পিরিয়ডসের সময় পেটে ব্যথা বা মোচড় দেওয়া মেয়েদের কাছে খুবই কষ্টদায়ক এক সমস্যা। অনেক মহিলার পেটে ব্যথার সঙ্গে কোমর, তলপেটের অংশ আর পায়েও ব্যথা করতে শুরু করে। একে পিরিয়ডস ক্র্য়াম্পও বলে। এই ব্যথা সাধারণত দুই থেকে তিনদিন থাকে। মহিলাদের জন্য এই ব্যথা খুবই সাধারণ বিষয়।
কিন্তু অনেকের কাছে এই ব্যথা অসহনীয় হয়ে ওঠে। যার কারণে তাঁদের ব্যথার ওষুধও খেতে হয়। যা কোনও কোনও সময় অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। তবে পিরিয়ডসের এই অসহনীয় ব্যথার পিছনে গুরুতর একটি কারণ রয়েছে। তাই যদি আপনারও এ ধরনের অসহনীয় ব্যথা হয়ে থাকে পিরিয়ডসের সময় তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
পিরিয়ডের ব্যথা আসলে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক রাসায়নিক বা হরমোনের কারণে হয়। প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন পিরিয়ডসের সময় জরায়ুর টিস্যু দ্বারা উৎপাদিত হয়, যার কারণে মাংসপেশি সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। এর ফলে পেট ও কোমরে ব্যথা হয়। এই হরমোন মহিলাদের ডিম্বানু উৎপন্ন, পিরিয়ডসের প্রক্রিয়া ও প্রজনন পদ্ধতির মসৃণ কার্যকারিতার জন্য দায়ী।
চিকিৎসকেরা বলে থাকেন যে পিরিয়ডসে ব্যথা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। অধিকাংশ মহিলারই পিরিয়ডসের সময় ব্যথা হয়ে থাকে। কিন্তু যদি অধিক ব্যথা হয় তবে বুঝতে হবে এটা সামান্য কোনও ব্যথা নয়। এটা সঙ্কেত যে আপনার প্রজনন প্রক্রিয়ায় কোনও গড়বড় রয়েছে। যদি আপনি মা হওয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন অথচ আপনার পিরিয়ডসে খুব বেশি ব্যথা হচ্ছে তবে এই পরিকল্পনা এখনই বাতিল করে দিন।
যদি আপনার পিরিয়ডস ক্র্যাম্প খুবই অসহনীয় হয় আর ভয়ানক হয় তবে আপনাকে সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞকে দেখানো উচিত।
খুব বেশি কষ্টদায়ক পিরিয়ডসের ব্যথার কারণ অনেক পুরনো রোগ হতে পারে যা প্রজনন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। এটা সময়ের সঙ্গে বেড়ে যায় যার পরিণাম স্বরূপ প্রজনন পদ্ধতির ওপর এর খারাপ প্রভাব পরে।
ফ্রইব্রয়েড নামে এক প্রকারের টিউমার হয়ে থাকে যা গর্ভাশয়ের ভেতর বিকশিত হয়ে থাকে। এর কারণে পিরিয়ডসের সময় খুব ব্যথা অনুভূত হয়। এটি গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় এবং প্রজনন ক্ষমতাতেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এন্ডোমেট্রিওসিসে, জরায়ুর টিস্যু জরায়ুর বাইরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে এবং আশেপাশের অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করতে শুরু করে। এন্ডোমেট্রিওসিস রোগ জরায়ুর কাজ করার ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করে। এই রোগে প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং এটি নারীর প্রজননকেও প্রভাবিত করে। অনেক ক্ষেত্রে এটি নিরাময়যোগ্যও নয়। চিকিৎসকরা বিশ্বাস করেন যে বন্ধ্যা নারীদের অর্ধেকেরও বেশি এন্ডোমেট্রিওসিস রোগের কারণে সন্তান ধারণ করতে অক্ষম।
অ্যাডেনোমায়োসিসে, এন্ডোমেট্রিয়াম, জরায়ুর আস্তরণ জরায়ুর বাইরে বাড়তে শুরু করে। এর ফলে চরম ব্যথা, অস্বস্তি এবং ঘন ঘন পিরিয়ডস হয়ে থাকে। যদিও এর কোনও প্রমাণ নেই যে এর কারণে প্রজনন ক্ষমতা প্রভাবিত হয়। তবে এটা ঝুঁকি অবশ্যই বাড়ায়।
পেল্বিক প্রদাহজনিত রোগ হল পিরিয়ডস সমস্যার সবচেয়ে সাধারণ কারণ। এ কারণে ফ্যালোপিয়ান টিউবে বাধা সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় নারীর ডিম্বাণু ও পুরুষের শুক্রাণুর মিলনে সমস্যা হয়। এই রোগেও গর্ভাবস্থায় সমস্যা হতে পারে।