেখান থেকে সোমবারিয়া হয়ে পৌঁছাতে হবে হিলে। এর মাঝে একরাত কাটাতে হবে ওখরেতে। এরপর হিলে। এই হিলে থেকেই ভার্সের ট্রেকিং শুরু হয়। হিলে থেকে ৪ কিলোমিটার পথ ট্রেক করে যেতে হবে। তাহলেই পৌঁছে যাবেন ভার্সে রডোডেনড্রন অভয়ারণ্য।
ভার্সেতে রাত কাটানোর জন্য দুটো রিসর্ট রয়েছে। গুরাস কুঞ্জ এবং ফরেস্ট ব্যারাক। এছাড়া আপনি ওখরে, দোদকে, সোরেংয়ে সহজেই হোটেল ও হোমস্টে পেয়ে যাবেন। এছাড়াও এই অঞ্চলে বেশ কিছু ট্রেকার্স হাট এবং হোমস্টে রয়েছে। যাঁরা সিকিমের এই রূপ দেখতে চান এবং ট্রেক করতে ভালবাসেন তাহলে অনায়াসে ঘুরে আসতে পারেন ভার্সে রডোডেনড্রন অভয়ারণ্য।