আজ থেকে প্রায় ২৫ বছর আগে যখন সুন্দরবনে একটা দ্বীপ ছিল। জঙ্গলঘেরা এই দ্বীপ ছিল ম্যানগ্রোভে পরিপূর্ণ। কিন্তু এখন সেই দ্বীপ প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। ১৯৯১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই দ্বীপ ধীরে ধীরে বঙ্গোপসাগরে মিশে যাচ্ছে। এই দ্বীপের নাম ভাঙ্গাদুনি দ্বীপ।
ভাঙ্গাদুনি দ্বীপ সুন্দরবনের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত। এই দ্বীপের প্রাচীনতম ছবি সার্ভে অফ ইন্ডিয়া তৈরি করেছে। এই ছবিটি ১৯৭৫ সালের। (সব ছবি-FSI)
এরপর ১৯৭৫ সালের ৫ ডিসেম্বর ল্যান্ডস্যাট-২ স্যাটেলাইট এই দ্বীপটির ছবিটি তোলে। ১৯৭৫ সালের সার্ভে অফ ইন্ডিয়া হলুদ রেখার সীমানায় দেখা যায় দ্বীপটি আয়তন কমছে। সাগরের ঢেউ এবং সুন্দরবনের দিক থেকে আসা ঢেউয়ের সংঘর্ষে ধীরে ধীরে ডুবছে এই দ্বীপটি।
এরপর ১৯৯১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ল্যান্ডস্যাট-৫ স্যাটেলাইট দ্বারা ভাঙ্গাদুনি দ্বীপের আবার ছবি তোলা হয়। দেখা যায়, দ্বীপের জমির আয়তন ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে। সমুদ্রের ঢেউয়ের লবণ জমার কারণে ম্যানগ্রোভের শিকড় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এই দ্বীপে।
৭ডিসেম্বর ২০১৬ সালে ল্যান্ডস্যাট-৮ দিয়ে এই দ্বীপের ছবি তোলা হয়। দেখা যায়, এই দ্বীপের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। এটি ১৯৭৫ সালে তোলা দ্বীপটির ছবি বর্তমানে অর্ধেক হয়ে গেছে। ফরেস্ট সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার আধিকারিক অনুপম ঘোষ জানিয়েছেন, সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভগুলি বিপদে পড়েছে। এগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেলে সুন্দরবনের পেছনের আবাসিক এলাকাগুলোকে সুনামি ও উচ্চ ঢেউ থেকে রক্ষা করতে পারবে না।
১৯৯১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ভাঙ্গাদুনি দ্বীপের ২৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়েছে। এখানে ম্যানগ্রোভ বন প্রায় শেষ। অর্থাৎ অর্ধেক জমি ও বন পুরোপুরি শেষ। এভাবে ম্যানগ্রোভ শেষ হতে থাকলে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা এবং অন্যান্য উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য হুমকি হতে পারে। কারণ, ভালো ম্যানগ্রোভ বন আবাসিক এলাকাগুলোকে সমুদ্রের প্রবল ঢেউ থেকে রক্ষা করে।
শুধু ভাঙ্গাদুনি দ্বীপই যে শেষ হচ্ছে, তা নয়। এমন দৃশ্য দেশের অনেক এলাকায় দেখা গেছে। ফরেস্ট সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার (এফএসআই) ২০১৯ সালের রিপোর্ট অনুসারে, দেশে ১২ এলাকা রয়েছে, যেখানে সর্বাধিক সংখ্যক ম্যানগ্রোভ দেখা যায়। এগুলো হল- অন্ধ্রপ্রদেশ, গোয়া, গুজরাট, কর্ণাটক, কেরালা, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ, আন্দামান-নিকোবর, দমন-দিউ এবং পুদুচেরি।
২০১৭-এর FSI রিপোর্টের তুলনায়, ২০১৯-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে যে তামিলনাড়ুতে ম্যানগ্রোভ ৪ বর্গ কিলোমিটার, পশ্চিমবঙ্গে ২ বর্গ কিলোমিটার এবং আন্দামান-নিকোবরে ১ বর্গ কিলোমিটার কমেছে। সবখানেই যে শুধু কমেছে, তা নয়। ম্যানগ্রোভ এলাকা গুজরাটে ৩৭ বর্গ কিলোমিটার, মহারাষ্ট্রে ১৬ বর্গ কিলোমিটার এবং ওড়িশায় ৮ বর্গ কিলোমিটার বেড়েছে। (ছবি: এফএসআই)
সুন্দরবনের নিচের অংশে আরেকটি দ্বীপ রয়েছে, যেটি ১৯৯১ সালে বেশ বড় ছিল, যদিও এর কোনো নাম নেই। ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ সালে ল্যান্ডস্যাট-৫ স্যাটেলাইটে এর ছবি তোলা হয়েছিল। এই দ্বীপের অবস্থাও ভাঙ্গাদুনি দ্বীপের মতো হয়েছে। এই দ্বীপের আয়তনও খুব দ্রুত হ্রাস পেয়েছে।
আপনি যদি এই দ্বীপের সীমানা দেখেন তবে আপনি আরও একটি জিনিস দেখে অবাক হবেন যে, দ্বীপটি তার স্থান পরিবর্তন করেছে। ৭ ডিসেম্বর ২০১৬-এ ল্যান্ডস্যাট-৪ আবার এই দ্বীপের ছবি তোলে। যেখানে দ্বীপের আয়তন শুধু কমেনি, বদলেছে তার স্থানও। অর্থাৎ দ্বীপের নিচের অংশ দ্রুত কমছে, ঢেউয়ের সঙ্গে একপাশে ঘুরে যাচ্ছে।