ইডেন গার্ডেন্স। সর্দার প্যাটেল স্টেডিয়ামের উদ্বোধনের পর বর্তমানে দেশের দ্বিতীয় তথা গোটা বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়াম। অতীতের শহর কলকাতায় ইডেন নামে একটা পার্ক ছিল। সেই পার্কে নাম অনুসারেই এই স্টেডিয়ামের নাম ইডেন গার্ডেন্স রাখা হয়।
১৮৬৪ সালে প্রথম উদ্বোধন হয়েছিল ইডেন গার্ডেন্সের। প্রথমে এর নাম ছিল অকল্যান্ড সার্কাস গার্ডেন। কিন্তু, পরবর্তীকালে এর নাম পরিবর্তন করা হয়।
কলকাতার তৎকালীন জমিদার বাবু রাজচন্দ্র দাস বাংলার তৎকালীন গভর্নর-জেনারেল ভাইসরয় লর্ড অকল্যান্ড ইডেন উপর খুশি হয়ে হুগলি নদীর তীরে একটা বিশাল বাগান উপহার দেন। এই প্রসঙ্গে আপনাদের জানিয়ে রাখি, বাবু রাজচন্দ্র দাসের তৃতীয় কন্যা কোনও এক মারনব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেইসময় লর্ড অকল্যান্ড ইডেন এবং তাঁর বোন এমিলি ইডেন ওই মেয়েকে মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচিয়ে ফিরিয়ে এনেছিলেন। আর সেকারণেই খুশি হয়ে জমিদারবাবু অকল্যান্ড সাহেবকে বাগানটি উপহার দিয়েছিলেন।
কিন্তু, আপনারা কি জানেন যে এই ইডেন গার্ডেন্স স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট ম্যাচ কোন কোন দলের মধ্যে আয়োজন করা হয়েছিল? হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। ভারত এবং ইংল্যান্ড। ১৯৩৪ সালে এই ম্যাচ আয়োজন করা হয়। আসুন, আজ এই ম্যাচের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা যাক।
সেইসময় ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেট কৈশোরেও পা দেয়নি। ১৯১১ সালে যদি ভারতীয় ক্রিকেট দল প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলে, তাহলে ১৯৩৪ সালকে অন্তত কৈশোর বলা চলে না! যাইহোক, সেইসময় ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন সি কে নাইডু। তাঁর নেতৃত্বেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল ভারতীয় ক্রিকেট দল।
উল্লেখ্য, এটা তিন ম্যাচের সিরিজ় ছিল। আর ইডেন গার্ডেন্সেই খেলা হচ্ছিল সিরিজ়ের প্রথম ম্যাচ। টসে জিতে ভারতীয় ক্রিকেট দল প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথম ইনিংসে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা একেবারে সুবিধে করতে পারেননি।
ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবথেকে বেশি রান করেন লালা অমরনাথ (৩৮)। এছাড়া ওপেনার সৈয়দ ওয়াজ়ির আলি করেছিলেন ৩৬ রান এবং দলের মিডল অর্ডার ব্য়াটসম্যান সোরাবজি কোলাহ করেছিলেন ৩১ রান। অবশেষে ২১৯ রানেই অল আউট হয়ে যায় ভারত।
এরপর ধামাকাদার ব্যাটিং করে ইংল্যান্ড। দলের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ব্রায়ান ভ্যালেন্টাইন ১৩৬ রান করেন। ব্রায়ানের সেঞ্চুরির পাশাপাশি দুরন্ত অর্ধশতরান (৬০) করেন অধিনায়ক ডগলাস জার্দিন। এছাড়াও ৭৮ রানের মারকাটারি ইনিংস ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলকে উপহার দেন ওপেনার সাইরিল ওয়াল্টার্স। প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড ৪৩৮ রানের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা দাঁড় করিয়ে দেয়।
এরপর ভারতের সামনে নতি স্বীকার করা ছাড়া আর কোনও রাস্তা খোলা ছিল না। তাও লড়াই চালিয়েছিল শেষ বিন্দু পর্যন্ত। দ্বিতীয় ইনিংসে শতরান করেন লালা অমরনাথ। তিনি ১১৮ রান করে দেশের সম্মান কিছুটা হলেও বাঁচিয়েছিলেন। এছাড়া ৪৪ রানে অপরাজিত ছিলেন অধিনায়ক সি কে নাইডু। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত ২৫৮ রানে অলআউট হয়ে যায়।
অবশেষে ইংল্যান্ড এক উইকেট হারিয়ে ৪০ রান করে, এবং ম্যাচটা নিজেদের পকেটে পুরে নেয়। এই টেস্ট ম্যাচে ভারতীয় ক্রিকেট দলে অভিষেক হয়েছিল লালা অমরনাথ, লাধা রামজি, লক্ষ্মীদাস যাই, রুস্তমজি জামসেদজি এবং বিজয় মার্চেন্টের।