ভুট্টা অনেকেরই পছন্দ। আর ভুট্টার খই বা পপর্কন খেতেও ভালবাসেন প্রচুর মানুষ। তবে এটা যে শুধু খেতে ভাল তাই নয়, এর অনেক উপকারিতাও আছে। আর ভুট্টা দিয়ে যে শুধু পপকর্ন তৈরি হয় তাই নয়, টর্টিলা চিপস, কর্নমিল, কর্ণ ফ্লাওয়ার, কর্ন সিরাপ এবং কর্ন অয়েল এর মতো আরও অনেক কিছু সামগ্রীও তৈরি হয় এর থেকে।
ভুট্টাকে বলা হয় পুরো পুষ্টির ভান্ডার। ১০০ গ্রাম সেদ্ধ ভুট্টায় ৯৬ ক্যালোরি, ৭৩% জল, ৩.৪ প্রোটিন, ২১ গ্রাম কার্বস, ৪.৫ গ্রাম চিনি, ২.৪ ফাইবার এবং ১.৬ ফ্যাট থাকে। এতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুবই কম পরিমানে থাকে। ১১২ গ্রাম পপকর্নে ১৬ গ্রাম ফাইবার থাকে। তাছাড়াও এতে পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন ই থাকে। কোলেস্টেরলের মাত্রাও এতে খুব কম থাকে।
ভিটামিন ও পুষ্টিগুণ - ভুট্টা থেকে তৈরি বিভিন্ন সামগ্রীর আলাদা আলাদা ভিটামিন ও পুষ্টিগুণ থাকে। যেমন পপকর্নে খনিজ ও সুইট কর্নে বেশকিছু ভিটামিন থাকে। ভুট্টা ও পপকর্নে প্রচুর পরিমান ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ ও জিঙ্ক পাওয়া যায়। অন্যদিকে সুইট কর্নে ভিটামিন B5 ও B9 পাওয়া যায়। এটা শরীরে ফলিক অ্যাডিডের ঘাটতি পূরণ করে।
চোখের জন্য উপকারি - ভুট্টায় ক্যারোটিনয়েড লুটিন এবং জেক্সানথিনের মতো প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এটি অপটিক টিস্যু থেকে ক্ষতিকারক ফ্রি রেডিক্যালস দূর করে এবং দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। পাশাপাশি চোখের সূক্ষ্ম অংশগুলিকেও ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়। গ্লুকোমা এবং ছানির মতো সমস্যা থেকেও রক্ষা করে।
অস্থি মজবুত করে - ভুট্টায় প্রাকৃতিক ক্যালসিয়াম থাকে, যা হাড়কে মজবুত করে। এটি হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় এবং অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ করে। ছাড়া এটি এটি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল এবং কিডনির সমস্যাযর ক্ষেত্রেও উপকারি। যুবকরা প্রতিদিনই ভুট্টা খেতে পারেন, কিন্তু মধ্যবয়সী এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের এটি সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে - ভুট্টায় যে কার্বহাইড্রেড তাকে সেটি শরীরে দ্রুত এনার্জি নিয়ে আসে। এতে থাকা ফাইটেটস, ট্যানিন, পলিফেনলস জাতীয় উপাদান হজম প্রক্রিয়াকে মন্থর করে দেয়, ফলে রক্তে সুগারের পরিমাণ কমে যায়। ডায়বেটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে এটি খুবই উপকারি। ক্যালোরি কম এবং ফাইবার বেশি থাকার কারণে এটি ওজন কমানর ক্ষেত্রেও খুব কার্যকরী।
রক্তাল্পতা দূর করে - ভারতে অনেকেরই দেহে আয়রনের অভাব থাকে। তার ফলে বেশি করে ক্লান্তি আসে এবং উৎপাদন মাত্রা কমে যায়। যাঁদের দেহে হিমগ্লোবিন কম তাঁদের জন্য এটি ওষুধের মতো কাজ করে। অ্যানিমিয়ার চিকিৎসায় এটি খুবই কার্যকরী।
স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতাকে উন্নত করে - কর্ন খেলে স্নায়ুতন্ত্র ভালভাবে কাজ করে। মাথা ঠাণ্ডা রাখতে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর কাজ করে। পাশাপাশি মানসিক চাপ কমায় এবং অনিদ্রাজনিত রোগ দূর করে। ভুট্টা খেলে একদিকে যেমন মেজাজ ভাল থাকে অন্যদিকে ঘুমও ভাল হয়।
হৃদযন্ত্রের জন্য ভাল - ভুট্টায় কোলেস্টেরলের এবং সোডিয়াম খাকে না। ভুট্টার আটায় তৈরি রুটি হার্টের রোগীদের জন্য খুবই ভাল। তাছাড়া এর মধ্যে যে ফাইবার ও ভিটামিন B3 থাকে সেটি গুড কোলেস্টেরলকে বাড়ায় এবং ব্যাড কোলেস্টেরলকে কমায়। এটি হৃৎপিণ্ডের শিরা-উপশিরায় মেদ জমতে দেয় না এবং পেশীগুলির কার্যকারিতা সহজ করে। সব মিলিয়ে ভুট্টা হার্টের জন্য খুবই উপকারি।
পেটের সমস্যা দূর করে - পেটে ব্যাথা, পেট ফাঁপা সহ পেটের বেশকিছু সমস্যা ভুট্টায় দূর হয়। এতে যা ফাইবার থাকে তা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল কার্যকারিতাকে আরও ভাল করে। ভুট্টা সহ যে সমস্ত খাবারে বেশি ফাইবার থাকে সেগুলি পেটের জন্য খুবই ভাল। তাছাড়া এটি হজম সম্পর্কিত সমস্যাগুলি দূর করতেও সাহায্য করে।
বার্ধক্য রোধে ভূমিকা - ভুট্টার বীজে ভুফেনোলিক অ্যাসিড এবং ফ্লেভোনয়েড থাকে। এই দুই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিক্যালসের সমস্যা দূর করে। ত্বকের নতুন কোষ তৈরির পাশাপাশি সূক্ষ্ম রেখা এবং বলি রেখা লুকানোর কাজ করে। এটি খেলে শরীরে কোলাজেন তৈরি হয়, যার কারণে ত্বক নরম ও মসৃণ হয়।