চা শুধু পানীয় নয়, তা হতে পারে শরীরের রক্ষাকবচও। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য, গ্রিন টি বা সবুজ চা স্থূলতা রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি অতিরিক্ত ফ্যাট কমিয়ে শরীরের মেটাবলিক কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
গবেষণার জন্য ইঁদুরদের চার সপ্তাহ ধরে একটি উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত “ক্যাফেটেরিয়া ডায়েট” দেওয়া হয়, যাতে চকোলেট, কুকিজ এবং মিষ্টি দুধের মতো পশ্চিমা খাবার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এরপর কিছু ইঁদুরকে ১২ সপ্তাহ ধরে নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্রিন টি-এর নির্যাস খাওয়ানো হয়। ফলাফল দেখে গবেষকরাও অবাক, মোটা ইঁদুরগুলির ওজন প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়! পাশাপাশি তাদের শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া বা মেটাবলিজমও উন্নত হয়।
আরও আশ্চর্যের বিষয়, রোগা ইঁদুরদের ওজন কিন্তু অপরিবর্তিত থাকে। অর্থাৎ গ্রিন টি শুধুমাত্র অতিরিক্ত ফ্যাটকেই লক্ষ্য করে কাজ করেছে, পেশী বা লিন টিস্যুর উপর কোনও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেনি।
শুধু ফ্যাট কমানো নয়, গ্রিন টি পেশী সুরক্ষাতেও ভূমিকা রেখেছে। সাধারণত স্থূলতার সময় পেশীর ফাইবার সঙ্কুচিত হয়ে যায়, কিন্তু গ্রিন টি সেবনের ফলে সেই সঙ্কোচন রোধ হয়। পাশাপাশি, গ্লুকোজ মেটাবলিজমের সঙ্গে যুক্ত গুরুত্বপূর্ণ জিন যেমন Insr, Irs1, Glut4, Hk1 এবং Pi3k-এর কার্যকলাপও বেড়েছে।
গবেষকরা আরও দেখেছেন, ল্যাকটেট ডিহাইড্রোজিনেজ (LDH) এনজাইমের কার্যকারিতাও পুনরুদ্ধার হয়েছে, যা শরীরের শক্তি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অ্যাডিপোনেক্টিন নামের একটি প্রোটিনের মাধ্যমেই এই প্রভাব কাজ করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
গবেষণার আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হল, সম্পূর্ণ গ্রিন টি নির্যাস পৃথক যৌগগুলির তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর। অর্থাৎ, এর বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান একসঙ্গে কাজ করলেই সর্বোচ্চ ফল পাওয়া যায়।
তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, ইঁদুরের উপর এই সাফল্য পাওয়া গেলেও মানুষের ক্ষেত্রে তা সরাসরি প্রয়োগ করা সহজ নয়। কারণ ডোজ, নির্যাসের মান, এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের প্রভাব সবটাই বিবেচনা করতে হবে।
অধ্যাপক রোজমারি অটন বলেন, “যেসব দেশে মানুষ প্রতিদিন দীর্ঘদিন ধরে গ্রিন টি পান করে, যেমন জাপান, সেখানে মেটাবলিক রোগের হার তুলনামূলকভাবে কম।” তবে তিনি সতর্ক করেছেন, অল্প সময়ে বিরাট পরিবর্তনের আশা না রেখে, নিয়মিত অভ্যাস হিসেবে গ্রিন টি পান করলেই সঠিক ফল মিলবে।