যুদ্ধের দামামা বাজছে গোটা বিশ্বে। এবার আসরে নামছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। যে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম থেকেই নিজের একটি যুদ্ধবিরোধী ইমেজ তৈরি করেছিলেন, বলা ভাল তৈরির চেষ্টা করছিলেন, সেই ট্রাম্পও এবার বারুদে হাত সেঁকে নেওয়ার তোড়জোড় শুরু করছেন।
যার নির্যাস, ইরানে হামলা চালাতে মধ্যপ্রাচ্যে সেনার মোতায়েন করছে আমেরিকা। ইতিমধ্যেই যুদ্ধবিমানগুলি সরাতে শুরু করে দিয়েছে। আমেরিকার উদ্দেশ্য হল, ইজরায়েলকে ইরানের হামলার হাত থেকে বাঁচানো।
মার্কিন সেনার তত্পরতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেঠও। তাঁর কথায়, 'আমাদের জনগণের সুরক্ষার জন্যই সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে।' বাড়তি যুদ্ধবিমান, রিফুয়েলিং ট্যাঙ্কার্স ও যুদ্ধ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন।
এই পরিস্থিতিতেই প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি দাবি করেন, 'আমরা এখন ইরানের আকাশ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি।' এই মন্তব্যের পরই জল্পনা শুরু হয়েছে—আমেরিকা কি ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালাতে চলেছে?
তবে আমেরিকার সেনা কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে বলেছে, এখনও পর্যন্ত কোনও মার্কিন যুদ্ধবিমান ইরানের আকাশসীমায় প্রবেশ করেনি। সবকিছুই ‘রক্ষণাত্মক’ পদক্ষেপ—ইজরায়েলের দিকে আসা ইরানি মিসাইল ধ্বংস করতেই এই মোতায়েন।
F-16 যুদ্ধবিমান পাঠানো হয়েছে সৌদি আরবে। B-52 বোমারু বিমান তৈরি আছে ডিয়েগো গার্সিয়ায়, যে কোনও সময় অভিযানে নামতে পারে। B-2 স্টিলথ বোমার ব্যবহার এখনও হয়নি, কিন্তু এটি দিয়ে ইরানের ‘Fordo’ পরমাণু কেন্দ্রের মতো গভীর বাঙ্কার ধ্বংস করা সম্ভব। GBU-57 'বাঙ্কার বাস্টার' বোমা—৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের এই বোমা শুধুমাত্র আমেরিকার কাছে রয়েছে, যা ইরানের পাহাড়ের নিচে থাকা পরমাণু কেন্দ্র ধ্বংস করতে পারে।
USS Carl Vinson, USS Nimitz, USS The Sullivans, USS Arleigh Burke-এর মতো যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধজাহাজগুলো এখন আরব সাগর ও পূর্ব ভূমধ্যসাগরে মোতায়েন রয়েছে। এই যুদ্ধজাহাজগুলির কাজ—ইরান থেকে ইজরায়েলের দিকে ছোড়া মিসাইল প্রতিহত করা ও USS Gerald R. Ford নামক সুপারকারিয়ার আগামী সপ্তাহে ইউরোপের দিকে রওনা দিচ্ছে।
‘Aurora Intel’ নামে একটি ওপেন সোর্স গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, ইউরোপের স্পেন, ইংল্যান্ড, জার্মানি ও গ্রিসে ইতিমধ্যেই আমেরিকা নতুন করে রিফুয়েলিং এয়ারক্রাফট ও ফাইটার জেট মোতায়েন করেছে। অর্থাৎ, একযোগে ইউরোপ থেকে মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত পুরো অঞ্চলজুড়ে আমেরিকার নজরদারি জারি রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে বর্তমানে ৪০ হাজারের বেশি মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। সাধারণ সময়ে এই সংখ্যা ছিল ৩০ হাজারের আশেপাশে। গত অক্টোবরেও ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সময় এই সংখ্যা পৌঁছেছিল প্রায় ৪৩ হাজারে। কিছু মার্কিন সেনাঘাঁটি থেকে পরিবারদের সরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, কারণ সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়ছে।
আরও একটি নৌবহর আরব সাগরের পথে, যা হয় তো বর্তমান বাহিনীর রিলিফ হিসেবে বা প্রয়োজনে লড়াইয়ে অংশ নেবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমেরিকার এই প্রস্তুতি মূলত ইজরায়েলকে রক্ষা ও ইরানকে মানসিক চাপে রাখার কৌশল। তবে যুদ্ধ পরিস্থিতি সত্যিই তৈরি হলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই বিপুল বাহিনী সরাসরি হামলায় অংশ নিতে পারে। ট্রাম্পের মন্তব্য সেই বার্তাই দিয়ে রাখল।