Toy Train Darjeeling Ticket Crisis: শীতের দোরগোড়ায় পাহাড় তার পুরনো ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে। নভেম্বরের শুরুতেই দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের (ডিএইচআর) টয়ট্রেনের ভরা মরশুম। ঠিক যেন সেই দুর্যোগের আগের মতো ছুটির আমেজ।
DHR সূত্রে জানা গিয়েছে, নভেম্বর মাসের টিকিট বিক্রিতে এ বছর রেকর্ড ভিড়। শিলিগুড়ি-দার্জিলিং, ঘুম-দার্জিলিং এবং কার্শিয়াং-দার্জিলিং। এই তিনটি রুটেই প্রায় সব আসন বুক হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে ঘুম থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত ‘টয়ট্রেন জয়রাইড’-এর চাহিদা এতটাই বেশি যে বহু পর্যটককে বিকল্প দিনে বুকিং নিতে হচ্ছে। পাহাড়ি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর ধোঁয়া-ওঠা স্টিম ইঞ্জিনের মেলবন্ধনে ফের মোহিত হচ্ছে ভ্রমণপ্রেমীরা।
এই ‘জয়রাইড’ এখন শুধু পর্যটকদের নয়, ফটোগ্রাফার ও ব্লগারদের কাছেও প্রিয় আকর্ষণ। স্টিম ইঞ্জিনের ধোঁয়া, সবুজ উপত্যকা আর আঁকাবাঁকা রেললাইন, সব মিলিয়ে ঘুম থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত ছোট্ট এই পথটাই যেন এক জীবন্ত পোস্টকার্ড। বহু পর্যটক সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন, যার জেরে আরও বেড়ে চলেছে টয়ট্রেন ভ্রমণের জনপ্রিয়তা।
পর্যটন ব্যবসায়ীদের মুখে এখন আশাবাদের সুর। গত তিন-চার বছরে একাধিকবার দার্জিলিংয়ের হোটেল ও হোমস্টে ব্যবসা ধাক্কা খেয়েছিল। কিন্তু এ বছর নভেম্বর পড়তেই হোটেলগুলিতে বুকিং বেড়েছে দ্বিগুণ হারে। কার্শিয়াং, সোনাদা, লামাহাটা, রংটং। সর্বত্রই হোমস্টে মালিকরা ব্যস্ত অতিথি বরণে। পাহাড়ের অর্থনীতির গতি যেন ধীরে ধীরে চাকা ঘোরাতে শুরু করেছে।
কার্শিয়াংয়ের এক হোটেল মালিক জানালেন, “প্রতি সপ্তাহেই এখন পর্যটকদের ঢল নামছে। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের অনেক ঘর ইতিমধ্যেই বুক হয়ে গেছে। টয়ট্রেনের চাহিদা থাকলে পাহাড়ের ব্যবসাও ঘুরে দাঁড়াবে। এটা আমরা নিশ্চিত জানি।” তাঁর মতে, শীতের ছুটির ভ্রমণ মানেই এখন দার্জিলিং টয়ট্রেনের সঙ্গে পাহাড়ি কুয়াশার এক জাদু।
ডিএইচআর কর্তৃপক্ষও বসে নেই। রেল সূত্রে খবর, পর্যটকদের সুবিধার জন্য ট্রেন সার্ভিসের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। স্টেশন এলাকা সংস্কার, প্ল্যাটফর্মে আলো ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাও উন্নত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চলছে প্রচার। ইউনেস্কো ঘোষিত ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ হিসেবে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের ঐতিহ্য তুলে ধরা হচ্ছে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের সামনে।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, “যদি এই বুকিং ট্রেন্ড ডিসেম্বর পর্যন্ত টিকে থাকে, তাহলে এ মরসুমে পাহাড়ের অর্থনীতি অনেকটাই ঘুরে দাঁড়াবে।” পাহাড়ের বাজারে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে নতুন উদ্যোগ। হ্যান্ডক্রাফ্ট পণ্য, স্থানীয় চা, এবং ট্রাভেল গাইড সার্ভিসে চাঙ্গা ভাব দেখা যাচ্ছে। ফলে পাহাড়ি জীবনে ফের এসেছে কর্মচাঞ্চল্য।
দার্জিলিং আজও যেন পাহাড়ের মণিমুক্তা। টয়ট্রেন এখনো তারই প্রাণভোমরা। ধীরে ধীরে চলতে চলতে যেন পাহাড়ের রূপ-রস-গন্ধ বয়ে আনে প্রতিটি কোচে। কুয়াশার ভেতর দিয়ে বাঁশির সুরে ছুটে চলা এই ট্রেন যেন পাহাড়বাসীর কাছে শুধু পরিবহণ নয়, এক নস্টালজিয়া, এক গর্বের প্রতীক। আর সেই গর্বের সুরেই এবার ফের বাজছে পর্যটনের নতুন আশা।