সৌরাষ্ট্রের জোরে বোলার চেতন সাকারিয়া গতকাল রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে আইপিএল টুর্নামেন্টে অভিষেক করেন। নিজের প্রথম আইপিএল ম্যাচেই দলের হয়ে বোলিং শুরু করেন চেতন এবং যথেষ্ট ভালো পারফরম্যান্স করেছেন। তিনি তিনটে বড় বড় উইকেট শিকার করেছেন। দ্বিতীয় ওভারেই ময়াঙ্ক আগরওয়ালের উইকেটটা তুলে নিয়ে সাকারিয়া প্রথম সাফল্য অর্জন করেন। এরপর ইনিংসের অন্তিম ওভারে তিনি পঞ্জাব কিংস দলের অধিনায়ক কেএল রাহুল এবং রিচার্ডসনকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান।
গতকাল চার ওভারে সাকারিয়া মোট ৩১ রান দিয়ে তিনটে উইকেট তুলে নিয়েছেন। তাঁর ইকোনমি রেট ৭.৭৫। বোলিংয়ের পাশাপাশি তিনি যথেষ্ট ভালো ফিল্ডিংও করেন এবং নিকোলাস পূরাণের চোখ ধাঁধানো একটা ক্যাচ ধরে নেন। ১.২ কোটি টাকায় রাজস্থান রয়্যালস তাঁকে কিনেছে। কিন্তু, এখান পর্যন্ত পৌঁছনোর রাস্তাটা সাকারিয়ার কাছে একেবারেই সহজ ছিল না। একেবারে ছোটোবেলা থেকে চেতন এবং তাঁর পরিবার দারিদ্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে নিয়েছিল। কিন্তু চেতন নিজের স্বপ্নের রাস্তা থেকে কখনও সরে আসেননি।
চেতনের বাবা ছিলেন টেম্পো চালক, ঘরে ছিল না টিভি
গুজরাটের বরতেজ অঞ্চলে চেতনের বাবা টেম্পো চালাতেন। যদিও বছর দুয়েক আগেই তিনি এই কাজ ছেড়ে দেন। শুধু তাই নয়, আপানারা এটা জেনে হতবাক হবেন যে পাঁচ বছর আগে পর্যন্ত চেতনের ঘরে টিভিও ছিল না। সেকারণেই কোনও ম্যাচ দেখার জন্য তিনি বন্ধুর বাড়ি যেতেন। চেতনের ছোটোবেলা থেকে আজ পর্যন্ত যদি সংঘর্ষের কাহিনী আপনারা শোনেন, তাহলে বুঝতে পারবেন যে কোনও সাফল্য অর্জন করতে হলে আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করতেই হবে। তাহলে আপনার রাস্তা থেকে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর হয়ে যাবে।
এই বছরের জানুয়ারিতেই ভাই করেছে আত্মহত্যা
চেতনের ছোটোভাই রাহুল চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই আত্মহত্যা করেছে। সেইসময় চেতন সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি খেলছিলেন। এই বিষয়ে তাঁকে প্রথমে কিছুই জানানো হয়নি। তবে চেতন যখন বাড়ি ফেরেন, তারপর বেশ কয়েকদিন পর চেতনকে এই ব্যাপারে তাঁর পরিবার সবকিছু জানায়। চেতন বলেছেন, আজ যদি আমার ভাই আমার সঙ্গে থাকত, তাহলে খুব খুশি হত। চেতনের সঙ্গে যা ঘটেছে সেটা তিনি এবং তাঁর পরিবার ছাড়া আর কেউ অনুভব করতে পারবেন না।
বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করতে মরিয়া চেতন
গতবছর সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে আইপিএল ২০২০ আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর তাঁকে একজন নেট বোলার হিসেবে নিয়ে গিয়েছিল। নিজের বোলিং পারফরম্যান্সে চেতন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের কোচিং স্টাফ সাইমন কাটিচ এবং মাইক হেসনকে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছিলেন। চেতনের কথায়, তাঁর হাতে পয়সা এলে এবার ভালো জায়গায় একটা বাড়ি কিনবেন। যদিও এখনও পর্যন্ত চেতন অনেকটাই দুঃখ সহ্য করেছেন, কিন্তু, বিশ্ব ক্রিকেটে এবার নিজেকে মরিয়া হয়ে প্রমাণ করতে চান।