করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এবার গঙ্গাসাগর মেলায় বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। একদিকে যেমন মেলায় ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে অত্যাধুনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে, তেমনই করোনা পরিস্থিতিতে যে সমস্ত পুণ্যার্থীরা এবারে মেলায় আসতে পারবেন না। তাঁদের জন্য গঙ্গাসাগরের জল, কপিলমুনির মন্দিরের প্রসাদ কুরিয়ারে পৌঁছে দেওয়ার ও ব্যবস্থা রাখছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন।
এবারের গঙ্গাসাগর মেলার ব্যবস্থাপনা নিয়ে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জিপিআরএস পদ্ধতিতে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা হবে মেলা প্রাঙ্গনে। যার নাম দেওয়া হয়েছে পিলগ্রিম ট্রান্সপোর্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। দর্শনার্থীরা কোথায় কত সংখ্যক রয়েছেন, কোথায় কত বাস বা ভেসেল রয়েছে, কোথায় গেলে পুণ্যার্থীরা সেগুলি ধরতে পারবেন সেই সমস্ত তথ্য এই বিশেষ ব্যবস্থার মাধম্যে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এছাড়াও একটি অ্যাপ চালু করা হয়েছে যার নাম দেয়া হয়েছে 'অতিথি পথ'। এই অ্যাপের মাধ্যমে গঙ্গাসাগর যেতে গেলে কোথায় কীভাবে কোন রুট থেকে শুরু করে কোথায় গাড়ি ধরতে হবে, কোথায় ভেসেল পাওয়া যাবে এছাড়াও কোন দর্শনার্থী যদি অসুবিধায় পড়েন তা এই অ্যাপের মাধ্যমে জানানো যাবে।
এ বছর কোভিডের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন জায়গায় স্যানিটাইজার, স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। যাদের পরীক্ষা হয়ে যাবে তাঁদের হাতে বিশেষ ব্যান্ড বেঁধে দেওয়া হবে, যা দেখে বোঝা যাবে ওই পুণ্যার্থীর শারীরিক পরীক্ষা হয়েছে। এছাড়াও মেলা গ্রাউন্ডে টেস্টিং ল্যাবের ব্যবস্থাও থাকবে, কোন মানুষের যদি জ্বর হয়, সে যদি সঙ্গে সঙ্গে কোভিড টেস্ট করতে চান সেখান থেকে করতে পারবেন। পাশাপাশি এন্টিজেন টেস্টের ব্যবস্থা ও থাকছে এবারের গঙ্গাসাগর মেলায়। কেউ মেলায় এসে করোনা আক্রান্ত হলে তাঁকে হাসপাতাল এ নিয়ে যাওয়া হবে।
কলকাতার আউটট্রাম ঘাট থেকে শুরু করে মেলা প্রাঙ্গন পর্যন্ত বহু সেফ হোমের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া গঙ্গাসাগর মেলায় অস্থায়ী কোভিড হাসপাতাল করা হচ্ছে। শারীরিক দূরত্বের বিধিনিষেধ মেনেই যাতে পুন্যার্থীরা মেলায় আসতে পারেন ও মন্দিরে পুজো দিতে পারেন সে বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে জেলা প্রশাসন।
এছাড়াও মেলার নিরাপত্তার জন্য থাকছে নিরীক্ষণ ব্যবস্থা। বিভিন্ন জায়গায় নজরদারি চালানো হবে ওয়াচ টাওয়ার এর মাধ্যমে। মেলায় নজরদারি চালানোর জন্য থাকছে ২৫ টি ড্রোন ক্যামেরা ও এক হাজার সি সি টিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা থাকবে। পাঁচটি কন্ট্রোল রুম বাফার জোণে করা হচ্ছে কোভিটের জন্য। এছাড়াও আরেকটি ব্যবস্থা চালু হচ্ছে যার নাম দেওয়া হয়েছে পরিচয়। যার মাধ্যমে মেলায় এসে যাতে ভিড়ের মধ্যে মানুষজন হারিয়ে না যায় সেই কারণে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাতে রিস্টব্যান্ড বেঁধে দেয়া হবে এবং তাতে কিউআর কোড থাকবে। বয়স্ক ও কম বয়সীদের জন্য এটা ফ্রী অফ কস্ট দেওয়া হবে। এছাড়াও মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক খারাপ হলে সাগর স্ন্যাচার অল্টারনেটিভ কলিং সিস্টেম ব্যবহার করা হবে।
এবারের মেলাকেও দূষণ মুক্ত মেলা করার জন্য সমস্ত ইকো ফ্রেন্ডলি জিনিষপত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। পুণ্যার্থীদের থাকার জন্য গত বারের তুলনায় অনেকবেশি ছাউনির ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। করোনা পরিস্থিতিতে পুন্যার্থী কম আসবে কিনা সেই চিন্তা না করে সমস্ত ধরনের ব্যবস্থাই রাখছে জেলা প্রশাসন। পাছে পুন্যার্থী বেশি চলে এলেও কোন সমস্যায় না পড়তে হয়। মেলায় অনেক ছাউনি করতে হোগলা পাতা ব্যবহার করা হলেও তাতে অগ্নি নিরোধক রাসায়নিক স্প্রে করা হচ্ছে যাতে কোন বিপদ না ঘটে।
ইতিমধ্যেই গঙ্গাসাগর মেলায় প্রতিদিনই কিছু কিছু করে মানুষজন আসতে শুরু করেছেন। কার্যত মেলার সময়ের ভিড় এড়াতেই তাঁরা আগেভাগে মেলায় আসতে শুরু করেছেন। আর যারা করোনা পরিস্থিতিতে বা অন্য সমস্যার জন্য মেলায় আসতে পারবেন না, বাড়িতে বসেই যদি মেলা দেখতে চান তাদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে দর্শন আউটডোর এন্ড ডিজিটাল মিডিয়ার। তারা বাড়িতে বসেই অনলাইনে দেখতে পারবেন গঙ্গাসাগর মেলার বিভিন্ন বিষয়। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দেখতে পাবেন মেলার লাইভ কভারেজ। আর করনা পরিস্থিতিতে ঘরে বসেই যারা গঙ্গাস্নান সারতে চান তাঁদের জন্য থাকছে বাড়িতে গঙ্গা জল ও প্রসাদ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা।
এই মুহূর্তে গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি দ্রুত গতিতে চলেছে। আগামী তিন চারদিনের মধ্যেই সমস্ত প্রস্তুতি শেষ হয়ে হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।