১৯৫১ সালের পরে এই প্রথম। এবার সম্ভবত নন্দীগ্রামে কোনও প্রার্থী দিচ্ছে না বামেরা। আসনটি তারা ছেড়ে দিয়েছে সম্ভাব্য জোটসঙ্গী আব্বাস সিদ্দিকীর দল আইএসএফকে। এতোদিন এই আসনে প্রার্থী দিত সিপিআই। কিন্তু এবার শুভেন্দুর তৃণমূল ছাড়ার পরে নন্দীগ্রামের রাজনৈতিক সমীকরণ সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম থেকে জিতে এসেছিলেন শুভেন্দু। বর্তমান তিনি বিজেপিতে, মনে করা হচ্ছে গেরুয়া শিবিরের টিকিটে তিনি নন্দীগ্রাম থেকে লড়াই করতে পারেন। অন্যদিকে, নন্দীগ্রামে সভা করতে এসে নিজের নাম প্রার্থী হিসাবে রাখার প্রস্তাব দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। কিন্তু এবার নন্দীগ্রামে আব্বাসের দল প্রার্থী দিলে স্বাভাবিক ভাবেই মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসাবে। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, এর ফলে কি চাপ বাড়বে তৃণমূলের উপরে ? যদিও রাজনৈতিক দিক থেকে এখনও আব্বাস সিদ্দিকীকে তেমন গুরুত্ব দিতে চাইছে না তৃণমূল।
আরও পড়ুন, অভিষেককে কটাক্ষ আব্বাসের! 'ভাইপোর কারণে রাজনীতিতে আসিনি'
নন্দীগ্রামে আব্বাসের দল, চাপে পড়বে শাসকদল ?
বর্তমানে আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে আসন রফা নিয়ে দর কষাকষি চলছে বাম ও কংগ্রেস নেতাদের। উত্তরবঙ্গের আইএসএফকে আসন ছাড়া নিয়ে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্থ রয়েছে কংগ্রেস। এমন অবস্থায় আইএসএফকে নন্দীগ্রামের মতো গুরুত্বপূর্ণ আসন ছাড়তে চলেছে বামেরা। বিভিন্ন সূত্র ও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী এমনটাই জানা গিয়েছে। ২০১১ সালের আদম সুমারি অনুযায়ী নন্দীগ্রামে ৩৪ শতাংশ সংখ্যালঘু রয়েছেন। এমন অবস্থায় এই আসন আব্বাসের হাতে ছেড়ে দেওয়া খুব তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এর ফলে আব্বাসের দল থাবা বসাতে পারে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে এর ফলে চাপ বাড়তে পারে তৃণমূলের উপরে। কারণ,এই আসনে ইতিমধ্যে প্রার্থী হিসাবে নিজের নাম প্রস্তাব করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আব্বাসের হাতে নন্দীগ্রাম ছেড়ে ঘুরিয়ে তৃণমূল নেত্রীর উপর বামেরা চাপ সৃষ্টি করল কিনা, তা নিয়ে শুরু জল্পনা।
নন্দীগ্রাম বিধানসভার ইতিহাস
২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে শুভেন্দু ৬২ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। সিপিআই প্রার্থী আব্দুল কবির শেখ পান ২৬ শতাংশ ভোট। বিজেপির বিজন কুমার দাস পান ৫ শতাংশ ভোট। ২০১১সালে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ফিরোজা বিবি পান ৬১ শতাংশ ভোট। সিপিআইয়ের পরমানন্দ ভারতী পান ৩৫ শতাংশ ভোট। বিজেপি পায় দেড় শতাশের কিছু বেশি। ২০০৯ সালে উপ নির্বাচনে সিপিআই পায় ৩৯ শতাংশ ভোট ও তৃণমূল পায় ৫৮ শতাংশ ভোট। ১৯৫৭ সাল থেকে দীর্ঘদিন ধরে নন্দীগ্রাম আসনটিতে জিতে আসা বামেদের কাছ থেকে হাতছাড়া হয় ২০০৯ সালে বিধানসভা উপ নির্বাচনে।
নজর রাজনৈতিক মহলের
ফলে রেকর্ড ভোটে একসময়ে জিতে আসা নন্দীগ্রাম এবার হয়তো দেখা যাবে না কোনও বাম প্রার্থী। রাজনৈতিক সমীকরণে সেখানে বামেদের সমর্থন থাবে আইএসএফের দিকে। রাজনৈতিক দিক থেকে বর্তমানে এই আসনের গুরুত্ব অনেকটাই। কারণ এখানে প্রার্থী হিসাবে বিজেপি ও তৃণমূলের তরফ থেকে দেখা যাবে দুই হেভিওয়েটকে। তবে বামেদের এই সিদ্ধান্তে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে হয়তো চাপ বাড়তে পারে তৃণমূলের উপরে, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।