বাদ্যযন্ত্রকে ভালবেসে অনেকেই পরবর্তী সময় তা বানানোর দিকে মন দেন। অনেকে আবার বাদ্যযন্ত্র নিয়ে পরীক্ষা নিরিক্ষাও চালান। তবে আজ যাঁর কথা বলবো তাঁর গল্পটা একটু অন্যরকম। তিনি একজন পেশাদার বংশীবাদক। কিন্তু শিক্ষা শুরুর আগে নিছকই দেখে দেখে একটি বাঁশি (Flute) বানিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। হয়ত সেটা সুরেলা ছিল না। কিন্তু শুরুটা সেখান থেকেই হয়ে গিয়েছিল। এবার পরিচয়টা সেরে নেওয়া যাক। তিনি সাত্যকি পাঠক (Sattyaki Pathak) , বাড়ি হুগলির (Hooghly) চুঁচুড়া (Chinsurah)।
দীর্ঘদিন ধরেই পেশাদারিত্বের সঙ্গে বাঁশি বাজাচ্ছেন তিনি। তবে সঙ্গের সাথী এই বাঁশি কীভাবে তৈরি হয়, তা নিয়ে প্রথম থেকেই ছিল বিরাট কৌতুহল। আর সেই কৌতুহলের বশেই বছর পাঁচেক আগে শুরু করেন বাঁশি বানানো। এই বিষয়ে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন, জানার চেষ্টা করেছেন। পরীক্ষা নিরিক্ষা চালিয়েছেন। প্রথম দিকে সাফল্য আসেনি। তবে একটা সময় তাঁর তৈরি বাঁশির সুর মন জয় করে শ্রোতা ও দর্শকদের।
বাঁশি তৈরির অনেক খুঁটিনাটি বিষয় জানা গেল সাত্যকির কাছ থেকে। সাত্যকি জানাচ্ছেন, যেকোনও বাঁশ দিয়ে বাঁশি তৈরি হয় না। মূলত অসমের শিলচরের বাঁশ দিয়ে বাঁশি তৈরি করেন তিনি। বিশেষ প্রজাতির সেই বাঁশের নাম হল 'ঢলু'। তাঁর মতে বাঁশ যত শুকনো হবে ততই ভাল হবে বাঁশির গুণমান। এছাড়া ত্রিপুরাতেও বাঁশির বাঁশ পাওয়া যায়। তবে সেগুলি মোটা। সাত্যকির মতে মোটা বাঁশের বাঁশি বিশেষ ভাল হয় না। তাছাড়া কর্ণাটকেও একধরনের বাঁশি তৈরির বাঁশ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে যে বাঁশ গাছ অবস্থায় কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ বছর থেকেছে তা দিয়ে সবচেয়ে ভাল বাঁশি তৈরি হয় বলেই জানান তিনি।
শুধু ভারতীয় বাঁশিই নয়, বিদেশের বিভিন্ন ট্রাইবাল বাঁশি বা এই ধরনের অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র তৈরিরও চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন এই শিল্পী তথা প্রস্তুতকারক। সাম্প্রতিক কালে তিনি তৈরি করেছেন 'ব্যাম্বু স্যাক্স' ও 'নেটিভ আমেরিকান ফ্লুট'। এই 'ব্যাম্বু স্যাক্স' হল বাঁশি ও স্যাক্সোফেনের একটি মিশেল, যেখানে বিশেষ নির্মাণ কৌশলে বাঁশের মধ্যে দিয়ে পাওয়া যায় স্যাক্সোফোনের শব্দ।
অন্যদিকে এই 'নেটিভ আমেরিকান ফ্লুট' মূলত তৈরি হল ম্যাপল বা পাইন কাঠ দিয়ে। যদিও সাত্যকি এটি বানিয়েছেন বাঁশ দিয়েই। সাত্যকির দাবি, এদেশে তিনিই প্রথম 'ব্যাম্বু স্যাক্স' ও 'নেটিভ অ্যামেরিকান ফ্লুট' বানিয়েছেন।
তবে এখানেই শেষ নয়, বাঁশি নিয়ে গবেষণা চলছে। সাত্যকির ইচ্ছা, আগামিদিনে এমন কিছু করার, যেখানে বংশীবাদকরা তাঁদের প্রয়োজনীয় সমস্ত বাঁশি পাবেন। আর সেখানেই হবে তাঁর সাফল্য।