লাল-নীল-সবুজের মেলা, সন্দেহ নেই। কিন্তু দেখতেই ভাল। কারণ করোনাভাইরাস এবং তার সংক্রমণ ঠেকাতে আংশিক লকডাউনের কারণে এই ফুল বাগানে পড়েই নষ্ট হচ্ছে। কোনও ক্রেতা নেই। বেজায় সমস্যায় বাগানমালিক থেকে শুরু করে সেখানকার কর্মীরা। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, বুঝতে পারছেন না তাঁরা।
বাগান জুড়ে লাল, হলুদ, সাদা, গোলাপী, কমলা-সহ একাধিক রঙের সমাহার। রোজই প্রায় হাজার করে ফুটে ওঠে এই জারবেরা ফুল। আর রোজই স্থান পায় আস্তাকুড়ে। করোনাভাইরাস শুধু জানেই মারছে না। পেটেও মারছে বহু মানুষকে। তেমনই এক উদাহরণ এটি। বেকারত্ব দূর করতে এবং নতুন কর্মসংস্থান বাড়াতে ঋণের মাধ্যমে একাধিক প্রকল্প আছেছে রাজ্য সরকারের। সেরকমই ফুলচাষের জন্য প্রায় ২০ লাখ টাকা করে খরচ করে বিশাল গ্রিন হাউস তৈরি করে জারবেরা ফুল চাষ শুরু করেন ঝাড়গ্রাম এবং বেলপাহাড়ির দুই বাসিন্দা।
দুটি বাগানে ৭ রকম রঙের জারবেরার চাষ হয়। কলকাতা, কোলাঘাট, হলদিয়ার বাজারে চাহিদাও প্রচুর এই জারবেরার। প্রথম বছর ভালই লাভের মুখ দেখেছিলেন দুই ব্যবসায়ী। কিন্তু লকডাউন শুরু হতেই সব শেষ। পাহাড়প্রমাণ দেনা।
সঙ্গে গাছ বাঁচিয়ে রাখার পরিচর্যা খরচ। কর্মীদের খরচ নিয়ে দিশাহীন অবস্থা। কবে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাবেন তাও অজানা। প্রশাসনকে সমস্ত বিষয় জানালেও এখনো আশ্বাস ছাড়া কোনও কিছুই পাননি। রোজ এক হাজার করে ফুল ফোটে।
বর্তমানে এই গোটা ফুলটাই ফেলে দিতে হচ্ছে। করোনা সবদিক থেকেই পথে বসিয়েছে তাদের।
তাদের ফুল বাইরে পাঠানো যাচ্ছে না। উপার্জন কমে গিয়েছে। আরও বেশ কিছুদিন চললে সমস্যা হবে।
বাগানের মালিক অসিতকুমার সাঁতরা জানান, রোজগার প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর মাঝে কর্মীদের বেতন দিতে হচ্ছে। ১৫-২০ লক্ষ টাকা খরচ করেছিলাম। ঋণ নিয়েছিলাম। কী করে শোধ করব জানি না। কবে সব ঠিক হবে, জানি না।
বাগানের ম্যানেজার সুশান্ত পাইক জানান, মালিক বিপুল টাকা ব্যয় করে তৈরি করেছিলেন। একবার এই গাছ লাগালে ৫ বছর ফুল হয়। প্রথম এক-দু'বছর ভালই আয় হত। দৈনিক আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা থাকত।
তিনি আরও জানান, গাছ বাঁচিয়ে রাখতে এক থেকে দেড় হাজার খরচ হয়। এখন মালিকের কাছ থেকে সে টাকা যাচ্ছে। বাস বন্ধ বলে কোথাও যেতে পারছি না। ঝাড়গ্রামে দৈনি একশো ফুল নেওয়ার লোক আছে। এক হাজার টাকা নেওয়ার লোক নেই। গাছের সার, ওষুধে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে।
ফুলের দাম কত? তিনি জানান, ৬,৭,৮ টাকা পিস। ৭ রকমের রঙের ফুল। খুব কষ্ট করে আছি।